নতুন কোন বড় প্রকল্প নয় বরং বেশ কিছু সংস্কার আসতে যাচ্ছে বাজেটে। বিশেষ করে বৈধ পথে রেমিট্যান্স সংগ্রহ ও সামাজিক নিরাপত্তায় জোর দেয়া হচ্ছে। এদিকে মেগা প্রকল্পগুলোর ব্যয়ের ক্ষেত্রেও সতর্ক থাকা হবে। বিশেষ করে সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশ গমনে কড়াকড়ি আরোপ করা হবে ঘোষিত বাজেটে।
রেমিট্যান্স বাড়াতে নানা উদ্যোগ
গত ১০ মে প্রধানমন্ত্রী রেমিট্যান্স বাড়াতে বিশেষ উদ্যোগের কথা জানায়। এছাড়া মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখার নির্দেশনা দেন। এসময় বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়ার কথা তুলে ধরেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সংশোধন করা হচ্ছে ব্যাগেজ রুল। প্রবাসীকর্মী বা বিদেশফেরত যাত্রীরা একটির বেশি স্বর্ণের বার (১৫০ গ্রাম) দেশে নিয়ে এলে সেটি রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করা হবে। মূলত বৈধভাবে স্বর্ণ আমদানি উৎসাহিত করতে এবং রেমিট্যান্স প্রবাহ স্বাভাবিক রাখতে আগামী বাজেটে ব্যাগেজ রুলে এ সংশোধন আনা হচ্ছে।
সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান বলেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ বড় চ্যালেঞ্জ। আর রিজার্ভের আকার বাড়াতে রেমিট্যান্স আদায় বৃদ্ধির কোন বিকল্প নেই। তাই রেমিট্যান্স বৃদ্ধির যে কোন উদ্যোগই স্বাগত জানাবে সবাই।
কর আদায়ে জোর
এছাড়া আয়কর ফাঁকি বন্ধে কোম্পানির ন্যায় ফার্মের রিটার্ন জমা দেওয়াও বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে। এদিকে করবহির্ভূত রাজস্ব আদায়ে জনগণকে সেবা প্রদানে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা নিশ্চিত করাসহ এক ডজন সুপারিশ করা হয়েছে। অকেজো মালামালসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সংস্থা লাভজনক করার বিষয়ে জোর দেয়া হচ্ছে। কেননা সরকারি চাকরিজীবিদের বেতন বৃদ্ধিরও ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে।
ভর্তুকি নিয়ে দ্বিধা
আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে শুধু সুদ ব্যয়ই এক লাখ কোটি টাকার বেশি হবে না, সেই সঙ্গে ভর্তুকি বাবদ ব্যয়ও তেমনই হবে। নতুন বাজেটে ভর্তুকি বাড়ছে প্রায় ১৮ হাজার কোটি টাকা। ফলে বাজেটে ভর্তুকি বাবদ বরাদ্দের পরিমাণ দাঁড়াবে ১ লাখ ১০০ কোটি টাকা। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে এ জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৮২ হাজার ৭৪৫ কোটি টাকা। তবে আইএমএফ ঋণ দেয়ার ক্ষেত্রে বিভিন্ন সময়ে ভর্তুকি কমাতে বলা হয়েছে। তবে তেল ও গ্যাসসহ জ্বালানিতে ভর্তুকি কমানো হচ্ছে বলে আইএমএফকে এক প্রতিবেদন দেয়া হয়।
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, সরকারের রাজস্ব সংগ্রহের গতির তুলনায় ভর্তুকি যেভাবে বাড়ছে তা আপাতত খারাপের দিকে যাচ্ছে। রাজনৈতিক বাস্তবতা বিবেচনায় নিলে এ থেকে আপাতত বের হয়ে আসাও মুশকিল। তাই ভর্তুকি কমিয়ে সমাধানে জোর দেয়া উচিৎ।
মেগা প্রকল্পেই বরাদ্দের শীর্ষে
নতুন প্রকল্প কম হলেও বরাদ্দ আছে পুরাতন প্রকল্পে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে পাবনায় নির্মিত দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটি সর্বোচ্চ ৯ হাজার ৭০৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হবে। আর কক্সবাজারে মাতারবাড়ি আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল কয়লাচালিত বিদ্যুৎ প্রকল্পে ৯ হাজার ০৮১ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হবে। তবে চতুর্থ প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচি (পিইডিপি-৪): প্রকল্পে বরাদ্দ দেয়া হবে ৮ হাজার ৫৮৬ কোটি টাকা। তবে বরাদ্দ পাওয়া শীর্ষ ১০ প্রকল্পগুলো বেশ কয়েকবছর আগেই গ্রহণ করা হয়েছিল। তাই এই অর্থবছরে নতুন প্রকল্প না গ্রহণ করলেও এই ধরনের মেগা প্রকল্পে বরাদ্দ বাবদ অনেক খরচ করতে হচ্ছে।
এডিবিতেও বরাদ্দ কমেছে
আগামী অর্থবছরে নতুন প্রকল্পে লাগাম টানছে সরকার। ব্যয় কমানোর উদ্যোগের অংশ হিসেবে নতুন প্রকল্প অনুমোদনে এই রক্ষণশীলতার নীতি নেওয়া হয়েছে। তবে চলমান প্রকল্পগুলোর ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে বলা হয়েছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে যুক্ত করা হয়েছে ৩৩টি নতুন প্রকল্প। অনুমোদন হওয়া এসব প্রকল্প বরাদ্দসহ অর্ন্তভূক্ত হয়েছে।
আগামী অর্থবছরের এডিপিতে বরাদ্দসহ নতুন প্রকল্পগুলোর মধ্যে জনশৃঙ্খলা ও সুরক্ষা খাতের একটি, কৃষি খাতের তিনটি, পরিবহন ও যোগাযোগ খাতের চারটি এবং স্থাণীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন খাতের প্রকল্প রয়েছে তিনটি। এছাড়া পরিবেশ-জলবায়ূ পরিবর্তন ও পানিসম্পদ খাতের পাঁচটি, গৃহায়ণ ও কমিউনিটি সুবিধাবলী খাতের ১০টি, ধর্ম-সংস্কৃতি ও বিনোদনের দুটি, শিক্ষার একটি, শিল্প ও অর্থনৈতিক সেবার একটি এবং বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের প্রকল্প রয়েছে তিনটি।