আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য সরকার ৬ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করতে যাচ্ছে। নতুন এই বাজেটে মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা ৭ দশমিক ৫ শতাংশ ধরা হচ্ছে। এতে মূল্যস্ফীতি ধরা হবে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ। তবে এবার ভর্তুকির জন্য বাজেটের আকার বাড়ছে বলে জানায় সংশ্লিষ্টরা। দেশে জ্বালানি তেল, বিদ্যুৎ, গ্যাস ও সারের ভর্তুকির অঙ্ক লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে। ফলে আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে গিয়ে ভর্তুকির অঙ্ক বাড়িয়ে মোকাবিলা করা হবে।
পাশাপাশি সরকারের প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নে করোনা মহামারি ঢেউয়ের ধাক্কা অনেকটা কাটিয়ে ধীরে ধীরে ছন্দে ফিরছে অর্থনীতি। এ ধারাকে ধরে রাখতে প্যাকেজের বাকি অর্থের ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে বাজেটে। যা অর্থনীতিকে চাঙ্গা করে প্রবৃদ্ধির নতুন লক্ষ্যমাত্রা ৭.৫ শতাংশ অর্জনের ভূমিকা রাখবে এমনটি আশা করা হচ্ছে।
মন্তব্য করেননি অর্থমন্ত্রী
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে গতকাল রবিবার ভার্চ্যুয়াল প্ল্যাটফর্মে অনুষ্ঠিত আর্থিক, মুদ্রা ও মুদ্রা বিনিময় হারসংক্রান্ত সমন্বয় কাউন্সিল ও সম্পদ কমিটির বৈঠকে প্রাথমিকভাবে এমন সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানা গেছে। চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের মূল বাজেটের আকার ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা। এতে মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৭ দশমিক ২ শতাংশ। তার আগের, অর্থাৎ ২০২০-২১ অর্থবছরের মূল বাজেটের আকার ছিল ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা।
বাজেট প্রণয়নের সঙ্গে যুক্ত অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের একটি সূত্র জানায়, আগামী ৯ জুন বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে নতুন অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপন করবেন অর্থমন্ত্রী। গতকালের বৈঠকে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, অর্থ মন্ত্রণালয়ের চার বিভাগের সচিব ও বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন।অর্থসচিব আবদুর রউফ তালুকদার বৈঠকে নতুন বাজেটের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। এই বৈঠকের পর অর্থমন্ত্রী সাধারণত কিছু বলেন না, গতকালও কিছু বলেননি।
শেষ মুহুর্তে পরিবর্তিত হতে পারে
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, বাজেটের মোট আকার শেষ মুহূর্তে কিছু বাড়তে-কমতে পারে। তবে আগামী বাজেটে ঘাটতি ধরা হবে ২ লাখ ৪৩ হাজার কোটি টাকার মতো। চলতি অর্থবছরে বাজেট ঘাটতি ধরা হয়েছিল ২ লাখ ১৫ হাজার কোটি টাকা। সেই হিসাবে আগামী অর্থবছরে ঘাটতি বাড়তে পারে ২৮ হাজার কোটি টাকা।
এ ছাড়া আসন্ন অর্থবছরে মূল্যস্ফীতির হার ৫ দশমিক ৫ শতাংশ ধরা হচ্ছে বলে জানা গেছে। চলতি অর্থবছরে যা ধরা হয়েছিল ৫ দশমিক ৩ শতাংশ। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাবে গত ফেব্রুয়ারিতে দেশে মূল্যস্ফীতির হার দাঁড়িয়েছে ৬ দশমিক ১ শতাংশ।
সূত্রমতে, আগামী অর্থবছরে মোট আয় ধরা হবে ৪ লাখ ৩৩ হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে আয় ধরা হয়েছিল ৩ লাখ ৮৯ হাজার কোটি টাকা। সে অনুযায়ী এবারে বাজেটে মোট প্রাক্কলিত আয়ের পরিমাণ বাড়ছে ৪৪ হাজার কোটি টাকা। মোট আয়ের মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) ৩ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হচ্ছে আগামী অর্থবছরে। চলতি অর্থবছরে এনবিআরকে ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয়। আগের অর্থবছরেও এনবিআরকে একই লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয়েছিল। সেই হিসাবে এনবিআরের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা বাড়ছে ৪০ হাজার কোটি টাকা।
বাড়ছে এডিপির আকার
চলতি ২০২১–২২ অর্থবছরে মূল বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আকার ধরা হয়েছে ২ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা। আগামী অর্থবছরের জন্য তা ২ লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকা হতে পারে। আগামী অর্থবছরে যেসব খাতে বেশি করে ভর্তুকি ও প্রণোদনা দেওয়া হতে পারে, সেগুলো হচ্ছে বিদ্যুৎ খাত ১৮ হাজার কোটি টাকা, তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) আমদানি মূল্য পরিশোধ ও প্রণোদনা প্যাকেজের সুদ ভর্তুকি ১৭ হাজার ৩০০ কোটি, খাদ্য ভর্তুকি ৬ হাজার ৭৪৫ কোটি এবং কৃষি প্রণোদনা বাবদ ১৫ হাজার কোটি টাকা। বিদ্যুৎ, সার ও গ্যাসের মূল্য সমন্বয় করা না হলেই অবশ্য এমনটা হবে।
বাজেটকে বেশি অংশীদারত্বমূলক করতে আগে প্রতিবছরই প্রাক্-বাজেট আলোচনা হতো। কিন্তু করোনার কারণে ২০২০-২১ ও ২০২১-২২ অর্থবছরে তা খুব একটা হয়নি। এবারও একই অবস্থা দেখা যাচ্ছে। এনবিআর কিছু বৈঠক করেছে সরাসরি, কিছু করেছে অনলাইনে।