জন্মহার বাড়াতে চীনে কমছে বিয়ের খরচ

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

মার্চ ৯, ২০২৩, ০৯:১০ পিএম

জন্মহার বাড়াতে চীনে কমছে বিয়ের খরচ

চীনের জনসংখ্যার হার দ্রুত কমে যাওয়ায় দেশটির সরকার প্রথাগত বিয়ের খরচ কমানোসহ নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। জন্মহার বাড়ানোর জন্য এর আগেও দেশটিতে নেওয়া হয় নানা উদ্যোগ।  

বুধবার (৮ মার্চ) এনডিটিভির এক প্রতিবেদনে জানা যায়, চীনে ঐতিহ্যবাহী বিয়ের ক্ষেত্রে উপহার বা কাইলি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বিয়ের সময় বরপক্ষ উপহার হিসেবে কনেপক্ষকে দিয়ে থাকে। ২০২০ সালে টেনসেন্ট নিউজ ১ হাজার ৮৪৬ জনের ওপর একটি সমীক্ষা চালিয়েছে। ওই সমীক্ষায় দেখা গেছে, অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে প্রায় তিন-চতুর্থাংশ বিয়ের ক্ষেত্রে এ প্রথা মেনে চলে। এসব বিয়েতে পরিবারগুলো উপহার হিসেবে হাজার হাজার ডলার প্রত্যাশা করে।

গত জানুয়ারিতে সেন্ট্রাল হেবেই প্রদেশে বিয়ের খরচের এ প্রথা ভাঙার উদ্যোগ শুরু হয়। এর মধ্যে কাইলি ও ওয়েডিং গেমও অন্তর্ভুক্ত। উপকূলীয় জিয়াংসু প্রদেশের একটি কাউন্টিতে ‘সবচেয়ে সুন্দর শাশুড়ি’ খোঁজার জন্য গত মাসে একটি প্রচারণা শুরু হয়। যিনি বিয়েতে খুব বেশি অর্থ নেবেন না, তিনিই হবেন ‘সবচেয়ে সুন্দর শাশুড়ি’।

গত ফেব্রুয়ারিতে জিয়াংজির একটি শহরে অবিবাহিত নারীদের একটি চিঠিতে স্বাক্ষর করানো হয়েছে। এ স্বাক্ষরের মাধ্যমে তারা বিয়েতে বিপুল পরিমাণ কাইলি না চাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

একই প্রদেশের রাজধানীতে বুধবার (৮ মার্চ) আন্তর্জাতিক নারী দিবসে একটি গণবিয়ের আয়োজন হয়েছে। এ বিয়ের স্লোগান ‘আমরা যৌতুক নয়, কনের সুখ চাই’।

চীনে জন্মহার বাড়াতে আরও নানা পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। কর্মকর্তারা নবজাতকের জন্য ভর্তুকি বৃদ্ধি করছে, কর্মীদের বিয়ের জন্য ছুটি দেয়ার প্রচারণা চালাচ্ছে এবং অবিবাহিত দম্পতির সন্তানদের নিবন্ধনের অনুমতি দিতে নিয়মের কঠোরতা শিথিল করছে।

তবে এ ধরনের পদক্ষেপগুলো পুরুষদের পক্ষে যাওয়ার প্রবণতা রয়েছে। দেশটির প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং নারীদের রাজনীতির শীর্ষে ক্ষমতার বাইরে রেখে প্রথাগত ভূমিকায় ফিরে যেতে উৎসাহিত করেন।

যুক্তরাষ্ট্রের চ্যাপেল হিলে ইউনিভার্সিটি অব নর্থ ক্যারোলাইনার জনসংখ্যা বিষয়ের অধ্যাপক ফেইনিয়ান চেন বলেন, লিঙ্গবৈষম্যের মতো গভীর বিষয়গুলোর সমাধান না করা পর্যন্ত ক্রম হ্রাসমান জন্মহার আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনার আশা খুবই কম। 

তিনি আরও বলেন, নারীদের এখনও প্রাথমিক পরিচর্যাকারী হিসেবে ভাবা হয়। এছাড়া অধিক সন্তান ধারণের বা সন্তান ধারণের খরচও অনেক বেশি।

চীনের ন্যাশনাল ব্যুরো অব স্ট্যাটিস্টিকস এক সংবাদ সম্মেলনে জানায়, দেশটিতে বর্তমান জনসংখ্যা ১৪১ কোটি ১৮ লাখ। গত বছরের তুলনায় যা ৮ লাখ ৫০ হাজার কম। এর কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হচ্ছে, জন্মহার কমে যাওয়া। দেশটিতে বর্তমানে প্রতি এক হাজারে জন্মহার মাত্র ৬ দশমিক ৭৭ শতাংশ।

এর আগে ১৯৬১ সালে চীনে কয়েক বছরব্যাপী মহাদুর্ভিক্ষের শেষ বছরে চীনে শেষবারের মতো জনসংখ্যা কমেছিল। এরপর ৬১ বছর পেরিয়ে ২০২২ সালে এসে দেশটির জনসংখ্যা কমল।

এই পরিস্থিতিতে স্থানীয় সরকার কর্তৃপক্ষকে জন্মহার বাড়াতে উৎসাহ দিতে ‘সাহসী ও সৃজনশীল’ পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন চীনের পরিবার উন্নয়ন সংস্থার প্রধান।

চীনের জনসংখ্যার হার কমে যাওয়ায় শ্রমশক্তিও সংকুচিত হয়ে পড়ছে। ভোক্তাদের চাহিদা কমে যাচ্ছে সাথে স্বাস্থ্যসেবার ওপর বাড়তি চাপের সৃষ্টি হচ্ছে।

Link copied!