এপ্রিল ২৮, ২০২৫, ০৪:৫০ পিএম
ছবি: সংগৃহীত
কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণরেখায় (এলওসি) ভারত ও পাকিস্তানের সেনাদের মধ্যে গতকাল রোববার দিবাগত রাতেও গোলাগুলি হয়েছে। শ্রীনগরের পেহেলগামে পর্যটকদের ওপর বন্দুকধারীদের হামলার পর এ নিয়ে টানা চতুর্থ রাত দুই প্রতিবেশী দেশের সেনাদের মধ্যে গোলাগুলি হলো।
সোমবার, ২৮ এপ্রিল ভারতীয় সেনাবাহিনী অভিযোগ করেছে, নিয়ন্ত্রণরেখাজুড়ে পাকিস্তানের পক্ষ থেকে ‘বিনা উসকানিতে’ ছোড়া গুলির জবাব দিয়েছে তারা।
২২ এপ্রিল ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে বন্দুকধারীরা গুলি করে ২৬ পর্যটককে হত্যা করে। ভারত ওই হামলায় জড়িত সন্দেহভাজন অস্ত্রধারীদের তিনজনের মধ্যে দুজনকে পাকিস্তানি বলে শনাক্ত করেছে। তবে ইসলামাবাদ পেহেলগামে হামলায় তাদের কোনো ভূমিকা থাকার অভিযোগ অস্বীকার করে এ ঘটনায় নিরপেক্ষ তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে।
এই হামলা ভারতজুড়ে ক্ষোভ ও শোকের জন্ম দিয়েছে। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের ডাক উঠেছে। নয়াদিল্লির অভিযোগ, পাকিস্তান কাশ্মীরে সন্ত্রাসবাদের মদদ দেয়। উভয় দেশই পুরো কাশ্মীরকে নিজেদের ভূখণ্ড বলে দাবি করে। কাশ্মীর নিয়ে দুই দেশের মধ্যে দুইবার যুদ্ধ হয়েছে।
পেহেলগামে হামলার পর পারমাণবিক শক্তিধর দুই দেশ পরস্পরের বিরুদ্ধে বেশ কিছু ব্যবস্থা নিয়েছে। ভারত গুরুত্বপূর্ণ সিন্ধু পানিবণ্টন চুক্তি স্থগিত করার ঘোষণা দিয়েছে এবং পাকিস্তান ভারতীয় বিমান সংস্থাগুলোর জন্য তাদের আকাশসীমা বন্ধ করে দিয়েছে।
ভারতীয় সেনাবাহিনী বলেছে, রোববার দিবাগত রাতে ভারত ও পাকিস্তানের কাশ্মীর অঞ্চলকে বিভক্ত করা ৭৪০ কিলোমিটার দীর্ঘ নিয়ন্ত্রণরেখায় একাধিক পাকিস্তানি সেনা চৌকি থেকে ‘বিনা উসকানিতে’ ছোড়া গুলির জবাবে ছোট অস্ত্র দিয়ে গুলি করেছে।
এ বিষয়ে ভারতীয় সেনাবাহিনী বিস্তারিত আর কোনো তথ্য দেয়নি। কেউ হতাহত হয়েছে কি না, তা–ও জানায়নি।
পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর কাছে এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তারা সেই অনুরোধে সাড়া দেয়নি।
পেহেলগামে হামলার পর ভারতের প্রতিরক্ষা বাহিনী দেশজুড়ে একাধিক সামরিক মহড়া চালিয়েছে। এর মধ্যে কয়েকটি নিয়মিত প্রস্তুতিমূলক মহড়া বলে জানিয়েছেন একজন প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা।
স্থানীয় একজন পুলিশ কর্মকর্তা আজ সোমবার রয়টার্সকে বলেছেন, জঙ্গিদের খোঁজে ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে প্রায় এক হাজার বাড়িতে ও বনে তল্লাশি অভিযান চালিয়েছে নিরাপত্তা বাহিনী। এ সময় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য প্রায় ৫০০ জনকে আটক করা হয়েছে। অন্তত নয়টি বাড়ি গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বলেও জানিয়েছেন ওই কর্মকর্তা।
কাশ্মীরের রাজনৈতিক নেতারা ভারত সরকারকে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে অভিযানের সময় সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, অভিযানে সেখানকার নিরপরাধ ব্যক্তিদের যেন ক্ষতি না হয়।
গত শনিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে এক পোস্টে জম্মু ও কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ বলেছেন, ‘এমন কোনো ভুল পদক্ষেপ, যা মানুষকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলে, তা এড়িয়ে চলার সময় এসেছে... দোষীদের শাস্তি দিন, তাদের প্রতি কোনো দয়া দেখাবেন না। কিন্তু গণহারে নিরপরাধ মানুষের ক্ষতি হতে দেবেন না।’