হবিগঞ্জের চুনারুঘাটে শিশু সন্তানের সামনে বিধবা মা নুরচান বেগম হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ২২ বছরের পলাতক আসামি আদম খান ওরফে রফিককে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব।
বুধবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ানা বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক খন্দকার আল মঈন জানান, র্যাব-৯ এর একটি আভিযানিক দল মঙ্গলবার রাতে ঢাকার আশুলিয়ার বাইপাইল এলাকা থেকে রফিককে গ্রেপ্তার করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে রফিক হত্যার দায় স্বীকার করেছে।
১৯৯৯ সালের ৩১ মে আর্থিক লেনদেনের জের ধরে আদম খান ভিকটিম নুরচান বেগমকে (৪০) তিন বছরের শিশু সন্তান তাজউদ্দিনের সামনে ছুরিকাঘাত করেন। ভিকটিম নুরচান বেগম ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান। পরে নূরচান বেগমের আরেক ছেলে শফিক বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করে।
এ ঘটনার সাত মাস আগে মারা যান শফিকের বাবা। শফিক ও তাজউদ্দিনের ফুপা ও এলাকাবাসীর আর্থিক সহায়তায় মামলাটি পরিচালনা করা হয়।
২০০২ সালে তদন্ত শেষে সাক্ষ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে ২০০২ সালে ১৭ জুলাই আদালত আসামি আদম খানকে সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের পর খন্দকার আল মঈন জানান, হত্যাকাণ্ডের ১ বছর আগে আসামি আদম খান ভিকটিম নুরচান বেগমের ছেলে মামলার বাদী শফিকের কাছ থেকে দুই হাজার টাকা ধার নেন। এরপর চার মাস পর নূর চানের স্বামী আব্দুর রহমান মারা যান।
১৯৯৯ সালের ৩১ মে নূরচান পাওনা টাকা ফেরত চাইতে গেলে তার সঙ্গে বৎসা বাধে আদম খানের। কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে ছুরিকাঘাত শুরু করেন আদম খান। নূরচান বেগম ঘটনাস্থলে মৃত্যুবরণ করেন।
খন্দকার মঈন জানান, এই হত্যাকাণ্ডের পর আদম খান পালিয়ে যায়। প্রথমে সিলেটে, পরে ঢাকার আশুলিয়ায় চলে আসে। ২০১২ সালে আদম খান নিজেকে রফিকুল ইসলাম পরিচয় দিয়ে জন্মসনদ তৈরি করেন। ঠিকানা হিসেবে লেখা হয়-বাইপাইল, আশুলিয়া, ঢাকা। ওই ভুয়া সনদের মাধ্যমে সে জাতীয় পরিচয় পত্র পাওয়ার চেষ্টা করে, যাতে স্থায়ী ঠিকানা হিসেবে উল্লেখ করা হয়-মাধবপুর, হবিগঞ্জ।
তিনি বলেন, “চেহারা পরিবর্তন করার জন্য সে এসময় ছদ্মবেশ ধারণ করে এবং তার আসল নাম আদম খানের পরিবর্তে নিজেকে রফিক নামেই আশুলিয়ায় পরিচিত করে। পরবর্তীতে সে জালিয়াতির মাধ্যমে ভুয়া নাম ঠিকানা ব্যবহার করে একটি এনআইডি এবং স্মার্ট এনআইডি কার্ড তৈরি করে। অতঃপর ধীরে ধীরে সে আশুলিয়ায় স্থায়ী নিবাস গড়ে তোলে এবং ছদ্মবেশে রাজমিস্ত্রির কাজ শুরু করে। গ্রেপ্তার হওয়ার আগে ২২ বছর গ্রামের বাড়ি যায়নি আদম খান।”