বেটা
ব্রিটেনের রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ মারা গেছেন। আর এর মধ্য দিয়ে ১৯৫২ সালের ফেব্রুয়ারিতে এলিজাবেথের ববা রাজা জর্জ মারা যাওয়ার পর প্রায় ৭০ বছর পর আবার কোনো পুরুষ রাজ ক্ষমতা লাভ করলেন। একই সঙ্গে চার্লস কমনওয়েলথের প্রধান এবং সাতটি কমনওয়েলথভুক্ত দেশের রেজিমেন্টের প্রধান হলেন।
ব্রিটিশ রাজপরিবারের নিয়ম এমনই। নিয়মানুযায়ী রানির মৃত্যুর সাথে সাথেই তার উত্তরাধিকারী হিসেবে রাজ ক্ষমতা লাভ করেছেন পুত্র প্রিন্স চার্লস। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে সিংহাসনে বসতে হলে তাকে বাস্তবিক ও ঐতিহ্যবাহী কিছু নিয়ম ও সিদ্ধান্ত অনুসরণ করতে হবে।
প্রথম সিদ্ধান্ত: চার্লসকে প্রথমেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে, তিনি তৃতীয় চার্লস নামে সিংহাসনে আরোহন করবেন নাকি অন্য কোনো নাম গ্রহণ করবেন। এক্ষেত্রে কিছু ব্যাপার মাথায় রাখতে হবে। যেমন: চার্লসের পিতামহ রাজা ৬ষ্ঠ জর্জের ফার্স্ট নাম ছিল আলবার্ট। কিন্তু তিনি সিংহাসনে আরোহনের সময় তার মিডল নেম গ্রহণ করেন। চার্লসের ক্ষেত্রে তার চার নাম (চার্লস, ফিলিপ আর্থার, জর্জ) এর যে কোনো একটি গ্রহণ করতে পারেন। তবে জানা গেছে, প্রিন্স চার্লস 'রাজা তৃতীয় চার্লস' উপাধি নিয়ে সিংহাসনে আরোহণ করবেন৷
দ্বিতীয়ত: রানির মৃত্যুর ২৪ ঘণ্টার মধ্যে লন্ডনের সেইন্ট জেমস প্যালেসে অ্যাকসেশন কাউন্সিলের এক সভায় প্রিভি কাউন্সিল কর্তৃক আনুষ্ঠানিকভাবে রাজা হিসেবে ঘোষণা করা হবে চার্লসকে। ঐতিহ্যগত কারণে এ অনুষ্ঠানে রাজা সাধারণত সশরীরে উপস্থিত থাকেন না। তবে, এর ২৪ ঘন্টা পরে অ্যাকসেশন কাউন্সিলের যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে তাতে উপস্থিত থাকবেন চার্লস। সেখানে তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে রাজা হিসেবে ঘোষণা করা হবে।
রাজা হিসেবে নিযুক্ত হওয়ার জন্য শপথ গ্রহণের মতো কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। এই ধারা চলে আসছে আঠারো শতক থেকেই। তবে চার্চ অব স্কটল্যান্ডের সংরক্ষণ বিষয়ে তাকে একটি শপথ নিতে হতে পারে।
ব্রিটেন, স্কটল্যান্ড ও আয়ারল্যান্ডের রাজা প্রথম চার্লস। ছবি: সংগৃহীত
তৃতীয়ত: বিবিসি ও বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, ট্রাম্পেট বাজিয়ে ও গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে চার্লসকে নতুন রাজা হিসেবে ঘোষণা করা হবে। সেইন্ট জেমস প্যালেসের ফ্রেইরি কোর্টের ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে এ ঘোষণা দেবেন গার্টার কিং অব আর্মস পদে থাকা একজন কর্মকর্তা। ১৯৫২ সালের পর প্রথমবারের মতো উচ্চারিত হবে ‘গড সেভ দ্য কিং’। এরপর, বাজানো হবে যুক্তরাজ্যের জাতীয় সঙ্গীত, এ সময়ও গাওয়া হবে ‘গড সেভ দ্য কিং’। নতুন রাজাকে গান স্যালুট দেয়া হবে ব্রিটিশ নৌবাহিনীর সকল জাহাজ, হাইড পার্ক ও টাওয়ার অব লন্ডন থেকে। এরপর, এডিনবার্গ, বেলফাস্ট ও কার্ডিফ থেকে চার্লসকে রাজা হিসেবে ঘোষণা করা হবে। এরপর অনুষ্ঠিত হবে করোনেশন। ১৯৫৩ সালের জুন মাসে ২য় এলিজাবেথের পর রাজমুকুট পরতে যাচ্ছেন চার্লস।
ব্রিটেন, স্কটল্যান্ড ও আয়ারল্যান্ডের রাজা দ্বিতীয় চার্লস। ছবি: সংগৃহীত
প্রিন্স চার্লস হলেন আধুনিক সময়ের প্রথম ব্রিটিশ রাজা৷ তিনি বাড়িতে ব্যক্তিগত শিক্ষকের কাছে শিক্ষা গ্রহণের বদলে স্কুলে পড়েছেন৷ নিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি। তাছাড়া রয়্যাল বিমান বাহিনী ও নৌবাহিনীতে কাজ করেছেন৷ ১৯৭০ সালের দিকে যুদ্ধজাহাজে অবস্থানও করেছেন তিনি। ১৯৮১ সালে ৩২ বছর বয়সে প্রিন্সেস ডায়ানাকে বিয়ে করেছিলেন তিনি। কিন্তু ১৯৯২ সালে তাদের মধ্যে ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। ১৯৯৭ সালে ডায়ানা ফ্রান্সে গাড়ি দুর্ঘটনায় মারা গেলে সাধারণ মানুষের চক্ষুসূলে পরিণত হয়েছিলেন তিনি।
প্রসঙ্গত, ১৬২৫ সাল থেকে শুরু করে ১৬৪৯ সাল পর্যন্ত প্রথম চার্লস এবং ১৬৬০ থেকে ১৬৮৫ সাল পর্যন্ত দ্বিতীয় চার্লস ব্রিটেন শাসন করেন৷ এবার শুরু হলো ‘রাজা তৃতীয় চার্লস’ বা ‘কিং চার্লস দ্য থার্ড’।
-20241121105543.jpg)
-20241027115010.png)
-20241114092417.jpg)
