জানুয়ারি ৯, ২০২৪, ০২:১৩ পিএম
বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) উদ্ভাবিত নতুন দুই উচ্চ ফলনশীল ধানের জাতের অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় বীজ বোর্ড। দুটি জাতই বোরো মৌসুমের জন্য উদ্ভাবন করা হয়। এর ফলে ব্রি উদ্ভাবিত সর্বমোট ধানের জাতের সংখ্যা দাঁড়াল ১১৫টি।
মঙ্গলবার (৯ জানুয়ারি) জাতীয় বীজ বোর্ডের ১১১তম সভায় ব্রি ধান ১০৭ ও ব্রি ধান ১০৮ জাত দুটির অনুমোদন দেয়া হয়।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব ওয়াহিদা আক্তারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই সভায় ব্রি’র মহাপরিচালক ড. মো. শাহজাহান কবীরসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
ব্রি ধান ১০৭
নতুন উদ্ভাবিত জাত ব্রি ধান ১০৭, প্রিমিয়াম কোয়ালিটি সম্পন্ন উফশী বালাম জাতের বোরো ধান। এ জাতটি বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) কর্তৃক ২০১৫ সালে কৃষকের মাঠ থেকে সংগ্রহ করে বিশুদ্ধ লাইন বাছাইকরণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নির্বাচিত করা হয়।
ব্রি গাজীপুরের গবেষণা মাঠে নির্বাচিত কৌলিক সারিটি ৩ বছর সফল ফলন পরীক্ষণের পর ২০১৯ সালে ব্রি’র আঞ্চলিক কার্যালয় সমূহের গবেষণা মাঠে ও ২০২০ সালে বাংলাদেশের বিভিন্ন কৃষি অঞ্চলে কৃষকের মাঠে পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হয়।
২০২২ সালে বীজ প্রত্যয়ন এজেন্সি কর্তৃক প্রস্তাবিত জাতের ফলন পরীক্ষায় (পিভিটি) সন্তোষজনক হওয়ায় জাতীয় বীজ বোর্ডের মাঠ মূল্যায়ন দলের সুপারিশের ভিত্তিতে জাতটি ছাড়করণের জন্য আবেদন করা হয়। জাতীয় বীজ বোর্ডের মঙ্গলবারের সভায় সারা দেশে চাষের জন্য একটি প্রিমিয়াম কোয়ালিটির উচ্চ ফলনশীল বালাম জাতের বোরো ধান হিসেবে লতা বালামকে ব্রি ধান ১০৭ হিসেবে অনুমোদন দেয় হয়।
এ জাতের পূর্ণ বয়স্ক গাছের গড় উচ্চতা ১০৩ সে.মি.। গড় জীবনকাল ১৪৩ দিন যা ব্রি ধান ৫০-এর সমান। এর ডিগ পাতা প্রশস্ত, খাড়া ও লম্বা এবং পাতার রং সবুজ। প্রতি হেক্টরে গড় ফলন ৮.১৯ টন, তবে এটি অনুকূল পরিবেশে উপযুক্ত পরিচর্যা পেলে হেক্টর প্রতি ৯.৫৭ টন পর্যন্ত ফলন দিতে সক্ষম বলে ব্রি এর পক্ষ থেকে দাবি করা হয়।
দশটি অঞ্চলে ব্রি ধান ১০৭-এর ফলন ব্রি ধান ৫০-এর চেয়ে প্রায় ১৭.৬৭% বেশি পাওয়া যায়। এ ধানের গুণগতমান ভালো অর্থাৎ চালের আকৃতি অতি লম্বা চিকন (৭.৬ মি.মি.)। এ ধানের চালে অ্যামাইলোজ এবং প্রোটিনের পরিমাণ যথাক্রমে ২৯.১% এবং ১০.০২% এবং ভাত ঝরঝরে।
এর প্রতি ১০০০টি পুষ্ট ধানের ওজন ২৬.১ গ্রাম। এ ধানের দানার রং খড়ের মত এবং চাল অতি চিকন ও সাদা। উচ্চ ফলনশীল, অতি চিকন চাল ও ভাত ঝরঝরে হওয়ায় বাংলাদেশের মানুষ এ জাতটি চাষাবাদে ব্যাপক আগ্রহী হবে বলে আশা করছেন ব্রি কর্মকর্তারা। এ জাতটি চাষ বাংলাদেশের সামগ্রিক ধান উৎপাদন বৃদ্ধিতে মুখ্য ভূমিকা রাখবে।
ব্রি ধান ১০৮
নতুন অনুমোদিত ব্রি ধান ১০৮ জাতটি বোরো মৌসুমে সারা দেশে চাষের জন্য অনুমোদন করা হয়েছে। এই জাতের গ্রেইন (চাল) টাইপ জিরা ধানের মতো । প্রতিটি ছড়ায় অধিক সংখ্যক ধান (২৫০-২৭০টি) ঘনভাবে সন্নিবেশিত। উদ্ভাবন প্রকৃয়াতে প্রাপ্ত কৌলিক সারিটির গবেষণা কার্যক্রম ব্রিতে ২০১২ সন থেকে শুরু হয়।
এনএটিপি প্রকল্পের আওতায় বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট(ব্রি), গাজীপুর এবং ব্রির আঞ্চলিক কার্যালয়সমূহের গবেষণা মাঠে এটি পরিক্ষা করা হয়। পরে দেশের বিভিন্ন এলাকায় কৃষকের মাঠে নানা কৃষি পরিবেশে দীর্ঘ সময় ধরে এই নতুন কৌলিক সারিটির উপযোগিতা, ফলন ও অন্যান্য কাঙ্ক্ষিত বৈশিষ্ট্যসমূহের ব্যাপক ও নিবিড় পর্যবেক্ষণ-পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয়। দীর্ষ সময় পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে জাতীয় বীজ বোর্ডের ১১১তম সভায় এ কৌলিক সারিটি ব্রি ধান ১০৮ নামে বোরো মৌসুমে সারা দেশে চাষাবাদের জন্য অবমুক্ত করা হয় ।
ব্রি ধান ১০৮-এর পূর্ণ বয়স্ক গাছের গড় উচ্চতা ১০২ সে.মি.। এর ডিগ পাতা খাড়া ও গাঢ় সবুজ, একই সাথে হেলে পড়া সহিষ্ণু এবং জীবনকাল ১৪৯-১৫১ দিন।
জাতটি কৃষকদের ভালো বাজার মূল্য পাওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করে উদ্ভাবন করা হয়ছে। জাতটি উচ্চ ফলন ও সুন্দর-মসৃণ চালের এর সমন্বয় ঘটেছে । এ জাতটির প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো এর প্রতিটি ছড়ায় অধিক সংখ্যক ধান (২৫০-২৭০ টি) ঘনভাবে সন্নিবেশিত এবং গড় ফলন হেক্টর প্রতি ৮.৭ টন, যা ব্রি ধান ১০০ জাতের চেয়ে ১.০-১.৫ টন বেশি।
এর প্রতি ১০০০টি পুষ্ট ধানের ওজন প্রায় ১৬.৩ গ্রাম, চাল মাঝারি লম্বা ও চিকন যা জিরা চালের অনুরূপ, ভাত ঝরঝরে, রং সাদা এবং অ্যামাইলোজ ও প্রোটিনের পরিমাণ ২৪.৫% এবং ৮.৮ %।