ধানের উৎপাদন বৃদ্ধি পাওয়ায় এ বছর আর চাল আমদানি করতে হবে না বলে জানিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক।
সোমবার (২ অক্টোবর) রাজধানীর সিরডাপ আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বাংলাদেশ কৃষি সাংবাদিক ফোরাম (বিএজেএফ) আয়োজিত দুইদিনব্যাপী জাতীয় কৃষি সম্মেলনের প্রথম দিনে ‘বাংলাদেশের কৃষির রূপান্তর: কাজী বদরুদ্দোজার অবদান’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
বিএজেএফ’র সভাপতি গোলাম ইফতেখার মাহমুদের সভাপতিত্বে সভার সঞ্চালনা করেন বিএজেএফ সাধারণ সম্পাদক সাহানোয়ার সাইদ শাহীন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে কৃষি মন্ত্রী বলেন, “বৈশ্বিক সংকটের মধ্যেও এ বছর চাল আমদানি করতে হয়নি। আমরা আশা করছি এ বছর শেষ নাগাদ পর্যন্ত আর চাল আমদানি করতে হবে না।
যুদ্ধ পরিস্থিতি খাদ্য প্রাপ্যতা কঠিন করে তুলেছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, “বাংলাদেশে চালের ক্ষেত্রে উল্টোটা ঘটেছে। এখন চালের দাম নিম্নমুখী।”
এ বছর আর আমদানি করতে না হলেও ভারতের চাল রফতানিতে নিষেধাজ্ঞার সমালোচনার কথাও তুলে ধরেন তিনি।
কৃষিমন্ত্রী বলেন, “ভারত চালের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে, এর সমালোচনা চলছে আন্তর্জাতিকভাবে। তারপরেও আমাদের চালের দামটা কম কারণ কৃষিকে বিজ্ঞানভিত্তিক করা গেছে।
উৎপাদিত শস্যে মূল্য সংযোজন বাড়াতে কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ বাড়ানোর তাগিদ দেন তিনি।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি ব্যবসা ও বিপণন বিভাগের অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর আলম। তিনি বলেন, আয়তনের দিক থেকে বাংলাদেশ ৯৪ তম। কিন্তু কৃষি উৎপাদনে ১৪ তম। অর্থাৎ জমি কম হলেও উৎপাদনে এগিয়েছি। সম্প্রতি জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার প্রতিবেদনে দেখা যায়, ধান উৎপাদনে সবচেয়ে দ্রুতগতিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে বাংলাদেশে।
কৃষি সম্ভাবনাময় ও বিকাশমান যেখানে বেসরকারি খাদের অবদান অনেক। এ কৃষি জিডিপি বাড়াতে বিনিয়োগসীমা বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে আরও বেশি অংশগ্রহণ চান ব্যবসায়ীরা।
এসিআই এগ্রি বিজনেসের প্রধান ড. ফা হ আনসারী বলেন, দেশে কৃষি গবেষণায় সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি খাতও উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছে। বিগত সময়ে ৩২% গ্লুটেন সম্পন্ন, উচ্চ ফলনশীল গমের দুটি জাত উদ্ভাবন করেছে। ৯৩% ভাগ হাইব্রিড ধানের জাত নিবন্ধন করেছে। ২২.৫% ড্রাইমেটার সম্পন্ন ইন্ডাসট্রিয়াল আলু নিবন্ধন করেছে বেসরকারি বিনিয়োগকারীরা।
এছাড়া ৪৫টি সবজির প্রায় ৬০০টিরও অধিক হাইব্রিড নিজস্ব গবেষণা বা আমদানি করে ছাড় করেছে। ৯০% বেশি হাইব্রিড ভুট্টার জাতসহ সূর্যমুখী, বিদেশী ফল, ফুল এবং অন্যান্য ফসল প্রবর্তনে বেসরকারি সেক্টর উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছে।
তিনি বলেন, “আগামী দিনের কৃষির চ্যালেঞ্জ আছে। কারণ আর্দ্রতা বেড়ে যাওয়ার নতুন ধরনের রোগ-বালাই বেড়ে যাচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য বৃষ্টিপাত ও দীর্ঘমেয়াদি শীতের প্রভাব তাপমাত্রা, সী-লেবেল, লবণাক্ততাও বাড়বে। দ্রুত ক্লাইমেট স্মার্ট ফসলের জাত উদ্ভাবন ও সম্প্রসারনের সক্ষমতা পাশাপাশি ইয়েল্ড গ্যাপ কমানো, প্রিসিশন, এগ্রিকালচার এর ব্যবহার বাড়ানো প্রয়োজন।”
এদিকে কৃষিখাতে ঋণসীমা বাড়ানোর প্রস্তার দেন এনআরবিসি ব্যাংকের চেয়ারম্যান এস এম পারভেজ তমাল। তিবি বলেন, কৃষিতে আমরা বিনিয়োগ বাড়িয়েছি, যাতে করে আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে রফতানিতে যেতে পারি। এ জন্য বেসরকারি খাতকে সংযুক্ত করতে হবে৷ আমরা ব্যাংকগুলো বিনিয়োগের মাত্র ৩ শতাংশ কৃষি খাতে বিনিয়োগ করতে পারি, কিন্তু এত কম বিনিয়োগ দিয়ে কৃষি খাতের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা সম্ভব নয়। আমরা চাই মোট বিনিয়োগের ৫ শতাংশ যাতে কৃষি খাতে বিনিয়োগ করা যায়।
অনুষ্ঠানে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের সাবেক মহাপরিচালক মো. হামিদুর রহমান, বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনিস্টিউটের মহাপরিচালক শাহজাহান কবীর, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বারি) মহাপরিচালক ড. দেবাশীষ সরকার বক্তব্য প্রদান করেন।