ইসরায়েল-ফিলিস্তিন যুদ্ধ পঞ্চম দিনে: এর শেষ কোথায়!

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

অক্টোবর ১১, ২০২৩, ০৪:২৮ পিএম

ইসরায়েল-ফিলিস্তিন যুদ্ধ পঞ্চম দিনে: এর শেষ কোথায়!

ছবি: রয়টার্স

পঞ্চম দিনে এসেও রক্তক্ষয়ী ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাতের শেষ হওয়ার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।

ইসরায়েলের হামলায় গাজার অবস্থা পুরোপুরি বিধ্বস্ত। গতকাল মঙ্গলবার গাজার সীমান্তে বিপুল পরিমাণ সেনা ও যুদ্ধ সরঞ্জামের সমাবেশ ঘটিয়েছে। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী বলেছে, তারা সীমান্তের বেশির ভাগ এলাকাই সুরক্ষিত করেছে। ইসরায়েলি বাহিনীর আক্রমণে প্রচুর অবকাঠামো ধ্বংস হয়েছে। বাস্তুচ্যুত হয়েছে হাজার হাজার মানুষ। ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেছেন, গাজা আগে যে অবস্থায় ছিল, তা কখনই ফিরে আসবে না।

এর আগে গত শনিবার আকাশ ও স্থলপথে ইসরায়েলে হামলা চালায় ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠন হামাস। এতে কয়েক শ মানুষের মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় পাল্টা আক্রমণ চালায় ইসরায়েল। দুই পক্ষের লড়াইয়ে এ পর্যন্ত প্রায় দুই হাজার মানুষেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে।

ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী বলছে, ইতিহাসে সবচেয়ে মারাত্মক ‘জঙ্গি হামলা’ ছিল এটি। হামাস দক্ষিণ ইসরায়েলি শহরগুলোতে হামলা চালানোর চার দিন পরও ইসরায়েলি সেনারা সেখান থেকে মৃতদেহ উদ্ধার করছে।

ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনীর কর্মকর্তারা আরও জানান, হামাস যাদের অপহরণ করেছে তাদের মধ্যে অধিকাংশ জিম্মিকে শনাক্ত করে তাদের পরিবারকে অবহিত করার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। 

ইসরায়েলের নিরস্ত্র মানুষের ওপর হামাস সদস্যরা যেভাবে হামলা চালিয়েছেন, তাকে সম্পূর্ণভাবে শয়তানের কাজ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস, মন্ত্রিসভার একাধিক সদস্যসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিয়ে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে ফোনালাপের পর এ কথা বলেছেন তিনি। 

বাইডেন হোয়াইট হাউস থেকে বলেছেন, গত শনিবারের পর থেকে হামলায় কমপক্ষে ১৪ মার্কিন নাগরিক নিহত হয়েছেন। এখনো অনেক মার্কিন নাগরিক জিম্মি রয়েছেন। মার্কিন গোলাবারুদ বহনকারী প্রথম বিমানটি মঙ্গলবার ইসরায়েলে পৌঁছেছে। পরে তিনি এক্সে লিখেছেন, ‘হামাসের বর্বরতা, রক্ত-তৃষ্ণা, আইএসআইএসের ভয়াবহ তাণ্ডবের কথা মনে করিয়ে দেয়। এটা সন্ত্রাসবাদ।’

অন্যদিকে গাজার স্বাস্থ্য বিভাগ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, শনিবার থেকে এ পর্যন্ত হামলায় মৃতের সংখ্যা ৯০০ হয়েছে। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে ২৬০ শিশু ও ২৩০ নারী রয়েছে বলে জানিয়েছে তারা। গাজার আতঙ্কিত অধিবাসীরা বিভিন্ন অঞ্চলজুড়ে আবাসিক ভবন, হাসপাতাল ও স্কুলগুলোতে বোমা হামলার বর্ণনা দিয়েছে। ইসরায়েল এখানে সম্পূর্ণ অবরোধ কার্যকর করার হুমকি দিয়েছে। তাদের হামলায় প্রচুর বেসামরিক অবকাঠামো ধ্বংস হয়েছে।

মঙ্গলবার জাতিসংঘে ফিলিস্তিনি দূত গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের বোমাবর্ষণের ঘটনা তুলে ধরেছেন। হামাস-নিয়ন্ত্রিত ফিলিস্তিনি ছিটমহলে সম্পূর্ণ অবরোধ আরোপকে ‘গণহত্যার চেয়ে কম কিছু নয়’ বলে বর্ণনা করেছেন। জাতিসংঘে ফিলিস্তিনি দূত রিয়াদ মনসুর নিরাপত্তা পরিষদে এক চিঠিতে লিখেছেন, ‘এ ধরনের নির্মম অমানবিকতা এবং জনগণকে বোমা মেরে আত্মসমর্পণ করার চেষ্টা, ক্ষুধাকে যুদ্ধের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা এবং তাদের জাতীয় অস্তিত্বকে মুছে ফেলা গণহত্যার চেয়ে কম কিছু নয়।’

জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিল সতর্ক করেছে, ইতিমধ্যেই ‘স্পষ্ট প্রমাণ’ রয়েছে যে ইসরায়েল ও গাজায় সহিংসতায় যুদ্ধাপরাধ সংঘটিত হতে পারে। সংস্থাটি বলেছে, তারা শনিবার থেকে ‘সব পক্ষের মাধ্যমে সংঘটিত যুদ্ধাপরাধের’ প্রমাণ সংগ্রহ করছে।

ওমানে জরুরি বৈঠকের পর ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষকে অর্থছাড় স্থগিত করার জন্য ইউরোপীয় কমিশনের সিদ্ধান্ত বাতিল করেছে।

ইইউ ইলন মাস্ককে ইসরায়েলে হামাসের আক্রমণ সম্পর্কে বিভ্রান্তি ছড়ানোর অভিযোগে সতর্ক করেছে। অভিযোগ আছে, মাস্কের মালিকানাধীন ‘এক্স’ থেকে ভুয়া খবর এবং ‘পুরোনো ছবি’ ছড়ানোর অভিযোগ আছে।

Link copied!