বায়ুমণ্ডলে গ্রিনহাউজ গ্যাস নিঃসরণের সর্বোচ্চ রেকর্ড

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

অক্টোবর ২৬, ২০২১, ০৩:৩৮ এএম

বায়ুমণ্ডলে গ্রিনহাউজ গ্যাস নিঃসরণের সর্বোচ্চ রেকর্ড

২০২০ সালে বৈশ্বিক বায়ুমণ্ডলে রেকর্ড পরিমাণে গ্রিনহাউস গ্যাসের নিঃসরণ হয়েছে। জলবায়ু বিষয়ক কপ-২৬ সম্মেলনের মাত্র একদিন আগে সোমবার (২৫ অক্টোবর) এক সতর্কবার্তায় জাতিসংঘের জলবায়ু বিষয়ক সংস্থা ওয়ার্ল্ড মেটেরোলজিক্যাল অর্গানাইজেশন (ডব্লিউএমও) এ তথ্য জানিয়েছে।

ডব্লিউএমওর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২০ সালে করোনা মহামারির কারণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে লকডাউন চলা সত্ত্বেও প্রতি মিলিয়ন ঘনফুট বাতাসে কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ ছিল ৪১৩ দশমিক ২ পার্টস। গত এক দশকে এত বেশি পরিমাণ কার্বন ডাই অক্সাইডের উপস্থিতি বায়ুমণ্ডলে লক্ষ্য করা যায়নি।

ডব্লিউএমওর মহাপরিচালক পেটেরি তালাস এক বিবৃতিতে এ সম্পর্কে বলেন, ২০১৫ সালে প্যারিস চুক্তিতে শর্ত দেওয়া হয়েছিল- প্রাক শিল্পযুগের তুলনায় বিশ্বের তাপমাত্রা সর্বোচ্চ ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত বাড়তে পারে। চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী দেশসমূহ এই শর্ত মেনেই তাতে স্বাক্ষর করেছিল।

‘কিন্তু গত বছর যে হারে কার্বন ডাই অক্সাইডের নিঃসরণ ঘটেছে, তা অব্যাহত থাকলে আমাদের সামনে সমূহ বিপদ অপেক্ষা করছে।’

চলতি বছর নভেম্বরে স্কটল্যান্ডের গ্লাসগো শহরে শুরু হতে যাচ্ছে আন্তর্জাতিক জলবায়ু সম্মেলন। সম্মেলন যত এগিয়ে আসছে, ততই আলোচনায় আসছে ২০১৫ সালে ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে অনুষ্ঠিত জলবায়ু সম্মেলনে সম্পাদিত চুক্তি।

যুক্তরাষ্ট্র ইতোমধ্যে ঘোষণা দিয়েছে, ২০৫০ সালের মধ্যে কার্বন নিঃসরণ শূন্য পর্যায়ে নামিয়ে আনবে দেশটি। চলতি সপ্তাহের শনিবার সৌদি আরবের যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান বলেছেন, সৌদি আরব কার্বন নিঃসরণ শূণ্য পর্যায়ে নামিয়ে আনবে ২০১৬ সালে।

অস্ট্রেলিয়ার মন্ত্রিসভাও সোমবার এক বৈঠকে ২০৫০ সালের মধ্যে কার্বন নিঃসরণ শূন্য পর্যায়ে নামিয়ে আনার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে এক বিৃবতিতে জানিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন।

এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের আবহাওয়া ও জলবায়ু বিষয়ক গবেষণা সংস্থা ন্যাশনাল ওসানিক অ্যান্ড অ্যাটমোসফেরিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (নোয়া) প্রতিবেদনে জানায়, ২০২০ সালে গত আট লক্ষ বছরের মধ্যে বায়ুমণ্ডলে গ্রিন হাউজ গ্যাসের ঘনত্বের পরিমাণ সর্বোচ্চ রেকর্ড করা হয়েছে।

নোয়ার প্রতিবেদন অনুসারে, ২০২০ সালে বাতাসে গ্রিনহাউজ গ্যাস কার্বন-ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ সর্বোচ্চ ৪১২.৫ পিপিএম (পার্টস পার মিলিয়ন) রেকর্ড করা হয়েছে। ২০১৯ সালের তুলনায় এই মাত্রা ২.৫ পিপিএম পর্যন্ত বেশি।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, গত ৩৯ বছরের মধ্যে ২০২০ সালে মহাসাগরে জীবাশ্ম জ্বালানি নিঃসৃত কার্বনের পরিমাণ ছিল সর্বোচ্চ। এছাড়া, ১৯৯৯ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত গড় কার্বন মাত্রার চেয়ে তা ৩০ শতাংশ বেশি।

গত বছর, জলবায়ু নির্দেশক বেশ কিছু সূচকে রেকর্ড মাত্রা দেখা যায়। টানা নয় বছর থেকে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পেয়ে নতুন রেকর্ডে গিয়ে পৌঁছে। হিমবাহ ও বরফের স্তর গলে যাওয়ার প্রতি দশকে বিশ্বে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা এক ইঞ্চিরও কিছু বেশি বেড়ে চলেছে। একইসঙ্গে উত্তপ্ত হচ্ছে সমুদ্র।

এছাড়া, দু'শ বছরের মধ্যে রেকর্ড করা সর্বোচ্চ তিনটি তাপমাত্রার মধ্যে রয়েছে ২০২০ সালে রেকর্ডকৃত ভূপৃষ্ঠের তাপমাত্রা।

২০০৯ সালে বিশ্বের ধনী দেশগুলো প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলা করতে অনুন্নত দেশগুলোকে প্রতি বছর ১০০ বিলিয়ন ডলার সহায়তা দেওয়া হবে; কিন্তু সেই প্রতিশ্রুতি পালনে ব্যার্থ হয়েছে তারা।

Link copied!