করোনার ভ্যাকসিন তৈরিতে অবদান রেখে চিকিৎসায় নোবেল পেলেন ক্যারিকো ও ওয়েইসম্যান

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

অক্টোবর ২, ২০২৩, ০৪:৫৮ পিএম

করোনার ভ্যাকসিন তৈরিতে অবদান রেখে চিকিৎসায় নোবেল পেলেন ক্যারিকো ও ওয়েইসম্যান

সংগৃহীত ছবি

প্রথা অনুযায়ী অক্টোবরের প্রথম সোমবার চিকিৎসাবিজ্ঞানে পুরস্কার ঘোষণার মধ্যে দিয়ে শুরু হয়েছে নোবেল পুরস্কার ঘোষণা। কোভিড-১৯ এর বিরুদ্ধে অত্যাধুনিক এমআরএনএ করোনা টিকা আবিষ্কারে বিশেষ অবদান রাখার জন্য ২০২৩ সালে চিকিৎসাবিজ্ঞানে সম্মানজনক এ পুরস্কার দেওয়া হয় কাতালিন ক্যারিকো ও ড্রিউ ওয়েইসম্যানকে।

সোমবার বিকেল পৌনে ৩টার দিকে স্টকহোমে রয়্যাল সুইডিশ একাডেমি অব সায়েন্সেস ভবনে দুই বিজ্ঞানীর নাম ঘোষণা করে নোবেল কমিটি। নোবেল প্রাইজের অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

এমআরএনএ টিকার বিকাশে সহায়ক নিউক্লিওসাইড বেস পরিবর্তন নিয়ে কাজ করেন হাঙ্গেরিয়ান-মার্কিন বিজ্ঞানী ক্যারিকো এবং মার্কিন চিকিৎসক-বিজ্ঞানী ওয়েইসম্যান।

ক্যারিকো ও ওয়েইসম্যানের ম্যাসেঞ্জার আরএনএ বা এমআরএনএ করোনা টিকা প্রস্তুতের ক্ষেত্রে সর্বাধুনিক প্রযুক্তির নাম। মার্কিন কোম্পানি ফাইজার ও মডার্নার করোনা টিকা এমআরএনএ প্রযুক্তির। এই প্রযুক্তিতে টিকা প্রস্তুতে মৃত বা বিশেষভাবে প্রক্রিয়াজাত জীবাণু ব্যবহার করা হয় না। এতে ব্যবহার করা হয় এক ধরণের প্রোটিন, যা দেহের অভ্যন্তরে প্রবেশের পর কোনো নির্দিষ্ট জীবাণুর বিরুদ্ধে মানবদেহের প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে বহুগুণ শক্তিশালী করে।

চিকিৎসাক্ষেত্রে এই অবদানের জন্য পুরস্কার হিসেবে তারা দুজনে মিলে মোট ১ কোটি ১০ লাখ সুইডিশ ক্রাউন বা ৯ লাখ ৮৬ হাজার ডলার ভাগাভাগি করবেন। এর পরিমাণ বর্তমান বিনিময় হার (১ ডলার সমান ১০৯ টাকা ৭৫ পয়সা) অনুযায়ী প্রায় ১০ কোটি ৮২ লাখ ১৮ হাজার টাকা।

এবার নোবেল বিজয়ীদের পুরস্কারের অর্থ ১০ লাখ ক্রাউন বেড়েছে। সম্প্রতি পুরস্কারদাতা প্রতিষ্ঠান নোবেল ফাউন্ডেশন এ ঘোষণা দেয়।

এর আগে ২০২২ সালে চিকিৎসাবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন সুইডিশ জিনতত্ত্ববিদ সান্তে পাবো। বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া মানুষের নিকটতম পূর্বপুরুষ হোমিনিন এবং মানব সম্প্রদায়ের বিবর্তনের জিনোম সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কারের জন্য সান্তে পাবোকে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়েছে।

২০২১ সালে চিকিৎসায় নোবেল পুরস্কার পান মার্কিন দুই বিজ্ঞানী— ডেভিড জুলিয়াস ও আরডেম পাটাপোশিয়ান। তাপমাত্রা, চাপ বা অন্য কোনো শক্তির উপস্থিতিতে মানুষের স্নায়ুতন্ত্র কীভাবে সাড়া দেয় তার উত্তর খুঁজে বের করায় এই বিজ্ঞানীরা নোবেল পান।

১৯০১ সালে প্রথমবারের মতো চিকিৎসাবিজ্ঞানে নোবেল দেওয়া শুরু হয়। ১৯০১ সাল থেকে শুরু করে ২০২২ সাল পর্যন্ত সময় মোট ১১৩ বার নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে মোট ২২৫ জন বিজ্ঞানী নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন।

মঙ্গলবার (৩ অক্টোবর) পদার্থবিদ্যা, বুধবার (৪ অক্টোবর) রসায়ন এবং বৃহস্পতিবার (৫ অক্টোবর) সাহিত্য শাখায় পুরস্কার জয়ীর নাম ঘোষণা করা হবে। শান্তি পুরস্কার বিজয়ীর নাম ঘোষণা করা হবে শুক্রবার (৬ অক্টোবর)।

বিজ্ঞান, সাহিত্য ও শান্তিতে বিশেষ অবদানের জন্য ছয়টি ক্যাটাগরিতে প্রতি বছর নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়ে থাকে। প্রতিবছর চিকিৎসাবিজ্ঞান ক্যাটাগরি দিয়ে জয়ীদের নাম ঘোষণা শুরু করে নোবেল কমিটি। নোবেল শান্তি পুরস্কার ঘোষণা হয় নরওয়ে থেকে। সাহিত্য ও অর্থনীতির মতো অন্য পুরস্কারগুলো সুইডেন থেকে ঘোষণা করা হয়।

উল্লেখ্য, ১৯০৫ সালে নোবেল পুরস্কার প্রদান শুরু হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত চিকিৎসা ক্ষেত্রে ১০৯ বার নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। তবে কমিটি বরাবরই পুরস্কারের জন্য মনোনীতদের নাম পরিচয় গোপন রেখে আসছে।

১৮৯৫ সালের নভেম্বরে আলফ্রেড নোবেল নিজের মোট উপার্জনের ৯৪ শতাংশ (৩ কোটি সুইডিশ ক্রোনার) দিয়ে তার উইলের মাধ্যমে নোবেল পুরস্কার প্রবর্তন করেন। এই বিপুল অর্থ দিয়েই শুরু হয় পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, চিকিৎসাবিজ্ঞান, সাহিত্য ও শান্তিতে নোবেল পুরস্কার প্রদান। ১৯৬৮-তে তালিকায় যুক্ত হয় অর্থনীতি। পুরস্কার ঘোষণার আগেই মৃত্যুবরণ করেছিলেন আলফ্রেড নোবেল।

Link copied!