আগস্ট ৩, ২০২৪, ১১:১৪ এএম
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে দেশব্যাপী সংঘাত ও সংঘর্ষ পরবর্তী ছয়দিন প্রায় সম্পূর্ণ রূপেই বন্ধ ছিল পণ্য পরিবহন। এই খাতে দৈনিক ১০৮ কোটি টাকা করে মোট ৬৫০ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১ আগস্ট) এফবিসিসিআই সভাপতি বরাবর লেখা এক চিঠিতে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাংলাদেশ কাভার্ডভ্যান-ট্রাক-প্রাইমমুভার পণ্য পরিবহন মালিক অ্যাসোসিয়েশনের নেতা।
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, ১৯-২৪ জুলাই পর্যন্ত প্রতিদিন ৫ হাজার টাকা করে ৯ হাজার ৫৪৪টি কার্গো ভ্যানে ক্ষতি হয় ৪ কোটি ৭৭ লাখ ২০ হাজার টাকা। প্রতিদিন ৩ হাজার ৫০০ টাকা হারে ৪৮ হাজার ৩৫৮টি কাভার্ডভ্যানে ক্ষতি হয় ১৬ কোটি ৯২ লাখ ৫৩ হাজার টাকা। আর ৩৩ হাজার ৯১৪টি ডেলিভারি ভ্যানে দৈনিক ২ হাজার ৫০০ টাকা হারে ক্ষতির পরিমাণ ৮ কোটি ৪৭ লাখ ৭৫ হাজার টাকা দাঁড়িয়েছে। একই সঙ্গে ১ লাখ ৬৩ হাজার ৭২টি পিকআপে প্রতিদিন গড়ে ২ হাজার টাকা হারে ক্ষতির পরিমাণ ৩২ কোটি ৬১ লাখ ৪৪ হাজার টাকায় পৌঁছে।
এ ছাড়া প্রতিদিন গড়ে ৩ হাজার টাকা হিসেবে ১ লাখ ৫২ হাজার ১৩১টি ট্রাকের মালিকদের ক্ষতি হয় ৫৪ কোটি ৬৩ লাখ ৯৩ হাজার টাকা। সব ধরনের গাড়ি মিলিয়ে দৈনিক ক্ষতির পরিমাণ ছিল ১০৮ কোটি ৪২ লাখ ৯৫ হাজার টাকা।
সেই হিসাব অনুযায়ী ছয়দিনে মোট ক্ষতির পরিমাণ ৬৫০ কোটি ৫৭ লাখ ৭০ হাজার টাকায় দাঁড়িয়েছে।
বাংলাদেশ কাভার্ডভ্যান-ট্রাক-প্রাইমমুভার পণ্য পরিবহন মালিক অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব চৌধুরী জাফর আহম্মদ দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে (টিবিএস) বলেন, “সড়কে গাড়ি না চললেও শ্রমিকদের বেতন দিতে হয় পরিবহন মালিকদের। এছাড়াও রক্ষণাবেক্ষণ ও পার্কিংসহ বেশ কিছু খরচ পোহাতে হয় তাদের।”
তিনি জানান, গত ১৯ জুলাই কোটা সংস্কার আন্দোলকারীরা কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি ঘোষণার পর সারাদেশে বন্ধ হয়ে যায় পণ্য পরিবহন। এরপর ২০ জুলাই রাত থেকে কারফিউ জারির পর থেকে ২৪ জুলাই পর্যন্ত সম্পূর্ণরূপে বন্ধ ছিল দেশের সড়ক ও মহাসড়কে গাড়ি চলাচল। এই ছয়দিনে পণ্যপরিবহন মালিকদের প্রায় ৬৫০ কোটি টাকা ক্ষতি হয় বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
চৌধুরী জাফর আহম্মদ বলেন, “গত ২৫ জুলাই থেকে কারফিউ দিনের বেলায় শিথিল করায় পণ্যপরিবহন মোটামুটি স্বাভাবিক হলেও রাতে কারফিউ থাকায় পুরোপুরি চালু হয়নি। অস্থির রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে অনেকটা ঝুঁকি নিয়েই চলছে গাড়িগুলো। গাড়ির কোনও ক্ষতি হলে তার দায়ভার কেউ নেয় না। সব মালিকের ওপরেই বর্তায়।”
করোনা মহামারিসহ দেশের সব ক্রান্তিলগ্নে পণ্যপরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা ঝুঁকি নিয়ে আমদানি-রপ্তানিসহ সব পণ্য পরিবহন নিশ্চিত করে। দেশের এই কঠিন সময়ে সরকারকে পণ্য পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের পাশে থাকার আহ্বান জানান চৌধুরী জাফর আহম্মদ।
ব্যাংক ঋণের কিস্তি পরিশোধের বিষয়টি তুলে ধরে সংগঠনটির সভাপতি মকবুল আহমেদ বলেন, “অনেক পরিবহন মালিক ব্যাংক ঋণ নিয়ে গাড়ি কিনে ব্যবসা পরিচালনা করেন। তাদের জন্য ছয়দিনের এই ক্ষতি অনেক বড়। কারণ সব খরচ মিটিয়ে মাস শেষে তাদের কিস্তি পরিশোধ করতে হয়।”
এ-অবস্থায় পুলিশ যাতে মহাসড়কে গাড়ি থামিয়ে অযথা গাড়িগুলোকে হয়রানি না করে বা মামলা না দেয়, এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে সরকারের কাছে দাবি জানান সংগঠনের নেতারা। এ ছাড়া সড়ক ও মহাসড়কে নিরাপত্তা জোরদারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টহল বাড়ানোরও দাবি জানান তারা।