সীতাকুণ্ডের অগ্নিকান্ড: খতিয়ে দেখতে হবে অগ্নিনির্বাপন ব্যবস্থা ছিলো কিনা

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

জুন ৬, ২০২২, ১২:২৩ পিএম

সীতাকুণ্ডের অগ্নিকান্ড: খতিয়ে দেখতে হবে অগ্নিনির্বাপন ব্যবস্থা ছিলো কিনা

বাংলাদেশে তৈরি পোশাকসহ রপ্তানিমুখী শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর কমপ্লায়েন্স (সার্বিক মান) পরিস্থিতির অনেক উন্নতি হয়েছে। কিন্তু তৈরি পোশাক অথবা রপ্তানিমুখী নয়, এমন কারখানার অবস্থা কতটা ভয়াবহ, তা দেখা গিয়েছিল সেজান জুস কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায়। ওই দুর্ঘটনায় ৫২ জনের প্রাণ যায়।

এ ঘটনার পর প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের নেতৃত্বে কারখানা পরিদর্শনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। মূল দায়িত্ব দেওয়া হয় বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে (বিডা)। সঙ্গে ছিল অন্যান্য সংশ্লিষ্ট সংস্থা ও কারখানার মালিকেরা। এ পর্যন্ত পাঁচ হাজার কারখানা ও স্থাপনা পরিদর্শন করা হয়েছে।

আমাদের দেশে কোনো দুর্ঘটনা ঘটার পরই কেবল ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়। তবে সেজানের ঘটনার পর যে উদ্যোগ নেওয়া হয়, তাকে সাধুবাদ জানাই। আমরা আশা করব, এর পরবর্তী পদক্ষেপগুলো যেন নেওয়া হয়। শ্রম আইন, ২০০৬ এবং শ্রম বিধিমালা ২০১৫ অনুযায়ী, বড় ধরনের কোনো স্থাপনা বা কোনো কারখানার একটি অগ্নিনিরাপত্তা পরিকল্পনা থাকতে হয়। এর অর্থ হচ্ছে কোনো প্রতিষ্ঠানে কী ধরনের দাহ্য পদার্থ আছে, তার বিশদ বর্ণনা থাকতে হবে। এরপর প্রতিরোধের বিষয়। সর্বোপরি আছে ফায়ার ফাইটিংয়ের বিষয়টি। নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়ার পরও দুর্ঘটনা ঘটে গেলে কীভাবে তার ব্যবস্থাপনা হবে, সেই বিষয়টিও পরিকল্পনায় থাকতে হবে।

সীতাকুণ্ডের যে ডিপোতে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে, সেটি একটি যৌথ উদ্যোগের প্রতিষ্ঠান। মালিকানায় রয়েছেন ইউরোপের একটি দেশের বিনিয়োগকারীরা। তাই আমার বিশ্বাস, এখানে অবশ্যই একটি অগ্নিনিরাপত্তা পরিকল্পনা আছে। শ্রমবিধিতে বলা আছে, ৫০ জনের অধিক জনবলের কোনো কারখানা হলে সেখানে একটি নিরাপত্তা (সেফটি) কমিটি থাকবে। এখন দেখার বিষয় এ ডিপোতে কমিটি আছে কি না। আর এসব কারখানা বা স্থাপনায় শতকরা ছয়জন আগুন নেভানোর জন্য, ছয়জন উদ্ধারের জন্য এবং ছয়জন প্রাথমিক প্রতিবিধানের জন্য প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হতে হবে। অর্থাৎ মোট ১৮ শতাংশ প্রশিক্ষিত কর্মী থাকবে। এটাও দেখার বিষয় যে সীতাকুণ্ডের এ ডিপোতে প্রশিক্ষিত এসব কর্মী ছিলেন কি না। তাদের ‘ফায়ার ফাইটিং’ ব্যবস্থা ছিল কি না।

যে প্রতিষ্ঠানগুলো আমদানি-রপ্তানি করে, সেখানে ম্যাটেরিয়াল সেফটি ডেটা শিট (এমএসডিএস) থাকে। কী ধরনের দাহ্য পদার্থ কনটেইনারে আছে, তা লেখা থাকবে। এর পাশাপাশি এসব পদার্থের ব্যবহার কেমন করে করতে হবে, তা–ও লেখা থাকতে হবে। ডিপোটিতে এমএসডিএস ছিল কি না, তা খতিয়ে দেখতে হবে।

আর যে বিষয়টি দেখা দরকার, তা হলো ডিপোটিতে বিভিন্ন সময়ে যাঁদের পরিদর্শনের কথা, তাঁরা পরিদর্শন করেছিলেন কি না। পরিদর্শনের পাশাপাশি লক্ষণীয় বিষয় হলো, এখানে বিভিন্ন পর্বে অগ্নিনির্বাপণ মহড়া বা ‘ড্রিল’ হয়েছিল কি না। অনেক সময় আগে থেকে জানিয়ে দেওয়া হয় যে, ‘ড্রিল’ করা হবে। এসব কোনো কাজে আসে না। হঠাৎ করে ড্রিল করতে হয়। জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) সহযোগিতায় ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের সক্ষমতা বৃদ্ধির একটি প্রকল্প নেওয়া হয়েছে এবং একটি প্রতিবেদন করা হয়েছে। প্রতিবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া হয়েছে।

জেলা, বিভাগীয় ও সদর দপ্তরে কী কী থাকবে, তা প্রতিবেদনে বিশদভাবে বলা হয়েছে। ফায়ার সার্ভিস দুর্ঘটনাস্থলে গিয়ে যে পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছে, তাতে বলা যায়, যতটুকু সক্ষমতার দরকার ছিল, তা তাদের নেই। যে সুপারিশ করা হলো, তার বাস্তবায়ন হয়নি।

লেখক- ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবু নাঈম মো. শাহিদউল্লাহ, সাবেক মহাপরিচালক, ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর

সুত্র-প্রথম আলো 

 

Link copied!