ছবি: সংগৃহীত
মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস থেকে অপরিহার্য নয়, এমন কর্মী ও তাদের স্বজনদের সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। এরই মধ্যে ইরাকের রাজধানী বাগদাদে অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস থেকে কর্মীদের সরিয়ে নেওয়ার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এছাড়া বাহরাইন, কুয়েত এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের কর্মীদের সরিয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়া শিগগিরই শুরু হবে বলে জানানো হয়েছে। এর পাশাপাশি ইরাকি কুর্দিস্তানের এরবিলে অবস্থিত মার্কিন কনস্যুলেট থেকেও কর্মী সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ আসতে যাচ্ছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র।
একাধিক মার্কিন কর্মকর্তা এবং এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনকে এ তথ্য জানিয়েছে। আকস্মিক এই সিদ্ধান্তের কারণ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে সংবাদমাধ্যমটি। তবে এক প্রতিরক্ষা কর্মকর্তার বরাতে সিএনএন জানিয়েছে, মার্কিন সেন্ট্রাল কমান্ডের পর্যবেক্ষণ বলছে, মধ্যপ্রাচ্যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার কারণেই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
গতকাল বুধবার এক অনুষ্ঠানে যোগ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন, ‘দূতাবাসের অপরিহার্য নয় এমন কর্মীদের সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। নিরাপত্তার স্বার্থে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কারণ, যেকোনো সময় মধ্যপ্রাচ্য তাদের জন্য বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে। পরিস্থিতি কেমন হয়, তা-ই এখন পর্যবেক্ষণের বিষয়।’
এর আগে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা সিএনএনকে বলেছিলেন, ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দেশ-বিদেশে মার্কিন নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে সবসময় বদ্ধপরিকর। সেই লক্ষ্যেই আমাদের সব দূতাবাসে জনবল কাঠামো নিয়মিত পর্যালোচনা করা হয়। সর্বশেষ মূল্যায়নের ভিত্তিতে ইরাকে আমাদের মিশনের আকার কমানো হয়েছে। তাই অপরিহার্য নয় এমন কর্মীদের সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে।’
পরে গতকাল রাতে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাদের ভ্রমণ পরামর্শ হালনাগাদ করে জানায়, ‘আঞ্চলিক উত্তেজনা বৃদ্ধির’ কারণে অপ্রয়োজনীয় সরকারি কর্মীদের সরে যেতে বলা হয়েছে। এছাড়া মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ কুয়েত, বাহরাইনসহ বিভিন্ন দেশে মোতায়েন মার্কিন সামরিক কর্মীদের পরিবারকে স্বেচ্ছায় প্রস্থানের অনুমতি দিয়েছেন বলে জানিয়েছে রয়টার্স।
এই কর্মী-সরানোর সিদ্ধান্ত এমন এক সময় নেওয়া হলো, যখন ইরান ও ইসরায়েলকে ঘিরে মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা নতুন করে তীব্র হয়ে উঠেছে। একই সঙ্গে ট্রাম্প প্রশাসনও ইরানের সঙ্গে একটি নতুন পারমাণবিক চুক্তির চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে ইরানের সঙ্গে চুক্তির বিষয়ে এখন আশা হারিয়ে ফেলেছেন ট্রাম্প।
নিউ ইয়র্ক পোস্টের একটি পডকাস্ট সাক্ষাৎকারে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প জানান, ইরানের সঙ্গে চুক্তি হওয়ার সম্ভাবনায় তিনি আগের চেয়ে অনেক কম আত্মবিশ্বাসী। তিনি বলেন, ‘তারা (ইরান) সময়ক্ষেপণ করছে বলে মনে হচ্ছে। আমি এখন আগের চেয়ে অনেক কম আত্মবিশ্বাসী।’ ট্রাম্প বলেন, ‘তাদের আচরণে কিছু একটা পরিবর্তন এসেছে। এই চুক্তি থেকে আমরা আরও দূরে সরে যাচ্ছি বলে আমার ধারণা তীব্র হচ্ছে।’
এর আগে সিএনএন জানিয়েছিল, যুক্তরাষ্ট্রের কাছে এমন গোয়েন্দা তথ্য আছে যে, ইসরায়েল ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর ওপর হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে। দুই মার্কিন গোয়েন্দা সূত্র জানায়, ইসরায়েল কিছু সামরিক পদক্ষেপ নিয়েছে—যেমন বিমান হামলার অনুশীলন সম্পন্ন এবং অস্ত্র সরানোর প্রস্তুতি—যা ইঙ্গিত দেয় তারা বড় ধরনের পদক্ষেপের দিকে এগোচ্ছে। তবে, তারা ইরানে হামলা চালাবে এমন নিশ্চিত কোনো তথ্য নেই বলেও জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
অন্যদিকে, ইরানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আজিজ নাসিরজাদেহ বুধবার বলেন, যদি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পারমাণবিক আলোচনা ব্যর্থ হয় এবং সংঘাত বেধে যায়, তবে যুক্তরাষ্ট্রকে অবশ্যই এই অঞ্চল ছাড়তে হবে। তিনি ইরানের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা ইরনাকে বলেন, ‘যদি সংঘাত শুরু হয়, প্রতিপক্ষকে (যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল কিংবা উভয়) বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির মুখে পড়তে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিরোধী পক্ষের কিছু কর্মকর্তা প্রকাশ্যে হুমকিমূলক মন্তব্য করছেন—যেনো চুক্তি না হলে যুদ্ধ অনিবার্য। সেই পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো বিকল্প থাকবে না, কারণ তাদের সব ঘাঁটি আমাদের হামলার আওতায় রয়েছে, এবং আমরা হামলা চালাতে দ্বিধা করব না।’
এই পাল্টাপাল্টি হুমকি-ধমকির আবহেই মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ছে, যার জেরে যুক্তরাষ্ট্র এখন স্বদেশি কর্মীদের নিরাপত্তার প্রশ্নে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিচ্ছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।