‘হাজ কাসেম’: কাসেম সোলেইমানির নামে ইরানের নতুন মিসাইল

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

জুন ১৫, ২০২৫, ০১:২৪ পিএম

‘হাজ কাসেম’: কাসেম সোলেইমানির নামে ইরানের নতুন মিসাইল

ছবি: সংগৃহীত

মধ্যপ্রাচ্যের উত্তপ্ত রাজনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে ইরানের তৈরি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ‘হাজ কাসেম’। কুদস বাহিনীর প্রয়াত প্রধান কাসেম সোলেইমানির নামে নামকরণ করা এই অস্ত্রকে ঘিরে ইরান এখন এক নতুন বার্তা দিচ্ছেশুধু পাল্টা হামলা নয়, বরং আধুনিক প্রযুক্তিতে সজ্জিত একটি ‘মোক্ষম জবাব’ হিসেবে।

সম্প্রতি ইসরায়েলের ওপর চালানো এক পাল্টা হামলায় ইরান দাবি করেছে, এতে ‘হাজ কাসেম’ মিসাইল-ই ব্যবহার করা হয়েছে। 

‘হাজ কাসেম’ মিসাইল: কী আছে এই অস্ত্রে?

ইরানি বার্তা সংস্থা তাসনিম ও ফারস নিউজের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ‘হাজ কাসেম’ হলো একটি ম্যানুভারেবল ব্যালিস্টিক মিসাইল, যার গতি ঘণ্টায় প্রায় ১,২০০ কিলোমিটার। এটি যে কেবল দ্রুতগামী তা নয়, এতে রয়েছে:

উন্নত নেভিগেশন সিস্টেম, যা নির্ভুলভাবে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারে

ইলেকট্রনিক ওয়ারফেয়ার প্রতিরোধ ক্ষমতা, যার ফলে শত্রু রাডার বা জ্যামিং সিস্টেম এড়িয়ে যেতে পারে এবং

এমন ওয়ারহেড, যা প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেদ করে গভীরতর ধ্বংস সাধনে সক্ষম

ইরানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেনারেল আজিজ নাসিরজাদেহ নিজেই ঘোষণা দিয়েছেন, এই ক্ষেপণাস্ত্র মার্কিন ‘থাড’ (THAAD) সিস্টেম এবং ইসরায়েলের আয়রন ডোম, ডেভিড’স স্লিং-এর মতো উন্নত প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেদ করার ক্ষমতা রাখে। 

সোলেইমানির নামে এই নামকরণ কেন গুরুত্বপূর্ণ?

২০২০ সালের জানুয়ারিতে বাগদাদ বিমানবন্দরের কাছে মার্কিন ড্রোন হামলায় নিহত হন কাসেম সোলেইমানি, যিনি ছিলেন ইরানের ইসলামিক রেভ্যুলিউশনারি গার্ডের এলিট ‘কুদস বাহিনী’-এর প্রধান। তিনি শুধু একজন সামরিক নেতা ছিলেন না, বরং ইরানের জন্য তিনি প্রতিরোধ ও প্রভাব বিস্তারের প্রতীক।

সোলেইমানির মৃত্যুর পর থেকে ইরান বারবার তার হত্যার প্রতিশোধের হুমকি দিয়ে এসেছে। ‘হাজ কাসেম’ নামকরণ সেই প্রতিশ্রুত প্রতিশোধের এক বাস্তব প্রতিফলন। এই নামের মাধ্যমে ক্ষেপণাস্ত্রটি শুধুমাত্র একটি অস্ত্র নয়বরং একটি আদর্শিক ও প্রতীকী বার্তা।

ইসরায়েল-ইরান সংঘাত: পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় ব্যবহারের পরিণতি

গত সপ্তাহে ইসরায়েল ইরানে চালায় একটি ভয়াবহ হামলা, যাতে ৭৪ জন নিহত হয়। তার জবাবে ইরান ইসরায়েলের ওপর ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালায়, যাতে অন্তত ৮ ইসরায়েলি নিহত হয়। ফারস নিউজ জানায়, এই হামলায়ই ‘হাজ কাসেম’ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহৃত হয়েছে, এবং তা রাতভর চলেছে।

যদি ইরানের দাবি সত্যি হয় যে এই মিসাইল ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা ভেদ করে আঘাত হেনেছে, তবে এটি মধ্যপ্রাচ্যের সামরিক ভারসাম্যে একটি নতুন ভয়ের নাম হয়ে উঠতে পারে।

কতটা ভয়ংকর এই ‘হাজ কাসেম’?

‘হাজ কাসেম’ মিসাইলের ভয়াবহতা কেবল তার প্রযুক্তিগত বৈশিষ্ট্যে সীমাবদ্ধ নয়এর ভয়াবহতা নিহিত এর উদ্দেশ্য, নাম ও ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে। এই মিসাইল: প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেদ করতে সক্ষম বলে দাবি করছে ইরান। এটি স্বয়ংক্রিয় লক্ষ্যবস্তুর অনুসরণে পারদর্শী এবং ইলেকট্রনিক জ্যামিং মোকাবেলায় সক্ষম। কৌশলগতভাবে ইসরায়েল বা মার্কিন ঘাঁটির ওপর পাল্টা হামলার জন্য এটি বেশ কার্যকর।

হাজ কাসেম একধরনের ‘স্টেটমেন্ট ওয়েপন’যা কেবল ধ্বংসের জন্য নয়, বরং বার্তা দেওয়ার জন্য। এই অস্ত্রের প্রচ্ছন্ন বার্তা হচ্ছেইরান তার প্রযুক্তিগত ও আদর্শিক অবস্থানে পিছপা নয়। ভবিষ্যতের যেকোনো সংঘাতে ‘হাজ কাসেম’ হতে পারে গেম চেঞ্জার।

Link copied!