টেকনাফের আলোচিত ও কথিত মাদক কারবারি নুরুল হক ভুট্টো (৩৫) হামলার শিকার হওয়ার সময় মসজিদে আশ্রয় নিয়েছিলেন। কিন্তু সেখানেও তিনি রক্ষা পাননি। মাদক কারবারিদের প্রতিপক্ষ গ্রুপের হামলায় নিহত হয়েছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত ভুট্টো। পূর্বশত্রুতার জের ধরে সদর ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের মৌলভীপাড়ার একরাম ও স্থানীয় মেম্বার এনামুল হক এনামের বিরোধ চলে আসছিল। আগেও রক্তক্ষয়ী একাধিক সংঘর্ষ হয়। অবশেষে প্রতিপক্ষ একরাম গ্রুপের হাতে নির্মম হামলার শিকার হয়ে নিহত হলেন নাজিরপাড়া এলাকার এই ভুট্টো। ভুট্টো মৃত এজাহার মিয়ার পুত্র। আহতরা হলেন, তার ফুফাত ভাই আব্দু শুক্কুর (৩৬) মো: ফিরুজ(৩০) ও গুরা মিয়া (৬০)।
প্রত্যক্ষদর্শী বেলাল জানান, রবিবার বিকালে সাবরাং এলাকায় এক সালিশ বৈঠক থেকে নুরুল হক ভুট্টোসহ তারা মোটরসাইকেলযোগে বাড়ি ফেরার পথে বিকাল আনুমানিক সাড়ে পাঁচটায় টেকনাফ সদর ইউপির মৌলভী পাড়ার থানার ডেইল পাড়ার মসজিদের পাশে পৌঁছালে আগে থেকে ওঁৎ পেতে থাকা লাঠিয়াল বাহিনী দেশীয় ধারালো অস্ত্র হাতে নিয়ে তার গতিরোধ করে। তখন ভুট্টো মোটরসাইকেল থেকে লাফিয়ে পাশের মসজিদে ঢুকে পড়েন। হামলাকারীরা মসজিদে প্রবেশ করে তাকে টেনেহেঁচড়ে বের করার চেষ্টা করেন এবং ধারালো অস্ত্রের আঘাতে ডান পা বিচ্ছিন্ন করে ফেলে। কুপিয়ে দেহ থেকে একটি পা বিচ্ছিন্ন করে বুকে ও মাথায় দুই হাতে কুপিয়ে গুরুতর জখম ও শরীরের ভিবিন্ন স্থানে থেঁতলানো জখম করে।
খবর পেয়ে টেকনাফ মডেল থানা পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থল থেকে আহত অবস্থায় তাদেরকে উদ্ধার করে টেকনাফ হাসপাতালে নিয়ে যায়, পা বিচ্ছিন্ন হয়ে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হওয়ায় টেকনাফ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে উন্নত চিকিসার জন্য কক্সবাজার নেয়ার পথে ভুট্টো মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।
ভুট্টোর ছোট ভাই নুরুল আবছার খোকন জানান, ভুট্টোকে হত্যার উদ্দেশ্যে পরিকল্পিতভবে রাস্তায় ব্যারিকেড দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে আহত করে স্থানীয় মৌলভীপাড়ার সন্ত্রাসী একরাম ও আবদুর রহমানসহ তাদের বাহিনী। এ সময় এলাকার লোকজন ভুট্টোকে উদ্ধার করে কক্সবাজার হাসপাতালে নিয়ে আসার পথে তার মুত্যু হয়। হামলাকারী মৌলভী পাড়ার ফজল আহমদের জমজ পুত্র একরাম, আবদুর রহমান ও আত্মস্বীকৃত ইয়াবা কারবারি।
সদর ইউপির ৮নং ওয়ার্ডের মেম্বার এনামুল হক এনাম বলেন, ইউপি নির্বাচনের শত্রুতার জের ধরে আমাকে না পেয়ে জেঠাতো ভাই নুরুল হক ভুট্টোকে দা, কিরিচ দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেছে। মেম্বার এনাম বলেন, মৌলভীপাড়ার একরাম, আব্দুর রহমানসহ অজ্ঞাত আরো কয়েকজন মিলে দা, কিরিচ দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়েছে নুরুল হক ভুট্টোসহ আরো তিনজনকে গুরুতর আহত করে। উন্নত চিকিৎসার জন্য কক্সবাজার হাসপাতালে নেওয়ার পথে ভুট্টো মারা যান।
স্থানীয়রা গণমাধ্যমকে জানান, নিহত নুরুল হক ভুট্টো এলাকায় একক আধিপত্য বিস্তারকারী ও মাদক কারবারি হিসেবে পরিচিত ছিল। তাদের বিরুদ্ধে সাংবাদিকের ওপর হামলা, অস্ত্র ও মাদকসহ থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। ইউপি নির্বাচনের শত্রুতার জের ধরে এ ঘটনার সূত্রপাত হলেও উভয় পক্ষের এলাকায় মাদক লেনদেনসহ আধিপত্য বিস্তারের দীর্ঘদিনের দ্বন্দ্ব রয়েছে।
টেকনাফ সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান জিহাদ বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থল আহতদেরক উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছে। ঘটনাটি খুবই দু:খজনক।
টেকনাফ মডেল থানার ওসি হাফিজুর রহমান বলেন, ‘খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছে আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে। এলাকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। হামলাকারীদের ধরতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।