ঢাবি অধ্যাপক তানজীমের পক্ষে মানববন্ধন করলেন বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

মার্চ ৫, ২০২৩, ০১:২৯ পিএম

ঢাবি অধ্যাপক তানজীমের পক্ষে মানববন্ধন করলেন বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক তানজীমউদ্দিন খানের পক্ষে এবার মানববন্ধনে নেমেছে তাঁর বিভাগের  শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীরা। রবিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের সামনে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শতাধিক শিক্ষার্থী ‘আত্মহত্যার সাজানো ঘটনা ও শিক্ষকের প্রতি অপবাদের বিরুদ্ধে সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদ’ শিরোনামে মানববন্ধন ও গণস্বাক্ষর কর্মসূচিতে অংশ নেয়।  

মানববন্ধনে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক আব্দুল মান্নান বলেন, ক্লাসে শুধু লেকচার দেওয়া একজন শিক্ষকের দায়িত্ব নয়। শিক্ষার্থীদের ম্যানার শেখানোও একজন আদর্শ শিক্ষকের দায়িত্ব ও কর্তব্য। 

ক্যাম্পাসের ছাত্র নেতাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, যারা এহসান ধ্রুব'র আত্মহত্যার উদ্যোগ গ্রহন বিষয়টি নিয়ে রাজনীতিকরণ করার চেষ্টা করছে, প্লিজ তারা এটা করবেন না। সত্য ঘটনাটি আগে জানুন।

আরও পড়তে পারেন : শিক্ষকের অপমান নয়, প্রেমে প্রত্যাখ্যাত হয়েই ঢাবি শিক্ষার্থীর আত্মহত্যার চেষ্টা?

বিভাগের শিক্ষক আলী সিদ্দিক বলেন, আমরা দেখছি কীভাবে রাজনৈতিক পরিচয়কে ব্যবহার করে তানজীম স্যারের মতো একজন শিক্ষককে ফাঁসানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। এ সকল ঘৃণ্য সিদ্ধান্ত জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছাত্রলীগের আচরনের বহি:প্রকাশ হতে পারে না। ছাত্রলীগের প্রতি উদার আহ্বান জানাই, তাঁরা যেন নৈতিকভাবে তানজীম স্যারের প্রতি সমর্থন প্রদান করেন।

DU IR Thereport inner 1

বিভাগের শিক্ষক আনোয়ারুল আজিম বলেন, বিভাগের একজন নারী শিক্ষার্থীকে যৌন হয়রানির বিরুদ্ধে কথা বলতে গিয়ে তানজীম স্যার নিজেই আজ হয়রানির শিকার। সেই শিক্ষার্থী (ধ্রুব) তার হয়রানিমূলক আচরণকে জাস্টিফাই করার জন্য ছাত্রলীগের নাম ব্যবহার করেছে।

বিভাগের শিক্ষক সামিয়া জামান বলেন, আমরা যারা এখানে দাঁড়িয়েছি কেউ ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে দাড়াইনি। আমরা একজন যৌন নিপীড়কের (এহসান ধ্রুব) অপবাদের বিরুদ্ধে দাড়িয়েছি। যৌন নিপীড়ন করে সে যদি রাজনৈতিক পরিচয়ের জোরে মনে করে সে বেঁচে যাবে, এটা তাঁর সবচেয়ে ভুল সিদ্ধান্ত ।

বিভাগের ৭২ তম ব্যাচের শ্রেণী প্রতিনিধি মোস্তাফা আল হোসাইন আকিল বলেন, আমি নিজেও একজন ছাত্রলীগ কর্মী। তানজীম স্যার ওই দিন ছাত্রলীগ নিয়ে ক্লাসে কিছু বলেননি। একটি সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে সেদিন স্যার তাঁর কাছে প্রমাণ চেয়েছিলেন। কিন্তু সে প্রমাণ দিতে ব্যর্থ হওয়ায় স্যার তাঁকে শিক্ষকসুলভ শাসন করেন।

এর আগে শনিবার সংশ্লিষ্ট (আইআর-৭২) ব্যাচের শিক্ষার্থীরা অধ্যাপক মোহাম্মদ তানজীমউদ্দিন খানের বিরুদ্ধে ‘অপমানের’ অভিযোগ তুলে ‘আত্মহত্যার চেষ্টা’ করা ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে গণমাধ্যমে একটি যৌথ বিবৃতি পাঠায়।

DU IR Thereport Inner 2

ওই শিক্ষার্থীরা বলেছেন, পুরো ঘটনায় তানজীমউদ্দিন খানের ভূমিকা অত্যন্ত দায়িত্বশীল ছিল এবং তা নির্দ্বিধায় প্রশংসার দাবিদার। একজন নারী শিক্ষার্থীকে হয়রানির হাত থেকে রক্ষা করতে একজন সচেতন শিক্ষকের যে ভূমিকা পালন করার কথা, তিনি তা-ই করেছেন।

ঘটনার সূত্রপাত গত বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে আটটার দিকে ফেসবুকে আত্মহত্যার ইঙ্গিতমূলক একটি পোস্ট দেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল শাখা ছাত্রলীগের প্রশিক্ষণবিষয়ক উপসম্পাদক এস এম এহসান উল্লাহ ওরফে ধ্রুব। তিনি আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র। পোস্টে অধ্যাপক তানজীমউদ্দিনের বিরুদ্ধে তাঁর সাথে ‘অন্যায়’ ও ‘অপমানের’ অভিযোগ তোলা হয়। পরে এহসান নিখোঁজ হন। এরপর বৃহস্পতিবার রাত দেড়টার দিকে শহীদুল্লাহ্ হলের পুকুরপাড় থেকে এহসান উদ্ধার হয়।

ধ্রুবর ব্যাচমেট একাধিক শিক্ষার্থীর সাথে কথা বলে জানা যায়, সহপাঠী এক বান্ধবীকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে প্রত্যাখ্যাত হয়ে ধ্রুব বিভিন্ন মাধ্যমে ও উপায়ে মেয়েটির চরিত্রহানী করা শুরু করে। সাম্প্রতিক সময়ের একটি শিক্ষাসফর নিয়ে ধ্রুব আবারও সহপাঠী বান্ধবীর বিরুদ্ধে কুৎসা রটনা শুরু করলে অধ্যাপক তানজীমউদ্দিন তাঁকে এসব গুজব রটানো থেকে বিরত থাকতে বলেন। এতে অপমানিত হয়ে ধ্রুব আত্মহত্যার নাটক সাজান বলে তাঁর সহপাঠীদের ধারনা।

Link copied!