রোজার আগেই উত্তপ্ত হয়ে উঠছে খেজুরের বাজার

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০২৩, ১০:১৭ এএম

রোজার আগেই উত্তপ্ত হয়ে উঠছে খেজুরের বাজার

আসছে মার্চের শেষ সপ্তাহের দিকে শুরু হচ্ছে রোজার মাস।  দেশে এ মাসেই সবচেয়ে বেশি খেজুর বিক্রি হয়ে থাকে। বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের (বিটিটিসি) সূত্রে জানা গেছে, সারা বছর দেশে যে পরিমাণ খেজুর বিক্রি হয় তার অর্ধেকই রোজার মাসে। তবে রমজান শুরু হওয়ার আগেই দেশের বাজারে বাড়তে শুরু করেছে খেজুরের দাম। আমদানি কম ও চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় দাম বাড়ছে সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে। এমতাবস্থায় বাজার মনিটরিং ও আমদানি বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।

রমজানে খেজুর ছাড়া ইফতার খোলার কথা চিন্তাই করা যায় না।  দাম যাই হোক না কেন রোজাদারদের ইফতারের টেবিলে বা প্লেটে কম-বেশি খেজুর থাকা চাই। 

মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে রমজান মাস আসলেই দ্রব্যমূল্য কমে যায়। বিশেষ ছাড় দেওয়ার হিড়িক পড়ে যায়। তবে বিপরীত চিত্র বাংলাদেশের বাজারে। এমাসে চিনি, খেজুর, ছোলা, বেসনসহ প্রয়োজনীয় সকল পণ্যের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায়। এছাড়া, এ মাসে খেজুরের চাহিদা অনেক বেড়ে যায়। সারা বছর ১১ মাসে যে পরিমাণ খেজুরের চাহিদা থাকে তার চেয়ে বেশি চাহিদা রমজান মাসে। 

এ বছর রমজানকে সামনে রেখে বাজারে আসতে শুরু করেছে নানা ধরণের খেজুর। তবে রমজানের আগেই খেজুরের বাজারে বেশ উত্তাপ ছড়িয়ে পড়েছে। আমদানি সংকট এর জন্য দায়ি বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। খেজুরের সরবরাহ নিয়েও দুশ্চিন্তায় তারা। 

ব্যবসায়ীরা বলছেন, খেজুরের আমদানি ব্যয় বেশি হওয়ার কারণে এ বছর পণ্যটি কাঙ্ক্ষিত পরিমাণে আমদানি হয়নি। রমজানে খেজুর আমদানির জন্য এলসি খোলার সময়ও প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে।

বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন (বিটিটিসি) সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশে সারা বছর খেজুরের চাহিদা এক লাখ টন। এরমধ্যে রমজান মাসেই চাহিদা ৫০ হাজার টনের বেশি। বৈশ্বিক সঙ্কট ও  ডলারের মূল্য বেড়ে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে চলতি বছর আমদানি বেশ কমে গেছে। বিটিটিসি আরও জানায়,  গত তিন মাসে (নভেম্বর-জানুয়ারি) ২২ হাজার ৭শ টন খেজুর আমদানি হয়েছে। অথচ এর আগের বছর, একই সময়ে ৪০ হাজার ৮শ টনের বেশি খেজুর আমদানি করা হয়েছিল। এই হিসেবে, গত বছরের তুলনায় চলতি বছর প্রায় ৪৫ ভাগ খেজুর আমদানি কমে গেছে। 

ব্যবসায়ী ও বিটিটিসি সূত্রে জানা গেছে, মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ইরাক থেকে খেজুরের বড় ধরণের চালান আসে বাংলাদেশে। ইরাক থেকে আসা এই খেজুরের নাম জাহেদি খেজুর। শহর বা গ্রামে-গঞ্জের বাজারে কেজি দরে কেনা এই খেজুরের চাহিদা সবচেয়ে বেশি।   এছাড়া, সৌদি আরব,  সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইরান, তিউনিশিয়া, আলজেরিয়া, জর্ডান ও মিশর থেকেও খেজুর আমদানি করা হয়। 

তবে চলতি বছর খেজুর আমদানি গত বছরের তুলনায় প্রায় অর্ধেক কমে যাওয়ায় রমজানের আগেই বাড়তে শুরু করেছে দাম। বর্তমানে পাইকারি বাজারে সাধারণ মানের খেজুরে কেজিপ্রতি বেড়েছে ৩০ থেকে ৫০ টাকা। ‘জাহেদি’ খেজুর বিক্রি হচ্ছে ১২০-১৫০ টাকা কেজিতে। এছাড়া ভালো মানের খেজুরের দাম মানভেদে কেজিপ্রতি তিনশ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।

খেজুরের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে ক্রেতারা বলছেন, ব্যবসায়ীদের বাজার সিন্ডিকেট এর জন্য দায়ি। বিক্রেতারা সরবরাহ কম থাকার ধোয়া তুলে আড়তে খেজুর েমজুদ করে রেখেছে। রমজান শুরুর এক সপ্তাহ আগে তারা চড়া দামে বিক্রি করবে। তাদের দাবি, সরকার যথারীতি বাজার তদারকি করলে অনেকটা সুফল পাওয়া যাবে। 

এ বিষয়ে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার দ্য রিপোর্ট ডট লাইভকে বলেন, “কেউ যাতে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করে অধিক মুনাফা করতে না পারে, সে জন্য বাজার তদারকি জোরদার করা হচ্ছে।”

তবে ব্যবসায়ীদের ভাষ্য, ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় আমদানি অনেক কমে গেছে। আমদানির জন্য যে খেজুরের অর্ডার দেওয়া হয়েছে তা আসতে সময় লাগবে। খেজুর সরবরাহ স্বাভাবিক থাকলে মূল্য বাড়ার প্রশ্ন আসেনা।  

খেজুর আমদানিকারকরা বলছেন, সারা বছরে যে খেজুরের চাহিদা, তার চেয়ে তিন থেকে চারগুণ চাহিদা বেড়ে যায় রোজায়। সেই চাহিদা মেটাতে ছয় মাস আগে থেকেই খেজুর মজুদ করতে থাকেন তারা। 

মো. নাসের আহমেদ নামে এক আমদানিকারক দ্য রিপোর্ট ডট লাইভকে বলেন, সময়মতো এলসি খোলা না গেলেতো সমস্যা হবেই।  কোনো ব্যাংক যদি এলসি না খুলতে দেয়, তাহলে খেজুর-ফল সব জিনিসেরই বাজারে সংকট থাকবে। এতে দাম এমনিতেই বেড়ে যাবে। ১০ কনটেইনার চাহিদার বিপরীতে এলসির আবেদন করলে দেয় দুই কনটেইনার।”

বাজার বিশ্লেষকদের মতে, চলমান বৈশ্বিক সংকটে বাজারের খেজুর সরবরাহ ও দাম স্বাভাবিক রাখতে হলে আমদানি শুল্ক কমাতে হবে। খেজুর আমদানির প্রক্রিয়া ও খরচের উদাহারণ দিয়ে কনজুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ’র (ক্যাব) বাজার বিশ্লেষক কাজী আবদুল হান্নান দ্য রিপোর্ট ডট লাইভকে বলেন, মধ্যপ্রাচ্যের বাজার থেকে ১০০ টাকার যে খেজুর কিনে আনা হয় তার ওপর সরকার শুল্ক বসায় ১০৩ টাকা। এনিয়ে ১০০ টাকার ওই খেজুরের মূল্য বেড়ে হয় ২০৩ টাকা। এর সাথে রয়েছে আমদানি খরচ ও মুনাফা।  তাই শুল্ক কমানো হলে খেজুরের দাম কিছুটা কমে যাবে বলে তিনি মনে করেন।

Link copied!