ঘুষ গ্রহণের অভিযোগে ভারতীয় লোকসভা থেকে তৃণমূল কংগ্রেসের নেত্রী মহুয়া মৈত্রকে বহিষ্কার করা হয়েছে। মহুয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল-তিনি ভারতীয় ব্যবসায়ী দর্শন হিরানন্দানির কাছ থেকে ২ কোটি রুপি ঘুষ সহ মূল্যবান উপহার সামগ্রী গ্রহণ করে দর্শনের অনুকূলে সংসদে প্রশ্ন উত্থাপন করেছিলেন।
পরে এ বিষয়ে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়ে মহুয়ার সংসদ সদস্যপদ বাতিল করতে সুপারিশ করেছিল একটি ‘নীতি কমিটি’। ওই সুপারিশ ধ্বনিভোটে পাশ হয় লোকসভায়।
ভারতীয় গণমাধ্যমগুলো জানায়, শুক্রবার ( ৮ ডিসেম্বর ) সংসদের শীতকালীন অধিবেশনের পঞ্চম দিনে লোকসভার স্পিকারের কাছে জমা দেওয়া হয় মহুয়ার ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ নিয়ে গঠিত তদন্ত কমিটি।
এই ইস্যুতে কেন্দ্র করে অধিবেশনের শুরু থেকেই ছিল টান টান উত্তেজনা। বেলা ১২টার পর পেশ করা হয় ৪৯৫ পাতার সেই রিপোর্ট। লোকসভায় মোদি সরকারের বিরুদ্ধে স্লোগান তোলেন বিরোধীরা। দফায় দফায় মুলতবি হয় অধিবেশন।
এদিন দুপুর ২ টায় লোকসভায় উপস্থাপণ করা হয় নীতি কমিটির রিপোর্ট। নীতি কমিটির রিপোর্ট নিয়ে আলোচনা শুরু হয় সংসদে। কংগ্রেসের অধীর রঞ্জন চৌধুরী থেকে শুরু করে তৃণমূল কংগ্রেসের এমপি সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় এথিক্স কমিটির এই রিপোর্টকে অগ্রহণযোগ্য বলে দাবি করেন। সংসদে মহুয়া মৈত্রকে কথা বলার সুযোগ দেয়ারও দাবি করা হয়। কিন্তু লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লা মহুয়া মৈত্রকে এদিন বলার সুযোগ দেননি।
পশ্চিমবঙ্গের কৃষ্ণনগরের সাংসদ মহুয়া মৈত্রর বিরুদ্ধে নীতি কমিটির রিপোর্টে দাবি করা হয়—তিনি যা করেছেন, তা কঠোর শাস্তিযোগ্য। তবে যাবতীয় অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে ইতিপূর্বে মহুয়া মৈত্র দাবি করেছিলেন-মোদি সরকারের সাথে শিল্পপতি গৌতম আদানির সম্পর্ক নিয়ে প্রশ্ন তোলার জন্যই তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে বিজেপি।
ঘুষ গ্রহণ অভিযোগের শুরু থেকে মহুয়ার পাশে ছিল ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস সহ সরকার বিরোধী একাধিক দল। শুক্রবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। সংসদ থেকে বহিষ্কারের পর সংসদের বাইরে জড়ো হন বিরোধী নেতারা। এ সময় মহুয়ার পাশে দেখা যায় সোনিয়া গান্ধী ও রাহুল গান্ধীকে।
মোদি সরকারকে আক্রমণ করে এ সময় মহুয়া বলেন, ‘আজ আমার সাংসদ পদ খারিজ। আমি নিশ্চিত কালই আমার বাড়িতে সিবিআই যাবে। আগামী ৬ মাস আমাকে হেনস্তা করবে। বিজেপির সাংসদ বলে রমেশ বিধুরির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। অথচ আমার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হল। আদানিকে বাঁচাতেই বিরোধীদের কণ্ঠস্বর দমানোর চেষ্টা।’
দীর্ঘ প্রায় এক ঘণ্টার আলোচনার পর নীতি কমিটির সুপারিশ মেনে এবং সংখ্যাগরিষ্ঠ এমপিদের সম্মতিতেই মহুয়া মৈত্রের এমপি পদ বাতিল করে দেয়া হয়।