গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে সারা দেশে ভুট্টা উৎপাদন হয়েছে ৬৪ লাখ ২০ হাজার টন, যা গত বছরের তুলনায় প্রায় ৮ লাখ টন বেশি।
কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, জলবায়ূগত কারনে বাংলাদেশ গম চাষের জন্য তেমন উপযোগী না হওয়ায় কৃষকরা ভূট্টা চাষের দিকে ঝূঁকছেন। এছাড়া শরিষার পাশাপাশি সরকারের পলিসি অনুযায়ী পতীত ও খালি জমি ভুট্টা চাষের আওতায় আসার ফলে ফসলটি আবাদের পরিধি বেড়েছে।
ব্যবসায়ী আর কৃষকরা বলছেন, মৎস্য, পোল্ট্রি ও প্রাণিখাদ্যের চাহিদা ও মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় দেশে এর প্রধান কাঁচামাল ভুট্টার চাহিদাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। গম চাষের পরিবর্তে চাষ করে কৃষকরা বেশি লাভবান হচ্ছেন। অন্যান্য ফসলের জমিকে ভুট্টা চাষের জমিতে রুপান্তর করছেন তারা।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী ২০২১-২২ অর্থবছরে দেশে ভুট্টার উৎপাদন ছিলো ৫৬ লাখ ২৯ হাজার টন। ৭ লাখ ৯৩ হাজার টন বেড়ে গত অর্থবছরে তা হয়েছে ৬৪ লাখ ২০ হাজার টন। এর মধ্যে শীত মৌসুমে ফলন ছিলো ৫৭ লাখ ৫৩ হাজার এবং গ্রীষ্মকালে ফলন ছিলো ৬ লাখ ৭৮ হাজার টনের কিছু বেশি।
উৎপাদন বৃদ্ধির সাথে সাথে বেড়েছে উৎপাদনশীলতা এবং আবাদী জমির পরিমান। ২০২২-২৩ অর্থবছরে কৃষকরা ৬.০৫ লাখ হেক্টর জমিতে ভুট্টার চাষ করেছে যা তার আগের অর্থবছরে ছিলো ৫.৫২ লাখ হেক্টর। এদিকে এবছর হেক্টর প্রতি উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পেয়ে ১০.২০ টন থেকে ১০.৬০ টনে উন্নীত হয়েছে।
কেন বাড়ছে ভুট্টার উৎপাদন?
রাজশাহীর বাগমারার কৃষক শওকত হোসেন। গতবছরই প্রথম ভূট্টা চাষ করেছেন তিনি, মুনাফাও হয়েছে। তিনি বলেন, ”আগে এ জমিতে আলু চাষ করতাম। এতে লাভের পরিবর্তে লসই হতো কোন কোন বছর। আর অন্যরা ভূট্টা চাষ করে প্রতিবছর লাভ করে। আত্নীয়স্বজন ও প্রতিবেশিদের দেখে গতবছরই প্রথম ভুট্টা চাষ করেছি। ভুট্টা চাষে খরচ কম, জমিতে হালচাষের পর সার দিলেই হয়ে যায়। আধা বিঘা জমিতে ২০ মন ভূট্টা ফলেছে। এতে ২০ হাজার টাকা বিক্রি করে ১০ হাজার টাকার বেশি মুনাফা হয়েছে।”
রাজশাহীর গম ও ভূট্টার ব্যবসায়ী রাকিবুল ইসলাম বলেন, “বর্তমানে প্রতি কেজি ভুট্টার মূল্য ৩০ টাকা আর গম ৪২ টাকা। যদিও কিছু ভুট্টা গমের সাথে মিলিয়ে আটা তৈরি করা হচ্চে, তবে প্রাণী খাদ্যের চাহিদা থাকায় প্রাণিখাদ্য হিসাবে এর চাহিদা অনেক বেড়েছে। দুটি ফসেলের উৎপাদনশীলতা আর বাজারদরের কথা ভাবলে ভূট্টা চাষ অনেক বেশি লাভজনক। আর ভুট্টার চেয়ে গম মারাই করা অনেক বেশি ঝামেলার কাজ।”
ডিএই তথ্যমতে, প্রতি হেক্টর জমিতে যেখানে ৩.৬৯ টন গম হয় সেখানে ভূট্টা হয় ১০ টনের বেশি।
সে হিসাবে এক হেক্টর জমিতে উৎপাদিত গম বিক্রি করে পাওয়া যায় প্রায় ১ লাখ ৫৫ হাজার টাকা । একই পরিমান জমিতে উৎপাদিত ভুট্টা থেকে পাওয়া যায় ৩ লাখ টাকা।
কৃষি সম্প্রসারন অধিদফতরের সরেজমিন শাখার পরিচালক মো. তাজুল ইসলাম পাটোয়ারী বলেন, “ভুট্টা চাষীদের আমরা প্রশিক্ষন দিচ্ছি ও প্রদর্শনী করছি। যেখানে পতিত জমি আছে সেগুলোকে চাষের আওতায় আনা হচ্ছে আবার কিছু জমি ভুট্টা চাষের মৌসুমে খালি থাকতো, সেগুলোকে ভুট্টা চাষের আওতায় আনছি।”
তিনি বলেন, “ভুট্টার নতুন নতুন জাত আসছে যেগুলোতে ফলন আগের জাতগুলোর চেয়ে বেশি হচ্ছে। এভাবেই ভূট্টার উৎপাদন বাড়ছে।”
ভুট্টা উৎপাদনে শীর্ষ পাঁচ জেলা
দেশের সবচেয়ে বেশি ভূট্টা উৎপাদন হয় দিনাজপুর। জেলাটিতে গত অর্থবছরে ৯ লাখ ৩৪ হাজার টন ভূট্টা উৎপাদন হয়েছে। এর পরে যথাক্রমে রয়েছে পঞ্চগড় ৬ লাখ ৭ হাজার টন, চুয়াডাঙ্গা ৫ লাখ ৯৪ হাজার টন, লালমনিরহাট ৪ লাখ ২৬ হাজার টন এবং ঠাকুরগাঁওয়ে ৩ লাখ ১৬ হাজার টন। এ পাঁচ জেলায় ২৮ লাখ ৭৭ হাজার টন ভুট্টা উৎপাদন হয়েছে, যা মোট জাতীয় উৎপাদনের ৪৪.৭৭ শতাংশ।
শীত মৌসুমে হেক্টর প্রতি সর্বোচ্চ ফলন ছিলো মেহেরপুরে ১২.০৯ টন এবং সর্বনিন্ম খাগড়াছড়িতে ৬.৮ টন। অন্যদিমে গ্রীষ্ম মৌসুমে হেক্টর প্র্রতি সর্বোচ্চ ১২ টন ফলন ছিলো চুয়াডাঙ্গায় এবং সর্বনিন্ম ৪.৭০ টন ভুট্টা ফলেছে বান্দরবনে।