আসন প্রাপ্তির নিরিখে তো বটেই বিধানসভা নির্বাচনে ভোটপ্রাপ্তির নিরিখেও এক ভূমিধস জয় পেল মমতা বন্দোপাধ্যায়ের দল তৃণমূল কংগ্রেস। ভোট শতাংশের হিসেবে এটাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রতিষ্ঠিত দলের সবচেয়ে ভাল ফল।
জানা যায় ৪৮ শতাংশ ভোট পেয়ে সরকার গঠন করতে চলেছে তৃণমূল। অতীতে কোনও বিধানসভা বা লোকসভা নির্বাচনে এত আসন পায়নি তারা। ১৯৯৮ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে মোট ৬টি লোকসভা এবং ৫টি বিধানসভা ভোটে লড়েছে তৃণমূল। বিধানসভা ভোটের নিরিখে এ পর্যন্ত সেরা ফল হয়েছিল ২০১৬ সালে। ৪৪.৯১ শতাংশ ভোট পেয়ে ২১১টি আসনে জিতেছিল জোড়াফুল। ভোট শতাংশের পাশাপাশি আসন প্রাপ্তির হিসেবেও এ বারে সেই সংখ্যাকে ছাপিয়ে যাচ্ছে তারা।
২০১১-র বিধানসভা ভোটে ৩৮.৯৩ শতাংশ ভোট পেয়ে ১৮৪টি আসন দখল করেছিল তৃণমূল। তবে সে বার তারা লড়েছিল ২২৬টি আসনে। কংগ্রেস-সহ অন্য সহযোগীদের বাকি আসনগুলি ছেড়েছিল।
শতাংশের হিসেবে তৃণমূলের সেরা ফল ২০১৯-এর লোকসভা ভোটে। আসনসংখ্যা কমে ২২ হলেও ৪৩.৩ শতাংশ ভোট পেয়েছিল তৃণমূল। তার পাঁচ বছর আগে ২০১৪-র লোকসভা ভোটে জোড়াফুলের প্রার্থীরা ৩৪টি আসনে জিতেছিলেন। মোট ভোট পেয়েছিলেন প্রায় ৩৯.০৫ শতাংশ।
এদিকে,জয় নিশ্চিত হওয়ার পর রবিবার (২ মে) সন্ধ্যায় কালীঘাটে নিজের দফতরের সামনে উপস্থিত নেতাকর্মীদের উদ্দেশে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন তিনি। এসময় মমতা ব্যানার্জি বলেছেন, নির্বাচনে বাংলার জয় হয়েছে। বাংলার মা-বোনদের জয় হয়েছে। সম্প্রীতি, সংহতির জয় হয়েছে।
মমতা নেতাকর্মীদের বলেন, ‘সবাইকে অনেক ধন্যবাদ জানাচ্ছি। সবাই ভালো থাকুন। সুস্থ থাকুন। কোভিড-১৯ সুরক্ষাবিধি মেনে চলুন। বিজয় মিছিল এখন করবেন না। প্রথম কাজ কোভিডের বিরুদ্ধে লড়াই করা।’
অন্যদিকে সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ে তৃণমূল প্রধান বলেন, ‘আমার একটা টার্গেট ছিল ২২১ আসনে জিতবো। আমি বলেছিলাম ডাবল সেঞ্চুরি করব। বাংলার জয় হয়েছে। বাংলার মা-বোনেদের জয় হয়েছে। সম্প্রীতি, সংহতির জয় হয়েছে। সারা ভারতবর্ষকে বাঁচিয়েছে এ ফলাফল।’
মমতা আরও বলেন, ‘সত্যিই খেলা হয়েছে, আমরা জিতেছি। কোভিড কমে গেলে ব্রিগেডে বড় করে বিজয় মিছিল হবে।’
কোভিড টিকার জন্য আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়ে মমতা বলেন, ‘কেন্দ্রীয় সরকারের (বিজেপির নেতৃত্বাধীন) কাছে বিনামূল্যে টিকা চাইব। না দিলে আন্দোলনে নামব।’
২৯৪ আসন বিশিষ্ট পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভায় সরকার গঠনের জন্য কোনো দল বা জোটের প্রয়োজন হয় ১৪৮ আসনের। এবার দুটি আসন বাদে ২৯২টি আসনে ভোট হয়েছে। গত ২৭ মার্চ থেকে শুরু হয়ে আট দফায় ভোটগ্রহণ শেষ হয় ২৯ এপ্রিল।
কলকাতার সংবাদমাধ্যমের সবশেষ খবর অনুসারে, এই ২৯২ আসনের মধ্যে মমতার দল তৃণমূল জিতেছে ২১৩ টি আসনে। আর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দল বিজেপি জিতেছে ৭৭ আসনে। এছাড়া কংগ্রেসসহ একাধিক দলের গঠিত সংযুক্ত মোর্চা জিতছে একটিমাত্র আসনে।
দলগতভাবে এমন সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলেও অবশ্য মমতা তার নিজের আসন নন্দীগ্রামে হেরেছেন। সেখানে ফল প্রকাশে নানান নাটকীয়তার পর বিজয়ী ঘোষণা করা হয়েছে বিজেপির প্রার্থী শুভেন্দু অধিকারীকে।
অবশ্য হ্যাটট্রিক জয়ের মধ্য দিয়ে সরকার গঠনের পথে থাকা মমতাকে অভিনন্দন-শুভেচ্ছা জানিয়েছেন বিজেপি নেতা ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং, আম আদমি পার্টির নেতা ও দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল, সমাজবাদী পার্টির নেতা ও উত্তর প্রদেশের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদব, কাশ্মীরের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ প্রমুখ।