দুই কোরিয়ার কড়া নিরাপত্তাধীন সীমান্ত এলাকা দিয়ে উত্তর কোরিয়ায় ঢুকে পড়ে মার্কিন এক নাগরিক আটক হয়েছেন। বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, অনেকটা হাসতে হাসতে সীমান্তের দিকে যাচ্ছিলেন তিনি।
যুক্তরাষ্ট্রের ওই নাগরিক সীমান্ত এলাকার পানমুনজম গ্রামে ঘুরতে গিয়েছিলেন। ওই সময় সীমান্ত পেরিয়ে বিনা অনুমতিতেই তিনি উত্তর কোরিয়ায় ঢুকে পড়ে আটক হন।
এভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কোনো নাগরিক অনুমতি না নিয়ে উত্তর কোরিয়ায় অনুপ্রবেশ করায় আটক হন। জাতিসংঘ ও দক্ষিণ কোরিয়ার সরকার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
উত্তর কোরিয়ায় অনুপ্রবেশকারী কে এই মার্কিন সেনা?
উত্তর কোরিয়ায় অনুপ্রবেশকারী ওই মার্কিন নাগরিকের নাম ট্র্যাভিস কিং। ২৩ বছর বয়সী কিং একজন প্রাইভেট সেকেন্ড ক্লাস পদমর্যাদার সেনা সদস্য বলে জানিয়েছেন কোরিয়ায় মার্কিন সামরিক বাহিনীর এক মুখপাত্র।
এদিকে, জাতিসংঘ তাদের নিজস্ব টুইটারে দেওয়া এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ‘আমরা ধারণা করছি তিনি বর্তমানে উত্তর কোরিয়ার হেফাজতে আছেন এবং এই ঘটনার সমাধানে আমরা কোরিয়ান পিপলস আর্মির (কেপিএ) সাথে কাজ করছি।’
মার্কিন প্রতিরক্ষা দফতর বলেছে যে, তারা তাদের সেনা আটকের ঘটনায় বেশ উদ্বিগ্ন এবং তারা এই "পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ ও তদন্ত করছে"।
মার্কিন কর্মকর্তারা সিবিএস নিউজকে জানিয়েছেন, কিং সম্প্রতি দক্ষিণ কোরিয়ায় একটি কারাগারে আটক ছিলেন। শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে তাকে যুক্তরাষ্ট্রে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছিল।
এজন্য এক সপ্তাহ আগে তাকে দক্ষিণ কোরিয়ার সেনা ঘাঁটি ক্যাম্প হামফ্রেস থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু তিনি যুক্তরাষ্ট্রে ফেরার বিমানে আর ওঠেননি। দক্ষিণ কোরিয়ার ইনচেন বিমানবন্দরের কাস্টমস থেকেই হঠাৎ গায়েব হয়ে যান।
তিনি কোনোভাবে টার্মিনাল থেকে বেরিয়ে উত্তর কোরিয়া এবং দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যে জয়েন্ট সিকিউরিটি এরিয়ায় (জেএসএ) সীমান্ত সফরে যোগ দেন। যা বিমানবন্দর থেকে প্রায় ৫৪ কিলোমিটার দূরে।
ওই সফরের সময়ই সীমান্ত অতিক্রম করেন তিনি। এর পর থেকে তার সঙ্গে কারও কোনও যোগাযোগ হয়নি।
মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সেক্রেটারি লয়েড অস্টিন বলেছেন, তারা এই ঘটনা নীবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন।
কোরিয়ায় নিযুক্ত মার্কিন বাহিনী ঘটনাটি তদন্ত করছে বলে জানিয়েছেন একজন সিনিয়র মার্কিন কমান্ডার। উত্তর কোরিয়ার সাথে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কে উত্তেজনার মধ্যেই এই সীমান্ত অতিক্রমের বিষয়টি সামনে এলো।
কোরীয় উপদ্বীপে সাম্প্রতিক উত্তেজনা বাড়ার পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন প্রশাসনের জন্য এই ঘটনা সমস্যা তৈরি করতে পারে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, ওই ব্যক্তি তাদের ৪৩ জনের ট্যুর গ্রুপের একজন সদস্য ছিলেন। সীমান্তে পৌঁছাতেই তিনি কিছু ভবনের মধ্যে দিয়ে উত্তর কোরিয়ার সীমান্তের দিকে দৌড়ে যান এবং "জোরে `হা হা হা` করে হাসতে থাকেন"।
প্রত্যক্ষদর্শী ওই ব্যক্তি আরও বলেন, “আমি প্রথমে ভেবেছিলাম তিনি হয়তো রসিকতা করছেন, কিন্তু যখন তিনি আর ফিরে আসেননি, আমি বুঝতে পারলাম এটি নিছক কোন রসিকতা ছিল না, এবং তারপরে সবাই এই ঘটনায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে।"তবে তিনি যখন সীমান্ত পার হচ্ছিলেন তখন ওইপারে উত্তর কোরিয়ার সেনাদের দৃশ্যমান দেখা যায়নি বলে তিনি জানান।