অটিজম যাদের পথচলা থামাতে পারেনি

আমাদের আশেপাশের কিছু মানুষকে বাকিদের থেকে আলাদা করে দেয় অটিজম, সবাই তাদের ভিন্ন দৃষ্টিতে দেখে।  তবে আমাদের মনে রাখা উচিত, অটিস্টিক হওয়া মানেই তার জীবন থমকে যাওয়া নয়। ইতিহাসে এমন বহু বিখ্যাত মানুষ রয়েছেন,যারা ‘অটিজম স্পেকট্রাম’ এ আক্রান্ত ছিলেন। আগে অটিজম নিয়ে সচেতনতা তেমন ছিল না। ফলে সে সময়ে হয়তো জানা যায়নি  কিন্তু পরবর্তীতে গবেষকেরা বুঝতে পেরেছেন, এই ব্যক্তিরা অটিস্টিক ছিলেন। তবে অটিজম তাদের পথচলা থামাতে পারেনি। জেনে নেওয়া যাক তেমনই পাঁচ জনের কথা।

অ্যালবার্ট আইনস্টাইন

কে না চেনেন আইনস্টাইনকে। বিজ্ঞানের জগতে সবচেয়ে বিখ্যাত নামের প্রথম সারিতে। কিন্তু কত জন জানেন যে তার আচরণের কিছু দিক মিলে যায় অটিস্টিকদের সঙ্গে। বড় বয়সেও সামাজিক মেলামেশা নিয়ে অস্বস্তি ছিল আইনস্টাইনের। ছোটবেলায় কথা বলার অভ্যাস হতেও সময় লেগেছে। কথা বলতে শুরু করার পরে বারবার একই বাক্য বলে ফেলার মতো অভ্যাস দেখা দেয়। এ সব দিক লক্ষ্য করেই বিজ্ঞানীরা মনে করেন, তিনি অটিস্টিকই ছিলেন।

উইলিয়াম বাটলার ইয়েটস্

বিখ্যাত এই কবিকে চেনে গোটা বিশ্ব। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সঙ্গেও তার আদান-প্রদান নিয়ে চর্চা হয়েছে অনেক। কবির জীবনী যারা লিখেছেন, তারা সকলে মানেন না অটিজিম সংক্রান্ত ব্যাখ্যা। তবে মনোবিদদের অনেকের বক্তব্য, ইয়েটসের সামাজিক আচরণ ছিল অটিস্টিকদের মতোই। স্কুলে তাঁকে হেনস্থাও হতে হয়েছে সে কারণে। কবির প্রেমিক সত্ত্বা নিয়ে যত চর্চা হয়েছে, ততই ধরা পড়ে তিনি আচরণের দিক থেকে কিছু ক্ষেত্রে আর পাঁচ জনের চেয়ে ছিলেন আলাদা।

ল্যুইস কারল

‘অ্যালিস ইন ওয়ান্ডারল্যান্ড’ ছোটবেলায় পড়েছেন বহু জনেই। লেখকের নামও জানা। ব্যক্তি ল্যুইস কেমন ছিলেন? জন সমক্ষে নিজের মনের ভাব প্রকাশ করতে লেখকের অস্বস্তি ছিল, তা অনেকেরই জানা। সামাজিক রীতি-নিয়ম থেকেও দূরত্বই বজায় রাখতেন তিনি। ছোট মেয়েদের সঙ্গে মেলামেশা করতেন বলে নিন্দা করেন অনেকে। তবে মানুষের আচরণ নিয়ে গবেষণারতরা বলেন, সমবয়সিদের ভঙ্গির সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারতেন না তিনি। সে কারণেই শিশুদের প্রতি আকৃষ্ট হতেন। এ-ও অটিজমের একটা গুরুত্বপূর্ণ দিক।

মাইকেল এঞ্জেলো

তার জীবন নিয়ে যে অনেক তথ্য পাওয়া যায়, তেমন নয়। তবে মাইকেল এঞ্জেলোর আচরণ যে অটিস্টিক স্পেকট্রামের মানুষদের সঙ্গে মেলে, তা প্রথম চোখে পড়ে তার ভাস্কর্য নিয়ে গবেষণারত কয়েকজন শিল্পীর। মুহূর্তে বদলে যেত তার মেজাজ। নিয়মের ব্যাপারেও ছিলেন কড়া। এক ধরনের কাজেই মন দিতে পারতেন এক সময়ে। আর সামাজিক মেলামেশায় অসুবিধা তো ছিলই। সব দিক একসঙ্গে দেখেন মনোবিদেরা।

চার্লস ডারউইন

একা থাকতে ভালবাসতেন ডারউইন। বিজ্ঞান সংক্রান্ত গবেষণায় ঝোঁক ছিল। তবে সে দিকেই আটকে রাখতেন মন। নানা বিষয়ে একসঙ্গে মন দিতে চাইতেন না। যেমনটা হয় অটিস্টিক মানুষদের। ভিড়ের মধ্যে থাকাও পছন্দের ছিল না। কথা বলতে ভাল লাগত না। তাই মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার অন্য পথ খুঁজতেন। যেমন চিঠি লিখে যোগাযোগ করতেন অনেকের সঙ্গে।

ইতিহাসের পাতায় পরিচিত আরও বহু মানুষ আছেন, যারা অটিস্টিক ছিলেন বলে মনে করেন মনোবিদেরা। আচরণ অন্য রকম হওয়া মানেই সব কাজে অক্ষম, এমন তো নয়!

• বিষয় :
• অটিস্টিক
• অটিজম