পলাতক আসামিদের সাথে কেক কেটে জন্মদিন পালন করা ওসিকে প্রত্যাহার

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

মার্চ ১৭, ২০২২, ০৪:৫৩ পিএম

পলাতক আসামিদের সাথে কেক কেটে জন্মদিন পালন করা ওসিকে প্রত্যাহার

কক্সবাজারের চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ ওসমান গণিকে কর্মস্থল থেকে প্রত্যাহার করে জেলা পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে তাঁকে প্রত্যাহারের নির্দেশ দেন পুলিশ সুপার মো. হাসানুজ্জামান। পলাতক আসামিদের সঙ্গে জন্মদিন পালন করার ঘটনায় ওই ওসির বিরুদ্ধে সোশ্যাল মিডিয়ায় সমালোচনার ঝড় উঠে। এরপরই এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়। 

পুলিশ সুপার স্বাক্ষরিত ওসিকে প্রত্যাহারের আদেশে বলা হয়েছে, ওসি মুহাম্মদ ওসমান গণি ২ মার্চ জন্মদিন উপলক্ষে অফিস কক্ষে (চকরিয়া থানায়) কেক কেটে জন্মদিন পালন করেন। তখন তাঁর পাশে চকরিয়া থানার মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানাভুক্ত পলাতক আসামি আরহাব মাহমুদ ওরফে রুবেলসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।

এ বিষয়ে সচিত্র প্রতিবেদন বিভিন্ন অনলাইন পত্রিকায় প্রকাশিতসহ সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে প্রচারিত হওয়ায় জনসম্মুখে কক্সবাজার জেলা পুলিশ তথা বাংলাদেশ পুলিশের ভাবমূর্তি চরমভাবে ক্ষুণ্ন হয়েছে। তাই অফিসার ইনচার্জ চকরিয়া থানার দায়িত্ব থেকে তাঁকে (ওসিকে) প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত করা হলো।

জানতে চাইলে ওসি মুহাম্মদ ওসমান গণি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘এমন পরিস্থিতি হবে ভাবতেও পারিনি। ভুল হয়ে গেছে। এখন পুলিশ লাইনসে চলে যাচ্ছি। ভবিষ্যতে সুন্দরভাবে কাজ করব। সে জন্য সবার সহযোগিতা চাই।’

বৃহস্পতিবার দুপুরে ওসি মুহাম্মদ ওসমান গনি নিজেই এ তথ্য গণমাধ্যমে নিশ্চিত করেছেন। মুহাম্মদ ওসমান গনির দাবি, সংঘবদ্ধ একটি চক্র পরিকল্পিতভাবে ওয়ারেন্টভুক্ত দুজনকে কেক নিয়ে তার কাছে পাঠিয়েছেন। যা তিনি পরে বুঝতে পেরেছেন।

গত ২ মার্চ আমার জন্মদিন ছিল জানিয়ে ওসি ওসমান গনি আরও বলেন, “সেইদিন ছাত্রলীগ নেতা পরিচয় দিয়ে বেশ কয়েকজন কেক নিয়ে অফিসে হাজির হয়। তাদের মধ্যে আরহান মাহমুদ রুবেল ও আলিফের বিরুদ্ধে আরেক ছাত্রলীগ নেতা তারেকুল ইসলাম হত্যাচেষ্টার মামলায় ওয়ারেন্ট ছিল।

তিনি আরও বলেন, এ বিষয়ে আমি একেবারেই অবগত ছিলাম না। কারণ, আমি কয়েকমাস আগে এখানে যোগদান করেছি। তাই কার বিরুদ্ধে কি ওয়ারেন্ট ছিল তা জানতাম না।

আরও পড়তে পারেন

পলাতক আসামিকে নিয়ে নিজের জন্মদিন পালন করলেন ওসি!

আদালত ও মামলার বাদীর সূত্রে জানা গেছে, পূর্ব শক্রতা এবং ছাত্রলীগে নিজেদের প্রভাব ও আধিপত্য প্রতিষ্ঠাকে কেন্দ্র করে ২০১৯ সালের ২৯ এপ্রিল রাতে চকরিয়া উপজেলা ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত সাবেক সাধারণ সম্পাদক আরহান মাহমুদ রুবেলের (২৪) নেতৃত্বে ২০-২২ জনের একটি দল কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগের সদস্য তারেকুল ইসলাম রাহিতকে কুপিয়ে জখম করে। সে সময় তারেকুলের মোটরসাইকেলটিও ভাঙচুর করে তারা। এ ঘটনায় তারেকুলের ছোট ভাই তানজীমুল ইসলাম বাদী হয়ে রুবেলকে প্রধান আসামি করে চকরিয়া থানায় ১০জনের নাম উল্লেখ করে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলার ৬ নম্বর আসামি করা হয় মোহাম্মদ আলিফকে।

পরে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এজাহারে উল্লেখ করা ১০ আসামির বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে আদালত ১০ আসামির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন।

মামলার 'পলাতক' আসামিদের সঙ্গে ওসির ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ার পর বিতর্কের পাশাপাশি মামলার বাদীপক্ষও ন্যায়বিচার নিয়ে হতাশা ও শঙ্কার কথা জানিয়েছে। 

যাকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে এই মামলা, সেই তারেকুল ইসলাম রাহিত বলেন, 'পুলিশ কেন আসামিদের ধরছে না, তা নিয়ে আমি কোনো মন্তব্য করবো না। তবে আমার চাওয়া হলো, আমি যেন ন্যায়বিচার পাই।'

Link copied!