করজালে গুগল, ফেসবুক

বাংলাদেশে আয়ের উপর গুগল, ফেসবুক, অ্যামাজন, নেটফ্লিক্সকে কর দিতে হবে

এম মনিরুল আলম

জুন ১২, ২০২৩, ০৯:০১ পিএম

বাংলাদেশে আয়ের উপর গুগল, ফেসবুক, অ্যামাজন, নেটফ্লিক্সকে কর দিতে হবে

বাংলাদেশে বিস্তৃত ইউজার ও বিজ্ঞাপন কর্মকাণ্ড থেকে করা আয়ের ওপর গুগল, ফেসবুকসহ অন্য টেক জায়ান্ট ও আন্তর্জাতিক ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানকে ভ্যাটের পাশাপাশি করও দিতে হবে। আগামী জুলাই থেকে শুরু হওয়া নতুন অর্থবছরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ভ্যাটের পাশাপাশি করও আদায়ের লক্ষ্যে কাজ করছে।

এ তালিকায় রয়েছে টেক জায়ান্ট বা প্রযুক্তিনির্ভর বৃহৎ কোম্পানি ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম ও হোয়াটসঅ্যাপের মালিকানা প্রতিষ্ঠান মেটা, ইউটিউবের মূল প্রতিষ্ঠান গুগল, ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান অ্যামাজন, বিনোদন কনটেন্ট প্রোভাইডার নেটফ্লিক্স, ক্যারিয়ার প্রমোটর লিঙ্কডইন ও সোশ্যাল মিডিয়া টুইটারের বাংলাদেশে অর্জিত আয় থেকে এ কর ও ভ্যাট আদায় করা হবে।

কর পলিসি বিষয়ক এনবিআর বোর্ড সদস্য ড. শামস উদ্দিন আহমেদ দি রিপোর্ট ডট লাইভকে এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, চলতি অর্থবছরের শুরুতে কার্যকর করা ই-কমার্স আইনটিকে আরও ব্যাপকতর রূপ দিয়ে এ ভ্যাট ও কর আদায়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।

তিনি বলেন, আইনটি ছিলই। বিদ্যমান আইনে ভ্যাটের পাশাপাশি কর আদায়ে কোনো বাধা নেই। কিন্তু প্রাকটিস করা হয়নি। আগামী অর্থবছরের জন্য এ আইনকে আরও সুসংগঠিত করা হয়েছে।

দেশে ই-কর্মাস ব্যবসার ক্রমবর্ধমান প্রসারের কারণে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) আয়কর আইনে ২০২২-২৩ অর্থবছরের বিলে ফ্রি হুইলিং ‘ই-কর্মাস’ ব্যবসাকে সংজ্ঞায়িত করে। এ আইনের আওতায় এসব টেক জায়ান্ট ও ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের কাছ চলতি অর্থবছরে থেকে ভ্যাট আদায় করেছে এনবিআর। 

এবার এসব প্রতিষ্ঠানের অর্জিত আয় বাংলাদেশ থেকে প্রত্যাবাসনের সময় ২০ শতাংশ উৎসে আয়কর কর্তন করার উদ্যোগ নিয়েছে। 

এছাড়াও এনবিআরের আয়কর শাখা ডিজিটাল অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড থেকে কর রাজস্ব সংগ্রহ এবং প্রত্যক্ষ করের জাল প্রসারিত করতে সম্ভাব্য কর যোগ্য-আয়ের ক্ষেত্রগুলো নিয়ে কাজ করছে।

এদিকে, সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি) বাজেটের আগে গুগল, ফেসবুকসহ সব আন্তর্জাতিক টেক প্রতিষ্ঠানের বাংলাদেশে অর্জিত আয়কে করের আওতায় আনতে সুপারিশ করে।

সিপিডি জানায়, এসব কোম্পানি বাংলাদেশসহ বিশ্বব্যাপী প্রচুর মুনাফা করছে।

এর আগে, হাইকোর্ট একটি রায়ের পূর্ণ পাঠে পর্যবেক্ষণ করেছিলেন যে আয়কর অধ্যাদেশ ১৯৮৪ অনুযায়ী বিশ্বব্যাপী ব্যবসায়িক কর্মকান্ড বিস্তৃত সংস্থাগুলো তাদের আয়কর রিটার্ন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) জমা দিতে বাধ্য।

আসুন জেনে নিই সর্বশেষ হিসেবে বাংলাদেশে ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যা কতো! 
গত বছরের জুলাইয়ে দেশে ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যা ছিল ৫ কোটি ৮৯ লাখ। ছয় মাসে ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১ কোটি ২৪ লাখ কমে চলতি বছরের জানুয়ারিতে ৪ কোটি ৬৫ লাখ হয়েছে।

সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজমেন্ট এবং অ্যানালিটিক্স প্ল্যাটফর্ম নেপোলিয়নক্যাট এ তথ্য প্রকাশ করে থাকে। 
প্ল্যাটফর্মটি ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রাম এবং লিঙ্কডইনসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ডেটা বিশ্লেষণ করে।

তাদের তথ্য অনুযায়ী জানুয়ারী ২০২৩ পর্যন্ত বাংলাদেশে ইনস্টাগ্রাম ব্যবহারকারী প্রায় ৪ কোটি ৯০ লাখ।
বিটিআরসি‍‍’র তথ্য অনুযায়ী দেশে ১৮ কোটির বেশি মোবাইল হ্যান্ডসেট নিবন্ধিত আছে। এর মধ্যে ৪৫ শতাংশ বা ৮ কোটি ১০ লাখ স্মার্টফোন ব্যবহার হয়। আর স্মার্টফোন ব্যবহারকারীগণ হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহার করেন। দেশে হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহারের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে।

ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের ৯১ শতাংশ সার্চইঞ্জিন গুগল ও এর মেইলিং উইন্ডো জিমেইল ব্যবহার করেন। গুগলের মূল আয়ের উৎস হলো বিজ্ঞাপন, যা থেকে গুগলের প্রায় ৯৯ শতাংশ আসে।

সর্বশেষ বিটিআরসির তথ্য অনুযায়ী, দেশে ইন্টারনেট গ্রাহক ১২ কোটি ৬১ লাখের বেশি। গত জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত গ্রাহক বেড়েছে ২০ লাখ। এর মধ্যে মুঠোফোনে ইন্টারনেট গ্রাহক ১১ কোটি ৪০ লাখের বেশি এবং ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের গ্রাহক ১ কোটি ২০ লাখের বেশি।

স্মার্টফোন ব্যবহারকারীদের প্রায় সবাই ইউটিউব ব্যবহার করেন। দেশে লিঙ্কডইন ব্যবহারকারী প্রায় ৫০ লাখ।
আর নেটফ্লিক্সের ব্যবহার করেন ২ লাখ। অ্যামাজনের ব্যবহারকারীর সঠিক হিসাব পাওয়া যায়নি। তবে অ্যামাজন বাংলাদেশে বেশ জনপ্রিয়।

প্রতিটি ব্যবহারকারী বা ইউজারের কর্মকাণ্ড থেকেই আয় করে এসব প্রতিষ্ঠান। এছাড়াও বিজ্ঞাপন থেকে তাদের বড় আয় হয়।

গুগল, অ্যামাজন ও ফেসবুকের মূল প্রতিষ্ঠিত মেটা বাংলাদেশে স্থায়ী অফিস খুলেনি। এর মূল কারণ তারা কর দিতে চায় না। এ নিয়ে বেশ সমালোচনাও রয়েছে দেশে।

Link copied!