তাকে ধরিয়ে দিলে বা মেরে ফেলে যুক্তরাষ্ট্র আপনাকে পুরস্কার দেবে এক কোটি ডলার। এমনই ক্ষতিকর ব্যক্তিটি হলেন মিশরের স্পেশাল ফোর্সের সাবেক কর্মকর্তা ও আল কায়েদার গুরুত্বপূর্ণ সদস্য সায়েফ আল আদেল। জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে জানা গেল আদেলই এখন আন্তর্জাতিক জঙ্গি গোষ্ঠী আল কায়েদার ‘অপ্রতিদ্বন্দ্বী’ নেতা।
আল কায়েদার নেতৃবৃন্দকে অনুসরণ করতেন এফবিআইয়ের এমন একজন সাবেক গোয়েন্দা আলি সুফানের তৈরি করা প্রোফাইল থেকে জানা গেছে, আরবি ‘সায়েফ আল আদেল’ নামের অর্থ ‘ন্যায়ের তরবারি’, আর এটি আদেলের আসল নাম না; তার আসল নাম মোহাম্মদ সালাউদ্দিন জিদান।
একসময় ওসামা বিন লাদেনের প্রধান দেহরক্ষী এবং জঙ্গিদের জ্যেষ্ঠ প্রশিক্ষক ছিলেন আদেল। আল কায়েদার কার্যক্রম বিষয়ক বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, ১৯৮১ সালে জঙ্গি হিসেবে আদেল তার ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন, ওই সময় তিনি মিশরীয় প্রেসিডেন্ট আনোয়ার আল সাদাতের হত্যাকাণ্ডে জড়িত ছিলেন বলে সন্দেহ করা হয়।
কায়রোতে সামরিক বাহিনীর প্যারেড চলাকালে টেলিভিশন সম্প্রচারের মধ্যেই আনোয়ার সাদাতকে হত্যা করেছিল মিশরীয় সামরিক বাহিনীর ইসলামপন্থি সেনারা।
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের জিহাদ বিষয়ক বিশেষজ্ঞ এলিজাবেথ ক্যান্ডল বলেন, “সায়েফ আল আদেলের পেশাদার সামরিক ব্যাকগ্রাউন্ড এবং ৯/১১ এর আগে থেকেই আল কায়েদার সামরিক কমিটির প্রধান হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ অভিজ্ঞতা থাকায় তার আল কায়েদার সামগ্রিক নেতৃত্ব গ্রহণ করার মতো জোরালো অবস্থান আছে।”
২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর, যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক শহরের বিশ্ব বাণিজ্য কেন্দ্রের আকাশচুম্বি ভবন টুইন টাওয়ারে আল কায়েদা সবচেয়ে আলোড়ন তোলা হামলাটি চালিয়েছিল । দুটি যাত্রীবাহী উড়োজাহাজ দিয়ে চালানো ওই ভয়াবহ হামলায় প্রায় ৩ হাজার মানুষ নিহত হয়েছিল। তারপর থেকে সংগঠনটি অনেকটা বহু কেন্দ্রে বিভক্ত হয়ে পড়ে, সায়েফ আল আদেল সেই আল কায়েদারই দায়িত্ব নিয়েছেন।
এর আগে তানজানিয়া ও কেনিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসে আল কায়েদার বোমা হামলায় ২২৪ জন নিহত ও ৫ হাজারের বেশি আহত হয়। এ ঘটনার জন্য ১৯৯৮ সালের নভেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল গ্রান্ড জুরি আদেলকে অভিযুক্ত করে।
যুক্তরাষ্ট্রের তদন্তকারীদের তথ্য অনুযায়ী, আফ্রিকায় চালানো হামলাগুলোর বাইরে তিনি বিভিন্ন প্রশিক্ষণ শিবির পরিচালনা করতেন এবং ২০০২ সালে পাকিস্তানে মার্কিন সাংবাদিক ড্যানিয়েল পার্লের হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে তার যোগসূত্র ছিল।
আদেল এখন ইরান থেকে তার কার্যক্রম চালাচ্ছেন বলে ধারণা করছে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। আদেল বিষয়ে তথ্য দেওয়ার জন্য এক কোটি ডলার পুরস্কার দেওয়ার প্রস্তাব দিয়ে রেখেছে মন্ত্রণালয়টি। আদেল ‘আল কায়েদার নেতৃত্ব পরিষদ’ এর সদস্য এবং সংগঠনটির সামরিক কমিটির প্রধান বলে জানিয়েছে তারা।
বুধবার জাতিসংঘে নিযুক্ত ইরানি মিশন টুইটারে একটি বার্তা পোস্ট করে আদেলের ইরানে থাকার কথা অস্বীকার করেছে।
বার্তায় তারা বলেছে, “এটি লক্ষণীয় যে তথাকথিত নবনিযুক্ত আল কায়েদা নেতার ঠিকানাটি ভুল। এই ভুল তথ্য সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের উদ্যোগকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে।”
মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ‘রিওয়ার্ড ফর জাস্টিস’ কর্মসূচির ওয়েবসাইট থেকে জানা যায়, আফ্রিকার ওই বোমা হামলার পর মিশরীয় সামরিক বাহিনীর এই সাবেক লেফটেন্যান্ট কর্নেল ইরানের দক্ষিণপূর্বাঞ্চলে চলে যান, সেখানে তিনি দেশটির রেভল্যুশনারি গার্ড কোরের দেওয়া নিরাপত্তার মধ্যে বসবাস করছেন।
২০০৩ সালের এপ্রিলে আদেল ও অন্য আল কায়েদা নেতাদের গৃহবন্দি করেছিল ইরান। পরে ইয়েমেনে অপহৃত ইরানি এক কূটনীতিকের মুক্তির বিনিময়ে তাকে ও আরও চারজনকে ছেড়ে দেয় তেহরান।
২০২২ সালে জুলাই মাসে কাবুলে যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় আয়মান আল জাওয়াহিরি নিহত হয়েছে এই বিশ্বাস থেকেই উত্তরাধিকারী কে হবে- এই প্রশ্নের জন্ম হয়।
জাওয়াহিরির মৃত্যুর পর সতর্কভাবে প্রাণঘাতী অভিযানের পরিকল্পনা ও জঙ্গি গোষ্ঠীটিকে পরিচালনা করতে একজন কৌশলী নেতা বেছে নিতে চাপে আছে আল কায়েদা- এমনটাই মনে করছেন আল কায়েদা বিষয়ক বিশেষজ্ঞরা। ২০১১ সালে প্রতিষ্ঠাতা ওসামা বিন লাদেনের মৃত্যুর পর এটাই ছিল সংগঠনটির জন্য সবচেয়ে বড় আঘাত যা থেকে তারা এখনও বের হতে পারেনি।
বিশ্বব্যাপী জ্বালাময়ী ভিডিও বক্তৃতা ছড়িয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে হুমকি দিয়ে জাওয়াহিরি তার হাই প্রোফাইল বজায় রেখে চললেও ওই বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, আদেল হামলার পরিকল্পনা করেন আড়াল থেকে এবং তিনি আল কায়েদাকে বিশ্বের সবচেয়ে প্রাণঘাতী জঙ্গি গোষ্ঠীতে পরিণত করতে সাহায্য করেছেন।
আল কায়েদার ঝুঁকি নিয়ে জাতিসংঘের পর্যালোচনা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে: “নভেম্বর ও ডিসেম্বরের আলোচনাগুলোতে অনেক সদস্য রাষ্ট্র এই ধারণাটি গ্রহণ করেছে যে সায়েফ আল আদেল ইতিমধ্যে গোষ্ঠীটির আসল ও অপ্রতিদ্বন্দ্বী নেতা হিসেবে কাজ করছেন।”