সিলেট নগরের সড়কে এখন থই থই করছে ঘোলা পানি! কোথাওবা সড়কের পাশের দীর্ঘদেহী গাছ হেলে পড়ে আছে। সড়কের কোথাওবা হাঁটুপানি, কোথাও আবার কোমরসমান। জমে থাকা পানিতে ভাসছে ইতস্তত ময়লা-আবর্জনার সারি। এমনকি কোথাও কোথাও ভাসছে মানুষের মলও। ফলে পানি থেকে ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ।
গত তিন দিন ধরে এ অবস্থা চলছে নগরের সবচেয়ে অভিজাত এলাকা হিসেবে পরিচিত শাহজালাল উপশহরে। নগরের মাছিমপুর, সোবাহানীঘাট, কালীঘাট, ছড়ারপাড়, তালতলা, তেরোরতন, মেন্দিবাগ, তোপখানা, কলাপাড়া, জামতলা, মণিপুরি রাজবাড়িসহ অন্তত ২৫টি এলাকায় কমবেশি একই দৃশ্য দেখা গেছে। দুর্গন্ধযুক্ত পানি মাড়িয়েই স্থানীয় বাসিন্দারা এখন চলাচল করছেন।
বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের কারণে সিলেটে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির এমন অবনতি ঘটেছে। নগরীর ভেতর দিয়ে বয়ে যাওয়া সুরমা নদীর পানি এরই মধ্যে বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে। নদীর পানি উপচে গত সোমবার থেকেই তলিয়ে যেতে শুরু করে নগরের বিভিন্ন এলাকা।
নগরীর কাজিরবাজার এলাকার বস্তির বাসিন্দারা জানান, তাদের ঘরে কোথাও হাঁটুপানি, কোথাও কোমরপানি। মাটির চুলা ছিল সেটাও পানিতে তলিয়ে গেছে। তাই খাবার রান্না করতে পারছেন না তারা। ঘরে খাবার পানিও নেই।
নগরীর বন্যাকবলিত বিভিন্ন এলাকায় দেখা যায়, সুরমার উপচে পড়া পানি সড়ক, দোকানপাট ও বাসাবাড়িতে প্রবেশ করেছে। সোমবারে যেখানে হাঁটুপানি ছিল সেখানে পরদিন মঙ্গলবার কোমরপানি হয়ে গেছে। পানিতে সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় ব্যাহত হচ্ছে যান চলাচলও। এসব এলাকার বাসিন্দাসহ এই প্লাবিত সড়কগুলো ব্যবহারকারীরা নানা দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন।
সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, সোমবার সুরমা নদীর পানি কানাইঘাট পয়েন্টে সকাল ৬টায় ছিল ১৪ দশমিক ১৫ সেন্টিমিটার, সকাল ৯টায় ছিল ১৪ দশমিক ১৮ সেন্টিমিটার, দুপুর ১২টায় ছিল ১৪ দশমিক ২৪ সেন্টিমিটার, বেলা ৩টায় ছিল ১৪ দশমিক ১৭ সেন্টিমিটার। এই পয়েন্টে পানির বিপৎসীমার মাত্রা ১২ দশমিক ৭৫ সেন্টিমিটার।
সিলেট পয়েন্টে সুরমার পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে। মঙ্গলবার সকাল ৬টায় ছিল ১০ দশমিক ৯৪ সেন্টিমিটার, সকাল ৯টায় ছিল ১১ দশমিক ০৯ সেন্টিমিটার, দুপুর ১২টায় ছিল ১১ দশমিক ১২ সেন্টিমিটার, বেলা ৩টায় ছিল ১১ দশমিক ২১ সেন্টিমিটার। এই পয়েন্টে পানির বিপৎসীমার মাত্রা ১০ দশমিক ৮০ সেন্টিমিটার।
কুশিয়ারা নদীর পানি আমলশিদ পয়েন্টে বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে সোমবার। মঙ্গলবার সকাল ৬টায় ছিল ১৬ দশমিক ৭৫ সেন্টিমিটার, সকাল ৯টায় ছিল ১৬ দশমিক ৭৮, দুপুর ১২টায় ছিল ১৬ দশমিক ৮৮ সেন্টিমিটার। এই পয়েন্টে পানির বিপৎসীমার মাত্রা ১৫ দশমিক ৪০ সেন্টিমিটার। কুশিয়ারা নদীর পানি শেওলা পয়েন্টে সোমবার বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে। গতকাল মঙ্গলবার সকাল ৬টায় ছিল ১৩ দশমিক ৪৬ সেন্টিমিটার, সকাল ৯টায় ছিল ১৩ দশমিক ৫০, দুপুর ১২টায় ছিল ১৩ দশমিক ৫১ সেন্টিমিটার, বেলা ৩টায় ছিল ১৩ দশমিক ৫৪ সেন্টিমিটার। এই পয়েন্টে পানির বিপৎসীমার মাত্রা ১৩ দশমিক ০৫ সেন্টিমিটার।