পুলিশের হেফাজতে মাশা আমিনি নামে এক তরুণীর মৃত্যুর পর হিজাব-বিরোধী বিক্ষোভ কোনো ভাবেই থামছে না ইরানে। দেশটির রাজধানী তেহরানসহ বিভিন্ন শহরে ছড়িয়ে পড়া বিক্ষোভে এপর্যন্ত মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৫০ জনে দাঁড়িয়েছে। এর মধ্যে পাঁচ নিরাপত্তারক্ষীও রয়েছেন।
ইরান সরকারের পক্ষ থেকে দাবি করে বলা হয়েছে, এখন পর্যন্ত সরকারবিরোধী বিক্ষোভ সামাল দিতে পুলিশের গুলিতে ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। তবে সরকারের দেওয়া তথ্য অসত্য দাবি করে নরওয়ের অসলোভিত্তিক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ‘ইরান হিউম্যান রাইটস্’-এর পক্ষ থেকে বলা হয়, নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়ে শর্ধশতে পৌঁছেছে।
‘ইরান হিউম্যান রাইটস্’ স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার বরাত দিয়ে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক আল আরাবিয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অন্ততপক্ষে ইরানের ৮০ শহরে মানবাধিকার এবং মৌলিক অধিকারের দাবিতে রাস্তায় নেমেছেন সাধারণ মানুষ।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, বিক্ষোভকারীরা সরকারবিরোধী স্লোগান দেওয়ার পাশাপাশি হিজাব পুড়িয়েও প্রতিবাদ করছেন।পুলিশকে লক্ষ্য করে পাথর ছোড়ার পাশাপাশি পোড়ানো হয়েছে পুলিশের গাড়িও।
বিক্ষোভকারীদের দমাতে বেশি সংঘাতপূর্ণ এলাকাগুলোতে বিশাল পুলিশ বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। বাইরের দেশগুলোতে দেশটির বর্তমান পরিস্থিতির চেহারা ধামাচাপা দিতে ইন্টারনেট ব্যবহারে ওপরও কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর সাকেজ থেকে আসা ২২-বছর বয়সী কুর্দি নারী মাশা আমিনি কোমায় তিন দিন কাটানোর পর শুক্রবার হাসপাতালে মারা যান।
গত সপ্তাহে আমিনি তার সাকাজের বাড়ি থেকে বের হয়ে রাজধানী তেহরানে গিয়েছিলেন। এসময় 'অযথাযথ' হিজাব পরার কারণে পুলিশ তাকে আটক করে। আমিনির বিরুদ্ধে পুলিশের অভিযোগ, তিনি নারীদের হিজাব বা চাদর দিয়ে চুল ঢেকে রাখা এবং ঢিলেঢালা পোশাক পরার আইন ভঙ্গ করেছেন। পুলিশের একটি ডিটেনশন সেন্টারে অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার পরপরই তিনি কোমায় চলে যান এবং মারা যান।
ইরারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশটির পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে মাশা আমিনির সঙ্গে কোনো দুর্ব্যবহার করা হয়নি। "হঠাৎ করে তার হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া" বন্ধ হয়ে যায় বলে দাবি ইরানি পুলিশের। তবে আমিনির পরিবারের মতে মাশা আমিনি শারীরিকভাবে সুস্থ ছিলেন।
আমিনির মৃত্যুর পর থেকে ইরানের বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভ হচ্ছে। প্রথমে তার জন্মনগরী সাকাজে বিক্ষোভ শুরু হয়। পরে কুর্দিস্তানে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। টুইটারে আমিনির নাম ৫০ লাখের বেশিবার উল্লেখ করা হয়েছে। ইরানের আরো অনেক নগরীতেও বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে।