জানুয়ারি ১৭, ২০২৪, ০৪:০৫ পিএম
বিদেশি কর্মী নিয়োগ ও তাদের সুযোগ-সুবিধার বিষয়ে বাংলাদেশসহ ১৫টি দেশের সাথে দ্বিপাক্ষিক চুক্তি পুনর্বিবেচনা করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে মালয়েশিয়া। এই দেশগুলো থেকে তারা শ্রমিক নিয়ে থাকে যাতে স্বল্প বেতনে পর্যাপ্ত শ্রমিক পাওয়া যায় এবং জনশক্তির ভারসাম্য নষ্ট না হয়। আর এই প্রক্রিয়ায় হাজারো অভিবাসী শ্রমিক চাকরিহীন অবস্থায় দেশটিতে অবস্থান করছে।
মালয়েশিয়ার অভিবাসী শ্রমিকের মধ্যে ৭০ ভাগই বাংলাদেশ, ইন্দোনেশিয়া এবং নেপালের। আর বাকিরা ভারত, ভিয়েতনাম, পাকিস্তান এবং থাইল্যান্ডসহ দেশগুলো থেকে আসে।
এ অবস্থার পরিবর্তন আনার জন্য মঙ্গলবার এই আগ্রহ প্রকাশ করে দেশটির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
মঙ্গলবার সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়কালে দেশটির শ্রম ও স্বরাষ্ট্র বিষয়ক মন্ত্রীরা জানান, শ্রমিকদের বণ্টন অসম হওয়ায় দ্বিপাক্ষিক চুক্তিগুলো নিয়ে পর্যালোচনা করার প্রয়োজনীয়তা এসেছে।
তবে এই আগ্রহের জন্ম হঠাৎ করেই নয়। মালয়েশিয়ার শ্রম বিভাগে ৭৫১ জন বাংলাদেশি অভিবাসী শ্রমিক তাদের প্রাপ্য মজুরির জন্য মামলা করলে এ বিষয়টি সামনে আসে।
গত বছর থেকে দেশটিতে হাজার হাজার অভিবাসী অসহায় অবস্থায় রয়েছে যাদের বেশিরভাগই বাংলাদেশি ও নেপালি। বড় অঙ্কের নিয়োগ মূল্য দিয়ে হলেও ভালো চাকরি পাওয়ার প্রতিশ্রুতিতে তারা মালয়েশিয়ায় গিয়েছে। কিন্তু সেটি আর হয়নি।
কর্মক্ষেত্রে অপব্যবহারের অভিযোগে সম্প্রতি দেশটির বেশকিছু কোম্পানি মার্কিন নিষেধাজ্ঞার মুখোমুখি হয়। অভিবাসীদের এই দুর্দশা যেন এ অভিযোগকে সত্যি প্রমাণ করলো। এমনকি অনেক অভিবাসী শ্রমিক জানিয়েছেন তাদের কোনো মজুরিই দেয়া হয়নি।
মালয়েশিয়ায় কৃষি ও বৃক্ষরোপণ খাতে শ্রমিকের ঘাটতি থাকলেও শিল্প খাতে শ্রমিকের কোটা অতিক্রম করায় চাকরি ক্ষেত্রে এমন অসম অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে জানান কর্মকর্তারা। এ প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাইফুদ্দিন নাসুশন ইসমাইল বলেন, আমরা চুক্তিগুলো পুনর্বিবেচনা করে দেখব যাতে ফি, খরচ, চুক্তির শর্তাবলী, স্বাস্থ্য এবং অন্য বিষয়গুলো মিলিয়ে অন্যান্য খাতে কর্মী স্থানান্তর করা সম্ভব কি না।
মানবসম্পদ মন্ত্রী স্টিভেন সিম জানিয়েছেন, ৭৫১ বাংলাদেশি অভিবাসী শ্রমিক প্রায় ২.২ মিলিয়ন রিঙ্গিত বকেয়া মজুরি দাবি করে মামলা করেছে।
তিনি আরও বলেন, ইতিমধ্যে তারা এমন ৫টি প্রতিষ্ঠান পেয়েছেন যারা চাকরি না দিয়েই শত শত কর্মীদের নিয়োগ করেছে। চাকরি না দেয়া হলেও এসব শ্রমিকদের অবশ্যই মজুরি দিতে হবে। যেসব কোম্পানি ও ব্যক্তি আইন লঙ্ঘন করে এ কাজ করেছে তাদের অভিবাসী শ্রমিকদের নিয়োগে বাধা দেওয়া হবে।
অভিবাসী অধিকার কর্মী অ্যান্ডি হল বলেন, এই শ্রমিকদের অধিকাংশই নিয়োগের খরচের জন্য নেয়া ঋণ পরিশোধর করতে গিয়ে ‘তীব্র আধুনিক দাসত্বের’ শিকার হয়।
সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বাংলাদেশি অভিবাসীদের দেশটিতে পা রাখার পর চাকরি না মেলার সমস্যার পুরোপুরি সমাধান এখনো হয়নি বলেও জানান অ্যান্ডি।
তিনি আরও বলেন, যদিও এটি মালয়েশিয়ার ভুয়া নিয়োগকর্তা ও এজেন্টদের কারণে ঘটছে কিন্তু বাংলাদেশি সরকারও এই সিন্ডিকেটগুলোকে তাদের নাগরিকদের মালয়েশিয়ার দুর্ব্যবহার ও ঋণচক্রের চাকরি ব্যবস্থায় নিয়ে যাওয়া থেকে নিয়ন্ত্রণ করছে না।
২০২৩ সালের অক্টোবরে অ্যান্ডি জাতিসংঘের কাছে মালয়েশিয়ায় বেকারত্ব ও ঋণের বোঝা নিয়ে অবস্থানরত শত শত বাংলাদেশি প্রবাসী শ্রমিকের ‘ভয়াবহ’ পরিস্থিতির কথা জানিয়ে লিখেছিলেন।
উল্লেখ্য, সাড়ে তিন বছরের নিষেধাজ্ঞার পর ২০২১ সালের ডিসেম্বরে অভিবাসী শ্রমিকদের জন্য শ্রমবাজার পুনরায় চালু করতে মালয়েশিয়া বাংলাদেশের সাথে চুক্তি স্বাক্ষর করে।
শ্রমবাজার পুনরায় খোলা হলে সাড়ে ৪ লাখ অনুমোদিত শ্রমিকের মধ্যে ৩ লাখ শ্রমিক মালয়েশিয়ায় এসেছে বলে বাংলাদেশের একটি দৈনিক সংবাদপত্রের বরাতে মালয়েশিয়ার একটি সংবাদপত্র গত বছরের সেপ্টেম্বরে এক প্রতিবেদনে প্রকাশ করে।