জুন ২১, ২০২৫, ০৬:১০ পিএম
ইরানের উত্তরাঞ্চলে শুক্রবার একটি মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্প অনুভূত হওয়ার পর এটি গোপন পারমাণবিক পরীক্ষা কিনা, এমন জল্পনা শুরু হয়। বিশেষ করে ইসরায়েলের সঙ্গে চলমান উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে এই সন্দেহ আরও জোরালো হয়।
রিখটার স্কেলে ৫.১ মাত্রার ভূমিকম্পটি আলবোর্জ পর্বতমালায় ১০ কিলোমিটার গভীরে সংঘটিত হয়। সময় ও স্থান নিয়ে প্রশ্ন উঠলেও ভূকম্পন বিশেষজ্ঞরা দ্রুত এই আশঙ্কা নাকচ করে দিয়েছেন। তাদের মতে, এটি একটি প্রাকৃতিক ভূমিকম্প এবং এটির ভূতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য সুনির্দিষ্টভাবে তা প্রমাণ করে।
বিশেষজ্ঞরা জানান, পারমাণবিক পরীক্ষার ফলে যে ধরনের ভূকম্পন সৃষ্টি হয়, তা সাধারণত অনেক বেশি অগভীর এবং কম্পনের মাত্রা ৩.০ এর বেশি হয় না। কিন্তু ইরানে শুক্রবারের ভূমিকম্প ছিল ৫.১ মাত্রার, যা সৃষ্টি করতে কয়েক মিলিয়ন টন টিএনটি বিস্ফোরকের সমতুল্য শক্তি প্রয়োজন— যা অধিকাংশ পারমাণবিক পরীক্ষার সক্ষমতার অনেক বেশি।
পূর্বের ঘটনা থেকে মিলিয়ে দেখা যায়, ২০১৬ সালে উত্তর কোরিয়া তাদের চতুর্থ পারমাণবিক অস্ত্রের পরীক্ষা চালিয়েছিল, যার ফলে ৫.১ মাত্রার ভূকম্পন সৃষ্টি হয়েছিল। তবে এটি ছিল একটি ভূগর্ভস্থ বিস্ফোরণ, যার কম্পনের মাত্রা প্রাকৃতিক ভূমিকম্পের তুলনায় তুলনামূলকভাবে ছোট। এর আগের পরীক্ষাগুলোর মাত্রা ছিল ৪.৩, ৪.৭ এবং ৫.১।
যুক্তরাষ্ট্র, সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স এবং চীনের পারমাণবিক পরীক্ষার অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে বিজ্ঞানীরা ভূমিকম্পের মাত্রা থেকে বিস্ফোরণের শক্তি (ইয়েল্ড) অনুমান করতে সক্ষম হয়েছেন। সাধারণত, ৫.১ মাত্রার ভূমিকম্পের সমান বিস্ফোরণ শক্তি প্রায় ৭,০০০ টন টিএনটির সমতুল্য। তুলনামূলকভাবে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় হিরোশিমায় ফেলা পারমাণবিক বোমার শক্তি ছিল এর প্রায় দ্বিগুণ।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, ভূমিকম্পের কম্পন শক্তি থেকে বিস্ফোরণের মাত্রা নির্ণয় করা গেলেও এটি কোন ধরণের বোমা— ফিশন না হাইড্রোজেন— তা নির্ধারণ করা সম্ভব নয়। যেমন, ২০১৬ সালে উত্তর কোরিয়া যে হাইড্রোজেন বোমার সফল পরীক্ষা দাবি করেছিল, সেটি শুধুমাত্র সিসমিক তথ্যের ভিত্তিতে নিশ্চিত করা যায়নি।
ইরানের সাম্প্রতিক ভূমিকম্পের ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞরা দৃঢ়ভাবে বলছেন, এটি সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক এবং ভূ-গাঠনিক কারণে সংঘটিত। পারমাণবিক পরীক্ষার সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই। ভূমিকম্পের মাত্রা, গভীরতা এবং বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ সবই প্রমাণ করে, এটি একটি স্বাভাবিক ভূমিকম্প এবং পারমাণবিক পরীক্ষার গুজবের কোনো ভিত্তি নেই।