কুবার পেডি; মাটির নিচে আস্ত একটি শহর

জিন্নাত আরা জশোয়া

আগস্ট ২, ২০২৩, ০৪:৪৮ পিএম

কুবার পেডি; মাটির নিচে আস্ত একটি শহর

সংগৃহীত ছবি

মরুভূমি এলাকায় খোলামেলা ছোট্ট এক শহর। নেই তেমন গাছপালা। ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা কিছু ঘর-বাড়ি, এক জোড়া সরাইখানা, একটি পুলিশ স্টেশন, একটি স্কুল আর একটি হাসপাতাল। দেখার তেমন কিছুই নেই মাটির ওপরে। 

তবে অবাক করা বিষয় হলো, এমন হালকা-পাতলা ফাঁকা শহরের মাটির নিচেই রয়েছে গোটা একটি শহর। শুধু কি বাড়িঘর, ফুটবল ক্লাব, রেস্তোরাঁ, বইয়ের দোকান, সিনেমা হল, ব্যাংক, আর্ট গ্যালারি, মার্কেট কমপ্লেক্স, পাঠাগার, দোকানপাট সবই রয়েছে মাটির তলাতেই।

মাটির তলায় বলে তেমন কোনো ভিন্নতা নেই বাড়িঘর কিংবা অন্য কোনো বিষয়ে। মাটির ওপরের বাড়িগুলোর মতোই লিভিং রুম, রান্নাঘর, বাথরুম সবকিছুই আছে এখানে। 

পাতালের এই শহরের বাড়িগুলোতে প্রবেশপথটা সাধারণত থাকে রাস্তার সমতলে, তারপর পাহাড়ের ভেতরের দিকে থাকে কামরাগুলো। 

ঘরগুলোতে বাতাস চলাচলের ব্যবস্থাও রয়েছে। দীর্ঘ, লম্বা একটি কূপের মতো থাকে কামরাগুলোতে বাতাস চলাচলের জন্য।  

দিনের তাপমাত্রা অত্যধিক হওয়ায় কুবার পেডির লোকজন রাতের বেলা গল্ফ খেলে থাকে।

মাটির নিচের এই শহরের নাম কুবার পেডি। স্থানীয় শব্দ কুপা পিটি থেকে এসেছে কুবার পেডি শব্দটা। যার অর্থ ‘হোয়াইট ম্যান’স হোল’ বা ‘সাদা মানুষের গর্ত’। অস্ট্রেলিয়ার অ্যাডিলেড থেকে ৮৪৬ কিলোমিটার উত্তর পশ্চিমাঞ্চলের মরুভূমিতে অবস্থিত এই শহর।

কুবার পেডির আরেক নাম ওপাল নগরী। ১৯১৫ সালে ওপাল খনি আবিষ্কারের পর শহরটি গড়ে তোলা হয়। ১৪ বছরের এক বালক বাবার স্বর্ণসন্ধানী দলের সাথে এই এলাকায় এসে আচমকা এই ওপালের খোঁজ পেয়ে যায়।

কয়েক বছরের মধ্যে শত শত খনিজ সন্ধানী এখানে এসে মাটি খুঁড়তে শুরু করেন। তবে তারা একসময় বুঝতে পারলেন এখানকার উষ্ণ আবহাওয়ায় মাটির ওপরের জীবন মোটেই সহজ নয়। তাই এখানকার অধিবাসীরা বাস করতে শুরু করলেন পাতালে। 

কুবার পেডির শুরুর দিকের বাড়িগুলো বানানো হয় ওপালের খোঁজে খোঁড়া সেই গর্তে। তবে এরপর বাড়িগুলো বানানো হয়েছে পাহাড়ের মধ্যে গুহা তৈরি করে।  

পৃথিবীর বৃহত্তম উপলের ভাণ্ডার এই কুবার পেডি।  এখানে আছে ৭০টির বেশি ওপাল ফিল্ড। পৃথিবীর বৃহত্তম উপল উৎপাদনকারী এলাকাও এটি। গোটা দুনিয়ায় উৎপাদিত ওপালের শতকরা ৭০ শতাংশের সাথে জড়িত শহরটি। তাই পৃথিবীর ওপাল রাজধানী হিসেবেও পরিচিত এটি। এমনকি এই শহরে পাওয়া গেছে সাড়ে ছয় কোটি বছরের পুরোনো ওপাল মুক্তাও।

মাটির নিচের এই শহর চলচ্চিত্র নির্মাতাদেরও আকৃষ্ট করেছে। ২০০৬ সালে এই শহরকে নিয়ে তৈরি হয় ওপাল ড্রিম নামে একটি চলচ্চিত্র। 

এছাড়া ১৯৯১ সালে নির্মিত হয় আনটিল দ্য এন্ড অফ দ্য ওয়ার্ল্ড, ১৯৯৪ সালে দি অ্যাডভেঞ্চার অফ প্রিসকিল্লা কুইন অফ দ্য ডেজার্ট। 

এছাড়া পিচ ব্ল্যাক, মেড মেক্স: বিয়ন্ড থান্ডারস্টর্ম, রেড প্ল্যানেটসহ বেশ কিছু চলচ্চিত্রের শুটিংও  হয়েছে এ শহরে।  

পর্যটকদের কাছেও ক্রমশ দারুণ আকর্ষণীয় জায়গা হয়ে উঠেছে এই কুবার পেডি। পর্যটকদের সুবিধার্থে রয়েছে হোটেলও। তবে এই শহরে দেখতে সবকিছু স্বাভাবিক শহরের মতো হলেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে বিপদজনকও বটে। 

কুবার পেডিতে হাঁটাচলার ব্যাপারে সতর্ক হওয়া জরুরি। কারণ উপলের খোঁজে গোটা এলাকায় অনেক গর্ত খোঁড়া হয়েছে। 

যদিও এই গর্তের কথা জানিয়ে সতর্ক চিহ্ন দেওয়া আছে শহরে ঢোকার মুখে ও ভেতরে নানা জায়গায়। 

তবে এসবের তোয়াক্কা করেন না পর্যটকরা। মাটির নিচে থাকা এই শহরের সৌন্দর্য উপভোগ করতে একটু-আধটু ঝুঁকি নেয়া ভ্রমণপ্রেমীদের কাছে বড় কিছু নয়। 

Link copied!