জুলাই ৬, ২০২৩, ০২:০৩ এএম
যুক্তরাজ্যের ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশে বিভিন্ন সমস্যা ও চ্যালেন্জ মোকাবেলা করছেন জানিয়ে সফররত বাণিজ্য মন্ত্রী নাইজেল হাডলস্টোন এসব সমাধানে এদেশের সরকারের সহযোগীতা চেয়েছেন।
ঢাকা সফরকালে ব্রিটিশ আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমন্ত্রী নাইজেল হাডলস্টোন বুধবার (৫ জুলাই) এক দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে বাণিজ্য মন্ত্রী টিপু মুনশি কে বলেন তার দেশের ব্যবসায়ীরা এদেশে নানা ধরণের সমস্যা ও চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করছেন। এসময় তিনি বাংলাদেশের বাণিজ্যমন্ত্রীকে সেসব সমস্যা ও চ্যালেঞ্জ সমাধানের জন্যও অনুরোধ জানান।
জবাবে টিপু মুনশি ব্রিটিশ মন্ত্রী কে আশ্বস্ত করে বলেন, নির্দিষ্ট করে সমস্যার কথা জানালে সেগুলো দ্রুত সমাধানের উদ্যোগ নেয়া হবে।
যুক্তরাজ্য ও বাংলাদেশের দুই মন্ত্রীর এ বৈঠক রাজধানীর একটি হোটেলে অনুষ্ঠিত হয়। দুই পক্ষেই মন্ত্রী দ্বয়ের সাথে স্ব স্ব প্রতিনিধিদল ছিলো।
ঢাকায় অবস্হিত ব্রিটিশ বিজনিস গ্রুপ (বিবিজি) সুত্রে জানা যায় বাংলাদেশে যুক্তরাজ্যের কমপক্ষে ৫০ টি বড় ব্যবসায়ী গ্রুপ ও প্রতিষ্ঠান রয়েছে। খাত হিসেবে এসব কোম্পানি হলো রিয়েল এস্টেট, ঔষধ শিল্প, তৈরী পোশাক, ফ্রোজেন ফিস, আর্থিক, তামাকপণ্য, কসমেটিকস, প্রযুক্তি, হোটেল ও রিসোর্ট, শিক্ষা ও কনসালটেন্সী তে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে।
বৃহৎ কোম্পানীগুলোর মধ্যে রয়েছে ব্রিটিশ আমেরিকান ট্যোবাকো, ইউনিলিভার, স্ট্যান্ডার্ড চাটার্ড ব্যাংক, গ্রুপ ফোর সল্যুশনস, জিএসকে ফার্মা, ডানকান ব্রাদার্স, ঢাকা রিজেন্সী ও সর্বাধিক পরিচিত ব্রিটিশ কাউন্সিল।
এদের মধ্যে ব্রিটিশ আমেরিকান ট্যোবাকো কোম্পানি বাংলাদেশের সর্বোচ্চ করদাতা। সর্বশেষ হিসেবে এ কোম্পানী এককভাবে বছরে প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকা বা প্রায় আড়াই বিলিয়ন মার্কিন ডলার কর পরিশোধ করে।
এদিকে, যুক্তরাজ্য বর্তমানে বাংলাদেশের ৩য় বৃহত্তম রপ্তানি গন্তব্য। অর্থবছর ২০২২-২০২৩ এ বাংলাদেশ ৫ দশমিক ৩১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বা ৫০ হাজার কোটি টাকার বেশী মূল্যের পণ্য রপ্তানি করেছে। বাংলাদেশের এ রপ্তানী আয়ের পুরোটাই কোটা ও শুল্ক মূক্ত সুবিধার আওতায়। এর বিপরীতে যুক্তরাজ্য থেকে ৪৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বা ৫ হাজার কোটি টাকারও কম পরিমাণ মূল্যের পণ্য আমদানি করেছে।
দুই দেশের মন্ত্রীর বৈঠকে টিপু মুনশি বলেন, উভয় দেশের বাণিজ্য, বিনিয়োগ এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক উন্নত করার বিশাল সুযোগ রয়েছে। দুই দেশের পারস্পরিক স্বার্থ অক্ষুণ্ন রেখে অর্থ ও বাণিজ্য সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় উন্নীত করতে একযোগে কাজ করতে চায় সরকার।
বাংলাদেশ বর্তমানে বিনিয়োগের উত্তম পরিবেশ বিরাজ করছে জানিয়ে টিপু মুনশি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে পদ্মা সেতু নির্মাণ, ঢাকা মেট্রো রেলের উদ্বোধন, ঢাকা বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল, কক্সবাজারে নতুন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এবং ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল নতুন মাত্রা যোগ করেছে। বিদেশী বিনিয়োগ বাড়াতে দেশভিত্তিক আলাদা অর্থনৈতিক জোন বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে। এসব অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগের জন্য যুক্তরাজ্য সরকারের প্রতি তিনি আহবান জানান।
বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, দুই দেশের অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক সম্প্রসারণে জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ ইতোমধ্যে দুই দফা বৈঠক করেছে এবং খুব শিগগরি তৃতীয় বৈঠকে বসবে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে ঢাকায় ১ম ও ২য় বাংলাদেশ-ইউ কে (ইউনাইটেড কিংডম) ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট ডায়ালগ অনুষ্ঠিত হবে। এই নিয়মিত সংলাপ যৌথ মূল্যবোধ এবং মানদণ্ডের ভিত্তিতে বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য, অর্থনৈতিক ও বিনিয়োগকে আরও শক্তিশালী করতে অবদান রাখবে।
টিপু মুনশি এসময় ডেভেলপিং কান্ট্রি ট্রেডিং স্কিম-ডিসিটিএস এর অধীনে ২০২৯ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের ডিউটি ফ্রি-কোটা ফ্রি সুবিধা অব্যাহত রাখার জন্য যুক্তরাজ্য সরকারকে ধন্যবাদ জানান।
তিনি এসময় ২০২৬ সালে এলডিসি থেকে বাংলাদেশ উত্তোরণের পর পরবর্তী আরও ছয় বছর শুল্কমুক্ত কোটামুক্ত সুবিধা অব্যাহত রাখতে পাশে থাকার জন্য যুক্তরাজ্য সরকারের প্রতি আহবান জানান।
নাইজেল হাডলস্টোন বলেন, তার দেশ বাংলাদেশে ব্যবসা-বাণিজ্যের পাশিাপশি এভিয়েশন, শিক্ষা এবং প্রতিরক্ষার বিষয়ে সহযোগিতার আগ্রহ প্রকাশ করেন।
ব্রিটিশ মন্ত্রী আরও বলেন, যুক্তরাজ্যে রেডিমেড গার্মেন্টস ছাড়াও বাংলাদেশী অন্যান্য পণ্যের বিশাল বাজার রয়েছে। ভবিষ্যতে এ বাজার বহুগুণ বৃদ্ধি পাবে।
দুই মন্ত্রীর ঐ বৈঠকে বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার সারাহ ক্যাথেরিন কুক এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোঃ আব্দুর রহিম খানসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।