এএফপির এক্সপ্লেইনার

ইরানসহ ১২টি দেশের যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণে ট্রাম্পের নিষেধাজ্ঞা! কেন?

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

জুন ৫, ২০২৫, ০৪:১২ পিএম

ইরানসহ ১২টি দেশের যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণে ট্রাম্পের নিষেধাজ্ঞা! কেন?

ছবি: সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরান, আফগানিস্তানসহ ১২টি দেশের ওপর নতুন করে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই সিদ্ধান্ত শুধুমাত্র অভিবাসন নীতির দৃষ্টিকোণ থেকে নয়, বরং রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক দিক থেকেও গভীরভাবে বিশ্লেষণযোগ্য।

এ নিয়ে একটি বিশ্লেষণমূলক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম এএফপি। 

নিষেধাজ্ঞার আওতায় যে ১২ দেশ

নতুন এ নিষেধাজ্ঞার আওতায় রয়েছে আফগানিস্তান, মিয়ানমার, চাদ, কঙ্গো প্রজাতন্ত্র, ইকুয়েটোরিয়াল গিনি, ইরিত্রিয়া, হাইতি, ইরান, লিবিয়া, সোমালিয়া, সুদান ও ইয়েমেনের নাগরিকেরা।

ট্রাম্প আরও সাতটি দেশের ওপর আংশিক ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন। দেশগুলো হলো বুরুন্ডি, কিউবা, লাওস, সিয়েরা লিওন, টোগো, তুর্কমেনিস্তান ও ভেনেজুয়েলা। তবে এসব দেশের নাগরিকদের জন্য কিছু ‘সাময়িক কাজের ভিসা’ দেওয়া হবে।

হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, দুটি নিষেধাজ্ঞাই আগামী সোমবার, ০৯ জুন থেকে কার্যকর হবে। 

নিষেধাজ্ঞার পেছনের মূল কারণ

কলোরাডো হামলা ও নিরাপত্তার অজুহাত: ট্রাম্প প্রশাসন দাবি করেছে, কলোরাডোতে ইহুদিদের একটি র্যালিতে পেট্রলবোমা হামলা যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধভাবে অবস্থানরত এক বিদেশির দ্বারা সংঘটিত হওয়ায় নতুন এ নিষেধাজ্ঞা জরুরি হয়ে পড়ে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ভিডিও বার্তায় একে “চরম বিপদ” হিসেবে উল্লেখ করেন।

নাগরিক নিরাপত্তার অগ্রাধিকার: ট্রাম্প বলেন, যেসব দেশ তাদের নাগরিকদের সঠিকভাবে পরীক্ষা বা স্ক্রিনিং করতে ব্যর্থ, সেসব দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসী গ্রহণ যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তার জন্য হুমকি। তিনি একে ২০১৭ সালের প্রথম মেয়াদের মুসলিমপ্রধান দেশগুলোর ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞার ‘পুনরাবৃত্তি’ বলে উল্লেখ করেন।

রাজনৈতিক বার্তা ও ‘অভিবাসন-বিরোধী’ অবস্থান: ট্রাম্পের এই পদক্ষেপ তার অভিবাসন-নিরপেক্ষ নয় বরং অভিবাসন-বিরোধী অবস্থানের সুস্পষ্ট প্রকাশ। এটি তাঁর ভোটব্যাংকের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ এবং অভ্যন্তরীণভাবে “জাতীয়তাবাদী” রাজনৈতিক বার্তা পাঠানোর একটি কৌশল। 

বিরোধ ও বিতর্ক

মিসরের নাম নেই: সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিরোধ এখানেইযে হামলার দোহাই দিয়ে নিষেধাজ্ঞা, তার সন্দেহভাজন মিসরের নাগরিক। অথচ নিষেধাজ্ঞার তালিকায় মিসরের নাম নেই। এটি স্পষ্ট করে দেয়, এই পদক্ষেপ কেবল নিরাপত্তাজনিত নয়, বরং রাজনৈতিকভাবে বেছে নেওয়া দেশগুলোর ওপর চাপ প্রয়োগের মাধ্যম।

বেছে বেছে দেশ নির্বাচন: তালিকায় বেশিরভাগই দুর্বল বা গৃহযুদ্ধপীড়িত দেশযেমন ইয়েমেন, সোমালিয়া, সুদান, চাদ। এতে যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক ও মানবিক নীতির প্রশ্ন উঠছে। কেননা এসব দেশের অনেকেই শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় চায়।

আইনি চ্যালেঞ্জের সম্ভাবনা: এই নিষেধাজ্ঞা আগের নিষেধাজ্ঞাগুলোর মতোই আদালতে চ্যালেঞ্জ হতে পারে। ট্রাম্প প্রশাসনের বহু নীতিই ইতিপূর্বে আদালতে আটকে গেছে। 

বিশ্বকাপ ও অলিম্পিক প্রশ্নে দ্বৈতনীতি

২০২৬ সালের ফুটবল বিশ্বকাপ ও ২০২৮ সালের অলিম্পিক সামনে রেখে ট্রাম্প প্রশাসন স্পষ্ট করেছে, খেলোয়াড়েরা এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়বে না। অর্থাৎ একদিকে অভিবাসন নিষিদ্ধ, অন্যদিকে খেলার স্বার্থে কিছু ছাড়এটি দ্বৈতনীতি এবং এর মাধ্যমে বোঝা যায় নিষেধাজ্ঞার উদ্দেশ্য পুরোপুরি নিরাপত্তা নয়, বরং রাজনৈতিকভাবে সুবিধাজনক ক্ষেত্রগুলো ছাড়া দেওয়া। 

হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের জন্য নতুন বাধা

একইসঙ্গে ট্রাম্প হার্ভার্ডসহ অন্যান্য উচ্চতর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভিসা প্রদানে বিধিনিষেধ আরোপ করেছেন। এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চশিক্ষায় বিদেশিদের অংশগ্রহণ ব্যাহত হবে। 

এএফপির প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ট্রাম্পের নতুন ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা কেবল নিরাপত্তার দোহাই দিয়ে গ্রহণ করা একটি অভিবাসন-নিয়ন্ত্রণমূলক পদক্ষেপ নয়, বরং এটি এক গভীর রাজনৈতিক কৌশলের অংশ। নির্বাচন পরবর্তী সময়েও তার ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতির প্রতিচ্ছবি এতে স্পষ্ট। কলোরাডোর ঘটনার জেরে একটি নির্দিষ্ট দেশের নাগরিক অভিযুক্ত হলেও তার নাম নিষেধাজ্ঞা তালিকায় না থাকা এই সিদ্ধান্তের পক্ষপাতদুষ্টতা ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যকে স্পষ্টভাবে সামনে আনে।

এটি আন্তর্জাতিক পরিসরে যুক্তরাষ্ট্রের ভাবমূর্তির ওপরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে এবং বৈশ্বিক প্রতিক্রিয়ায় নানা উত্তাপ সৃষ্টি হতে পারে, যেমনটা ইতিমধ্যে ভেনেজুয়েলার পাল্টা বিবৃতিতে দেখা গেছে।

Link copied!