ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে প্রাণঘাতী সংঘাত আরও তীব্র আকার ধারণ করেছে। শনিবার রাতে ইরান ইসরায়েলের বিভিন্ন শহরে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়, যাতে কমপক্ষে ৪ জন নিহত ও ৬৩ জন আহত হয়।
তেলআবিবসহ ইসরায়েলের একাধিক স্থানে এই হামলার চালানো হয়। ইরানের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এটি ছিল শুক্রবার ইসরায়েলের পক্ষ থেকে ইরানের পারমাণবিক ও সামরিক স্থাপনায় চালানো নজিরবিহীন হামলার পাল্টা জবাব।
ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ইরানের এই ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় দুই বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে এবং তেলআবিবের বেশ কয়েকটি স্থানে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
জরুরি সেবা সংস্থাগুলোর তথ্য অনুযায়ী, এই হামলায় ডজনখানেক মানুষ আহত হয়েছে, যার মধ্যে অনেকের অবস্থা আশঙ্কাজনক। রাতভর ইসরায়েলের বিভিন্ন অঞ্চলে সতর্কতার সাইরেন বেজে ওঠে।
এর আগে শুক্রবার ইসরায়েল ইরানের ভেতরে ব্যাপক আকারে বিমান ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। ইরানের দাবি, ওই হামলায় তাদের অন্তত ৭৮ জন নিহত হয়েছে, যাদের মধ্যে বেশ কয়েকজন শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা ও ছয়জন পারমাণবিক বিজ্ঞানী ছিলেন। এছাড়া আরও ৩২০ জন আহত হয়েছে, যাদের অধিকাংশই বেসামরিক নাগরিক।
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি ইসরায়েলের এই হামলাকে "গুরুতর অপরাধ" বলে আখ্যা দেন এবং জানান, ইসরায়েলকে কঠিন মূল্য দিতে হবে। তিনি জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে বলেন, "ইসরায়েলকে ভয়াবহ প্রতিশোধের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।"
এদিকে, ইরানের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা সিএনএন-কে জানিয়েছেন, ইসরায়েলকে যারা সামরিক সহায়তা দেবে বা তাকে রক্ষা করতে এগিয়ে আসবে, তাদের আঞ্চলিক ঘাঁটিগুলোও ইরানের লক্ষ্যবস্তু হবে।
অন্যদিকে, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু জানান, ইসরায়েলের অভিযান থামবে না। তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, "আরো কিছু আসছে।" তিনি ইরানকে প্রতিহত করতে সামরিক অভিযান অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেন।
প্রথমদিকে ইসরায়েলের হামলা থেকে কিছুটা দূরত্ব বজায় রাখার চেষ্টা করলেও, পরে যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের প্রতি প্রকাশ্য সমর্থন জানিয়েছে। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সিএনএন-কে বলেন, "ইসরায়েলকে অবশ্যই সমর্থন দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র।" একইসঙ্গে তিনি ইরানকে সতর্ক করে বলেন, ইরানকে দ্রুত পারমাণবিক আলোচনায় ফিরে আসতে হবে, "না হলে তাদের আর কিছুই অবশিষ্ট থাকবে না।"
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এই পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। অনেক কূটনীতিক এখনই শান্তির জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন, তবে তেহরান ও তেলআবিবের উভয়পক্ষই আরও হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
পরিস্থিতি দ্রুত কোন দিকে মোড় নেয়, তা দেখতে আগামী কয়েকদিন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে। উভয়পক্ষের অচল অবস্থানের কারণে এটি মধ্যপ্রাচ্যের সাম্প্রতিক ইতিহাসের অন্যতম বিপজ্জনক সংঘাতে পরিণত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।