গাজায় খাদ্যগুদামে ‘ক্ষুধার্ত মানুষের’ ঢল, দুজন নিহত: ডব্লিউএফপি

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

মে ২৯, ২০২৫, ০১:২৬ পিএম

গাজায় খাদ্যগুদামে ‘ক্ষুধার্ত মানুষের’ ঢল, দুজন নিহত: ডব্লিউএফপি

ছবি: সংগৃহীত

জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) জানিয়েছে, দলে দলে ‘ক্ষুধার্ত মানুষ’ মধ্য গাজার একটি খাদ্যগুদামে ঢুকে পড়েছেন।

এ ঘটনায় দুজন নিহত এবং বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। ডব্লিউএফপি জানিয়েছে, তারা বিস্তারিত তথ্য যাচাই-বাছাই করে দেখছে।

বার্তা সংস্থা এএফপির ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, দেইর আল-বালাহ শহরের আল-ঘাফারি গুদামে ক্ষুধার্ত লোকজন ঢুকে খাদ্যের বস্তা ও ময়দার প্যাকেট নিয়ে যাচ্ছেন। সেই সময় গুলির শব্দ শোনা যায়। গুলি কোথা থেকে এসেছে, তা তখন স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছিল না।

ডব্লিউএফপি এক বিবৃতিতে বলেছে, প্রায় তিন মাস ধরে চলা ইসরায়েলি অবরোধের পর মানবিক সংকট ‘নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে’। গত সপ্তাহে এ অবরোধ কিছুটা শিথিল করা হয়েছে।

ডব্লিউএফপি জানিয়েছে, বিতরণের জন্য ওই গুদামে আগেই খাদ্য মজুত রাখা হয়েছিল।

সংস্থাটি আরও জানিয়েছে, গাজায় অবিলম্বে খাদ্যসহায়তা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। মানুষকে নিশ্চিত করতে হবে যে তারা অনাহারে মরবেন না। 

ডব্লিউএফপি বলেছে, তারা আগে থেকেই সতর্ক করে আসছিল, পরিস্থিতি দ্রুত খারাপের দিকে যাচ্ছে। সাহায্য সীমিত করার কারণে ক্ষুধার্ত মানুষের জীবন আরও হুমকির মুখে পড়ছে।

ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, গতকাল বুধবার জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ১২১টি ট্রাক গাজায় প্রবেশ করেছে, যাতে ছিল ময়দা ও অন্যান্য খাদ্যসামগ্রী।

গত সপ্তাহে ইসরায়েল গাজায় সীমিত পরিমাণে ত্রাণ প্রবেশ করতে দেয়। তবে জাতিসংঘের মধ্যপ্রাচ্য দূত সিগ্রিড কাগ একে বর্ণনা করেছেন এভাবে, ‘জাহাজ ডুবে যাওয়ার পর যেন লাইফবোট দেওয়া হয়েছে।’ কারণ, গাজার প্রতিটি মানুষই দুর্ভিক্ষের ঝুঁকিতে রয়েছে। 

এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলসমর্থিত বিতর্কিত সংগঠন গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ) ত্রাণ বিতরণের কাজ শুরু করেছে। জাতিসংঘকে পাশ কাটিয়ে মার্কিন নিরাপত্তা সংস্থার মাধ্যমে এ সংস্থা পরিচালিত হচ্ছে। জাতিসংঘ একে অকার্যকর ও অনৈতিক বলে উল্লেখ করেছে।

জিএইচএফ দক্ষিণ ও মধ্য গাজায় চারটি ত্রাণ বিতরণকেন্দ্র চালু করেছে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল দাবি করেছে, এ ব্যবস্থা হামাসের হাত থেকে ত্রাণ বাঁচাতে সাহায্য করছে। তবে হামাস ত্রাণ চুরির অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় জানিয়েছে, গত মঙ্গলবার রাফাহ শহরের একটি জিএইচএফ বিতরণকেন্দ্র চালুর এক দিন পর সেখানে উপচে পড়া ভিড় হয়। এ সময় সেখানে গুলিতে ৪৭ জন আহত হয়েছেন।

জাতিসংঘের আরেক কর্মকর্তা সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, মানুষ জাতিসংঘের ত্রাণবাহী ট্রাক থেকেও জিনিসপত্র লুট করে নিয়ে যাচ্ছেন।

ফিলিস্তিনের জাতিসংঘ মানবিক দপ্তরের প্রধান জোনাথন হুইটল বলেন, হামাসের মাধ্যমে ত্রাণ চুরি হওয়ার কোনো প্রমাণ নেই। বরং যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে প্রকৃত লুটপাট চালিয়েছে কিছু অপরাধী চক্র, যাদের ইসরায়েলি বাহিনী কেরেম শালোম সীমান্তের কাছে কাজ করতে দিচ্ছে।

জাতিসংঘের মতে, যুদ্ধবিরতির সময় যেভাবে গাজায় দ্রুত ত্রাণ সরবরাহ করা হয়েছিল, ঠিক সেভাবে আবার ত্রাণ সরবরাহ বাড়ানো হলে ক্ষুধার্ত মানুষের হাতে লুটপাট বন্ধ হবে এবং গাজাজুড়ে জাতিসংঘের বিতরণ নেটওয়ার্ককে পুরোপুরি কাজে লাগানো সম্ভব হবে।

Link copied!