জুন ১৪, ২০২৫, ০৬:৫২ পিএম
ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল শুক্রবার জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের এক বৈঠকে বক্তব্য দেন জাতিসংঘে চীনের স্থায়ী প্রতিনিধি ফু কং। ছবি: সংগৃহীত
ইরানের ওপর ইসরায়েলের হামলার নিন্দা জানিয়েছে জাতিসংঘে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ফু কং। গতকাল শুক্রবার মধ্যপ্রাচ্য পরিস্থিতি নিয়ে জাতিসংঘে নিরাপত্তা পরিষদের এক বৈঠকে তিনি এ নিন্দা জানান।
ফু কং বলেছেন, ইসরায়েল ইরানের সার্বভৌমত্ব, নিরাপত্তা ও আঞ্চলিক অখণ্ডতা লঙ্ঘন করেছে। একই সঙ্গে তিনি ইসরায়েলকে অবিলম্বে সব ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ সামরিক পদক্ষেপ বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন।
চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা সিনহুয়া এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে।
ইরানের পারমাণবিক ইস্যুতে কূটনৈতিক আলোচনার মধ্যে এই হামলার নেতিবাচক প্রভাব নিয়ে চীন গভীরভাবে উদ্বিগ্ন জানান ফু। তিনি বলেন, ‘চীন এই দ্বন্দ্বের তীব্রতা বৃদ্ধি ও সংঘাতের বিপক্ষে। ইসরায়েলের কর্মকাণ্ড যে পরিণতি ডেকে আনতে পারে তা নিয়ে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।’
ইসরায়েল শুক্রবার ভোরে ইরানের বিরুদ্ধে আকস্মিক হামলা শুরু করে। এতে বহু মানুষ নিহত হন। তাদের মধ্যে ছিলেন ইরানের শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা ও পারমাণবিক বিজ্ঞানীরাও। আহত হন আরও শতাধিক। এই হামলা দীর্ঘমেয়াদি অভিযানের সূচনা দাবি করে ইসরায়েল বলেছে, এর উদ্দেশ্য তেহরানের পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির পথ রুদ্ধ করা।
জবাবে শুক্রবার রাতেই ইরান পাল্টা বিমান হামলা চালায়। এ সময় ইসরায়েলের দুটি প্রধান শহর জেরুজালেম ও তেল আবিবে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। এতে এ পর্যন্ত ৩ জন নিহত ও বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন।
চীন তার নাগরিকদের ইসরায়েল ও ইরানে ‘জটিল ও গুরুতর’ নিরাপত্তা পরিস্থিতি সম্পর্কে সতর্ক করেছে। বিশেষ করে ইসরায়েলে অবস্থানরতদের সম্ভাব্য ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলার জন্য প্রস্তুত থাকতে বলেছে।
এদিকে ফু কংয়ের অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেছেন চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র লিন জিয়ান। তিনি ইরানের ওপর আবারও হামলা এবং আঞ্চলিক অস্থিরতা সৃষ্টিকারী যেকোনো পদক্ষেপের বিপক্ষে চীনের কঠোর অবস্থান জানিয়েছেন। চীনের এই অবস্থান দেশটির মধ্যপ্রাচ্য পররাষ্ট্র নীতির অংশ। চীন দীর্ঘদিন ধরেই ইরান-সৌদি পুনর্মিলন এবং ফিলিস্তিনিপন্থী দলগুলোর ঐক্যের লক্ষ্যে কাজ করে আসছে।
এই নীতির দৃষ্টান্ত তুলে ধরে রেনমিন ইউনিভার্সিটি অব চায়নার চোংইয়াং ইনস্টিটিউট ফর ফিনান্সিয়াল স্টাডিজ এবং স্কুল অব গ্লোবাল লিডারশিপের ডিন অধ্যাপক ওয়াং ওয়েন তেহরান টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বেইজিংয়ের দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেন।
অধ্যাপক ওয়াং বলেন, ‘গত দুই বছরে ইসরায়েলের আগ্রাসী পররাষ্ট্রনীতির প্রতি চীনা সরকার ও জনগণ গভীর অসন্তোষ প্রকাশ করেছে। আমার সহকর্মীদের মধ্যে এবং চীনা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমজুড়ে ইরানের সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষায় নেওয়া পদক্ষেপগুলোর প্রতি সর্বসম্মত সমর্থন রয়েছে।’
সেদিন সন্ধ্যায় ইরান পাল্টা হামলায় ইসরায়েলি সামরিক স্থাপনাগুলোর ওপর সমন্বিত ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়, যাতে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি ও প্রাণহানি ঘটে।
ওয়াং আরও বলেন, ‘আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, অধিকাংশ চীনা জনগণ বিদেশি আগ্রাসন ও আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে ইরানের পাশে রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল দীর্ঘদিন ধরে ইরানকে যেভাবে পরিকল্পিতভাবে কোণঠাসা করেছে, আমরা তার প্রতি গভীর সহানুভূতি অনুভব করি। এখন জরুরি বিষয় হলো আমাদের প্রতিরোধ অব্যাহত রাখা। সাহস ও ধৈর্য নিয়ে এই সংগ্রামে অবিচল থাকা, কারণ চূড়ান্ত বিজয় ন্যায়ের পক্ষেই যাবে।’
মধ্যপ্রাচ্যর ভবিষ্যত প্রসঙ্গে অধ্যাপক ওয়াং বলেন, ‘মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি স্থাপনে চীন ধারাবাহিকভাবে মধ্যস্থতা করে এসেছে। বিশেষত ২০২৩ সালের মার্চে ইরান-সৌদি আরব পুনর্মিলন এবং ২০২৪ সালের জুলাইয়ে ফিলিস্তিনি ঐক্য প্রচেষ্টায়। আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতার পক্ষে আমরা বরাবরই জোরালো অবস্থান নিয়েছি। ভবিষ্যতেও চীন ইরানের ন্যায়সঙ্গত সংগ্রামের পাশে থাকবে।’