করোনা সংক্রমণের প্রকপ কমায় বিধিনিষেধ থেকে সরে আসায় দ্রুতই অর্থনীতির চাকা সচল হয়েছে। রপ্তানি আয় বৃদ্ধির পাশাপাশি বিনিয়োগের গতিও বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়া শেয়ারবাজার ও অন্যান্য কেনাবেচার পরিমানও বৃদ্ধি পেয়েছে। সব মিলিয়ে বর্তমান পরিস্থিতিকে ইতিবাচক বলে ভাবছে ব্যবসায়ীরা। সংক্রমণ বৃদ্ধি না পেলে এমন পরিস্থিতিই আশা করছেন তারা।
রপ্তানিতে হারানো অবস্থান পুনরুদ্ধার
বর্তমানে পোশাক রপ্তানিতে ভিয়েতনাম বাংলাদেশকে টপকিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। ২০২০ সালে তারা বাংলাদেশের চেয়ে প্রায় ১০০ কোটি ডলার মূল্যের বেশি পোশাক রপ্তানি করেছে। তবে চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে আগস্ট মাসে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি আয় দাঁড়ায় প্রায় ২৭৫ কোটি টাকার বেশি। যা ভিয়েতনামের চেয়ে প্রায় ২৫ কোটি টাকা বেশি। এর ফলে চলতি অর্থবছরেই নিজেদের হারানো অবস্থান পুনরুদ্ধারের ইঙ্গিত দিচ্ছে পোশাক খাত।
বিজিএমইএর সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, ঘরবন্দি থেকে মানুষ বের হচ্ছেন। আশা করি অর্থনীতির এই গতিধারা অব্যাহত থাকলে আমাদের কাঙ্খিত লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছতে পারব। তবে টিকাকরণের ওপর জোর দেওয়ার পরামর্শ দেন এ ব্যবসায়ী নেতা।
গত আগস্ট মাসে ৩৩৮ কোটি ডলারের বা ২৮ হাজার ৭৩০ কোটি টাকার পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এই আয় গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ১৪ শতাংশ বেশি। গত আগস্টে ২৯৭ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছিল। চলতি অর্থবছরের জন্য ৪ হাজার ৩৫০ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে সরকার। বিদায়ী ২০২০-২১ অর্থবছর রপ্তানি হয় ৩ হাজার ৮৭৬ কোটি ডলারের পণ্য।
এদিকে দীর্ঘদিন পর সারাদেশে কর্মচাঞ্চল্য সৃষ্টি হওয়ায় দেশের অভ্যন্তরে গ্যাস ও বিদ্যুতের ব্যবহার বেড়েছে বলে জানায় বিপিসির কর্মকর্তারা। চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে বেড়েছে কনটেইনার লোড-আনলোডের সংখ্যা, যা নতুন করে ইঙ্গিত দিচ্ছে অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ানোর।
বিনিয়োগের জন্য ঋণ আবেদন বাড়ছে
করোনার কারনে নতুন বিনিয়োগের খরা ছিল। এর কারনে ব্যাংক ঋণ গ্রহণে অনেকটা স্থবিরতা বিরাজ করে। কিন্তু বর্তমানে বিনিয়োগের জন্য ঋণ আবেদনও বৃদ্ধি পাচ্ছে। যার ফলে অতিরিক্ত তারল্য ছোট হতে শুরু করছে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ঋণ বিতরণ হয়েছে ৫৪ হাজার ৩৮৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে প্রথম প্রান্তিকে মার্চ পর্যন্ত বিতরণ ছিল ১৮ হাজার কোটি টাকার কিছু বেশি। এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত বিতরণ হয়েছে এর প্রায় দ্বিগুণ।
শপিংমলসহ বিপনিবিতান জমজমাট
দীর্ঘদিন পর স্বাভাবিক সময়ে পুরোদমে দোকান ও মার্কেট খোলার সুযোগ পেয়েছে ব্যবসায়ীরা। এছাড়া ফুটপাতেও বিক্রি চলছে। বিধি-নিষেধ শিথিলতার পর শুরুতে কম বিক্রি হলেও তা বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে।
বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি মো. হেলাল উদ্দিন বলেন, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড শুরু হয়েছে। ব্যবসা-বাণিজ্যের স্থানগুলো আবার ব্যস্ত হয়ে উঠেছে। এটি ইতিবাচক। আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। বিক্রি না থাকলেও মানুষ আসতে শুরু করেছে। সুযোগ পেলে ঘুরে দাঁড়াবে অর্থনীতি।
চাঙ্গা শেয়ারবাজার
শেয়ারবাজারে চাঙ্গাভাব অব্যাহত রয়েছে। প্রতিদিনই ভাঙছে রেকর্ড। দেশের ইতিহাসে সূচক ও বাজার মূলধনে সর্বোচ্চ অবস্থান বিরাজ করছে। ঢাকার শেয়ারবাজারের লেনদেন তিন হাজার কোটি টাকার হাতছানি দিচ্ছে। সূচক ৭ হাজার পয়েন্ট পেরিয়ে গেছে। বাজার মূলধন ৫ লাখ ৮৬ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। নতুন করে শেয়ারবাজারে আগমন ঘটছে বিনিয়োগকারীর।
এছাড়া দেশের পর্যটন ও পরিবহন খাতও আগের মত কর্মব্যস্ততায় কাটাচ্ছে। দীর্ঘ বন্ধের পর গত ১৯ আগস্ট থেকে খুলছে পর্যটনকেন্দ্র, হোটেল-মোটেল ও রিসোর্ট। কক্সবাজারের সমুদ্রসৈকত, সিলেট, হবিগঞ্জ, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জেলার পর্যটনকেন্দ্র আবার পর্যটকে মুখরিত। ফলে এ খাতে বড় ধরনের আর্থিক গতি পেয়েছে।