অক্টোবর ৪, ২০২৩, ০৯:২৬ পিএম
পৃথিবীতে বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদানের জন্য প্রতি বছর নোবেল পুরস্কার দেয়া হয়। নিজেদের কতটা উৎসর্গ করে দিলে এই পুরস্কারে সম্মানিত হওয়া যায় তারই এক জলজ্যান্ত উদাহরণ, এ বছর পদার্থবিজ্ঞানে নোবেলবিজয়ী ফরাসিবিজ্ঞানী অ্যান ল’ হুইলেয়ার।
অ্যানের নোবেল পুরস্কার পাওয়ার মুহূর্তটি একটু আলাদাই বলা যায়। যখন নোবেল অ্যাকাডেমির কাছ থেকে ফোনকল আসে তখন তিনি সুইডেনের লান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস নিচ্ছিলেন। একাধিক ফোন করার পরও তাঁকে পাওয়া যায়নি। পরে ক্লাস বিরতিতে আবার ফোন এলে কলটি ধরেন তিনি। নোবেল কর্তৃপক্ষ কথা বলার জন্য সময় চাইলে অ্যান জানান তিনি শিক্ষার্থীদের পাঠদান করছেন তাই ব্যস্ত আছেন। দুই থেকে তিন মিনিট সময় দেয়ার অনুরোধ জানালে কথা বলার সম্মতি দেন অধ্যাপক অ্যান। তাকে অভিনন্দন জানিয়ে নোবেল পুরস্কার জয়ের সংবাদ দেয়া হয়। ধন্যবাদ জানিয়ে ফোনটি রেখে অ্যানি আবারও ক্লাস নেয়া শুরু করেন।
যেখানে সারাবিশ্ব নোবেল পুরস্কার ঘোষণার খবর নিয়ে আলোচনায় ব্যস্ত সে সময় নোবেলবিজয়ীই পুরস্কারের বিষয়টি দূরে রেখে শিক্ষার্থীদের গুরুত্ব দিয়েছেন। নির্ধারিত বিরতিতে খবরটি শোনার পর শ্রেণিকক্ষে ফিরে গিয়ে ক্লাস নিয়েছেন।
অ্যান ল`হুইলিয়ার সুইডেনের লান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে অ্যাটমিক ফিজিক্স বিষয়ের অধ্যাপক। তিনি অ্যাটোসেকেন্ড ফিজিক্স গ্রুপের প্রধান। যে শিক্ষকের কাছে শিক্ষার্থীদের পাঠদান নোবেল বিজয়ের চেয়ে বড় কাজ তাঁকে শ্রদ্ধা জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দ্য নোবেল প্রাইজ নামক ভেরিফাইড পেজে ঘটনাটির বর্ণনা তুলে ধরা হয়। অ্যান হুইলেয়ারের ফোনে কথা বলার একটি ছবি পোস্ট দিয়ে লেখা হয়, একজন নিবেদিত প্রাণ শিক্ষকের গল্প! পদার্থবিজ্ঞানে ২০২৩ সালের নোবেল পুরস্কার পাওয়া অ্যান এল’ হুলিয়ারকে তার শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আলাদা করা যায়নি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক কামরুল হাসান মামুন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে লিখেছেন-
‘ফরাসি পদার্থবিদ Anne L` Huillier ক্লাস নিচ্ছিলেন। নোবেল কমিটি থেকে ফোন আসে কয়েকবার ধরেননি। তারপর ফোন ধরে ক্লাসের বাইরে আসেন। ফোন শেষে আবার ক্লাস নেওয়া শুরু করেন। বড় মনের মানুষরাই বড় পুরস্কার পান।
তোমরা যারা নারীকে ঘরে বন্দি করতে চাও তারা দেখ এবং শিখ। নারীরা সুযোগ পেলে কত বড় কাজ করতে পারে। আরেক নারী Katalin Karikó এইবার মেডিসিনে নোবেল পুরস্কার পেয়েছে। যেই নারী গোটা মানবজাতিকে করোনার অতিমারি থেকে পৃথিবীর সব দেশের সব ধর্মের- গোত্রের মানুষকে রক্ষা করেছে।’
ইলেকট্রন গতিবিদ্যার গবেষণায় বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে মার্কিন বিজ্ঞানী পিয়েরে অ্যাগোস্টিনি, গাঙ্গেরির ফেরেন্স ক্রাউজের সাথে এবার নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন অ্যান ল’ হুইলিয়ার। ইলেকট্রন গতিবিদ্যায় পরীক্ষামূলক পদ্ধতি ব্যবহার করে কীভাবে আলোর অ্যাটোসেকেন্ড পালস তৈরি হয়, তাদের গবেষণায় সেটি দেখানো হয়েছে।
পঞ্চম নারী হিসেবে নোবেল পুরস্কার পাওয়া অ্যান ল`হুইলিয়ার গণমাধ্যমকে জানান, নোবেল অ্যাকাডেমি থেকে তিনি যখন ফোনকল পান তখন তিনি পাঠদানের মধ্যে ছিলেন। ফোনকলটি তার ক্লাস শেষ করার বিষয়টি ‘কঠিন’ করে দেয়। আমি খুবই আপ্লুত। খুব বেশি সংখ্যক নারী এ পুরস্কার পায় না। একারণে এটা আমার জন্য খুবই বিশেষ একটি পুরস্কার।
ব্যক্তিজীবনে দুই পুত্রের জননী অ্যান ল`হুইলিয়ার খুবই সাধারণ একটি পরিবার ও সন্তানঘেরা জীবন যাপন করেন। শিক্ষক-গবেষক-নোবেলবিজয়ী দারুণ এই নারী তরুণদের উদ্দীপনায় জুগিয়েছেনও সহজ ভাষায়। তিনি বলেন, কেউ যদি বিজ্ঞানের ভুবনে তাদের ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে চায় তাহলে তাদের উচিত এটা নিয়ে ‘স্রেফ এগিয়ে যাওয়া’।