দুর্নীতির প্রমাণ দিলে সেই সম্পদ দেওয়ার চ্যালেঞ্জ বেনজীরের

জাতীয় ডেস্ক

এপ্রিল ২০, ২০২৪, ০৮:০৫ পিএম

দুর্নীতির প্রমাণ দিলে সেই সম্পদ দেওয়ার চ্যালেঞ্জ বেনজীরের

অর্জিত সম্পদকে কেন্দ্র করে অভিযোগের দালিলিক প্রমাণ দিতে পারলে সেই সম্পদ বিনামূল্যে দিয়ে দেওয়ার চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ।

শনিবার (২০ এপ্রিল) বেলা সাড়ে ১১টায় নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে ‘আমার কিছু কথা’ শিরোনামে একটি ভিডিও আপলোড করেন তিনি। রেকর্ডেড ওই ভিডিওতে এমনই চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেন সাবেক এই পুলিশ কর্মকর্তা।

সাবেক এই মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদ দুর্নীতির মাধ্যমে নিজের ও পরিবারের সদস্যদের নামে বিপুল পরিমাণ সম্পদ গড়ে তুলেছেন বলে সম্প্রতি কিছু গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। এসব অভিযোগ প্রসঙ্গে নিজের অভিমত তুলে ধরেন তিনি।

ভিডিও বার্তায় নিজের সম্পদ প্রসঙ্গে বেনজীর আহমেদ বলেন, ‘আমার ও আমার পরিবারের যে সম্পত্তি আছে, তার সবগুলোর বিপরীতে অর্থের উৎসসহ সংশ্লিষ্ট ট্যাক্স ফাইলে যথাযথভাবে উল্লেখ করা আছে। আমার পরিবার তাদের ব্যবসার জন্য ও আমি নিয়মিতভাবে কর পরিশোধ করে সেরা করদাতার সম্মাননাও পেয়েছি।’

চাকরিরত অবস্থায় পুলিশ প্রশাসনে নিজের অবদানের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘চাকরি জীবনে ব্যক্তিগতভাবে আমি ঘুষ-দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করেছি। পুলিশ কমিশনার ও র‍্যাবের মহাপরিচালক হিসেবে জনসেবার মান বাড়ানোর লক্ষ্যে কাঠামোগত প্রশাসনিক ও অপারেশনাল সংস্কার বা রিফর্মের উদ্যোগ নিয়েছি। জুনিয়র পদগুলোতে পদোন্নতিতে যে দুর্নীতির অভিযোগ ছিল, সেখানেও পদোন্নতি বিধিমালা ব্যাপক সংস্কার করে দুর্নীতিমুক্ত পদোন্নতির ব্যবস্থা করেছি। আমার পুরো ক্যারিয়ারে আমি পুলিশের অভ্যন্তরীণ দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করেছি, আমার অবসরের পর আমাকে দুর্নীতিবাজ প্রমাণের অপচেষ্টা অত্যন্ত হতাশাজনক ও দুঃখজনক।’

ভিডিও বার্তায় ব্যাখ্যা দেওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘যেহেতু আমি জনগণের করের টাকায় পরিচালিত স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছি। এরপর প্রায় ৩৫ বছর রাষ্ট্রের বেতনভুক্ত কর্মচারী হিসাবে কর্তব্য পালন করেছি, সেহেতু ব্যক্তিগত দায়বদ্ধতার অবস্থান থেকে প্রকাশিত খবরের পরিপ্রেক্ষিতে প্রকৃত সত্য ও তথ্য তুলে ধরার একটি নৈতিক তাগিদ অনুভব করছি।’

চাকরিকালে ২০১২-২০২২ সাল পর্যন্ত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নির্দিষ্ট একটি গোষ্ঠী ক্রমাগত অপপ্রচার এমনকি ব্যক্তিগত চরিত্র হননের অপচেষ্টার শিকার হয়েছেন বলেও দাবি করেন পুলিশের সাবেক এই কর্মকর্তা। তিনি বলেন, ‘আমি সরকারি চাকরিজীবী হলেও আমার স্ত্রী ও পরিবারের সদস্যদের এই দেশে ব্যবসা বাণিজ্যের সাংবিধানিক অধিকার আছে। আমার সরকারি চাকরি বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী তাদের বৈধভাবে ব্যবসার মাধ্যমে অর্থ ও ভূ-সম্পত্তি অর্জনে কোনো বাধা নেই। এটি তাদের সাংবিধানিক ও মৌলিক অধিকার।’

তিনি দাবি করেন, গোপালগঞ্জে ২০১৪ সাল থেকে পারিবারিক কৃষি খামার ও কৃষিতে বিনিয়োগ রয়েছে। সেসময় থেকে বিগত ১০ বছরব্যাপী ধীরে ধীরে কৃষিক্ষেত্রে আমাদের পারিবারিক বিনিয়োগ ও ব্যবসা উত্তরোত্তর বেড়েছে। প্রথমে সেখানে আমার পরিবারের সদস্যরা একটি ছোট মৎস্য খামার প্রতিষ্ঠা করেন। সেই খামারের আয় থেকে ধীরে ধীরে ব্যবসা বাড়ানো হয়।

ভিডিও বার্তায় তিনি জানান, তার স্ত্রী বিগত ২৪ বছর ধরে তার ব্যক্তিগত ও ব্যবসায়িক আয়ের বিপরীতে সরকারকে ট্যাক্স দিয়ে আসছেন। তার বিরুদ্ধে ঢাকা ও ঢাকার বাইরে যে সম্পত্তির কথা বলা হয়েছে সেগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা বলেও দাবি করেন তিনি।

পারিবারিক ব্যবসা ২০১৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় উল্লেখ করে বেনজীর আহমেদ বলেন, ‘বিগত ১০ বছর ধরে আমাদের পারিবারিক ব্যবসা প্রকাশ্যে ও সর্বসম্মুখে পরিচালিত হয়ে আসছে। এখানে গোপন বা আড়াল করার কোনো সুযোগ নেই। ঢাকার কাছে বিঘার পর বিঘা জমি নেই। পূর্বাচলে ৪০ কাঠা জমির ওপর ডুপ্লেক্স বাড়ি নেই। পূর্বাচলে সেই কথিত ডুপ্লেক্স বাড়ির পাশে একই জায়গায় আরও ১০ বিঘা জমিও নেই।’

তিনি আরও বলেন, ‘মগবাজার কেন, রমনা, সিদ্ধেশ্বরীর আশপাশে আমাদের ফ্ল্যাট বা অ্যাপার্টমেন্ট কিছুই নেই। আনন্দ হাউজিংয়ে একটি প্লট বুকিং দেই ও কিস্তির মাধ্যমে ধীরে ধীরে এই টাকা পরিশোধ করি।’

বেনজীর আহমেদ বলেন, ‘আইজিপি থাকা অবস্থায় পূর্বাচলে ফারুক মার্কেটের পেছনে ১০ কাঠার একটি প্লট কিনেছি। যার বাজার মূল্য ২২ কোটি টাকা দাবি করা হয়েছে। কিন্তু আমি আইজিপি কিংবা র‍্যাব ডিজি থাকাকালীন কোনও প্লট কিনিনি। ২০০১ সালে রাজউক বরাবর আবেদন করে আমি একটি ১০ কাঠার প্লট বরাদ্দ পেয়েছি। নিজের এবং পারিবারিক অর্থের প্রয়োজন হওয়ায় আমি প্লটটি বিক্রি করেছি। পূর্বাচলে বর্তমানে আমাদের কোনো প্লট বা বাড়ি কিছুই নেই। রূপগঞ্জে আমাদের কোনো জমি নেই।’

ভাওয়াল রিসোর্ট, বনানীতে ইউনিক রিজেন্সি হোটেল, কক্সবাজারের বেস্ট ওয়েস্টার্ন ও হোটেল রামাদায় বেনজীরের পরিবারের মালিকানা আছে, বলে প্রচার করা হয়েছে উল্লেখ করে বলেন, ‘এসব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে আমাদের কোনও মালিকানা বা বিনিয়োগ নেই। পদ্মা ব্যাংক ও ক্যানাডীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে আমাদের কোনো মালিকানা বা বিনিয়োগ নেই। সিঙ্গাপুরে অর্ধশত কোটি টাকার সোনার ব্যবসা, থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ায় জমি কিনেছি মর্মে যা বলা হয়, সেটাও অসত্য।’

তার এই বক্তব্যের লক্ষ্য কাউকে পাল্টা আক্রমণ বা পাল্টা অভিযোগ কিংবা বিদ্বেষ সৃষ্টি করা নয়, শুধু নৈতিক ও ব্যক্তিগত দায়বদ্ধতার প্রেক্ষাপটে তিনি এই ব্যাখ্যা হাজির করেছেন বলেও উল্লেখ করেন।

Link copied!