আগস্ট ১৮, ২০২৩, ০২:১২ এএম
রাজধানীর মতিঝিলের আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের এক ছাত্রীকে প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণের মামলায় প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা পরিষদের (গভর্নিং বডি) দাতা সদস্য খন্দকার মুশতাক ৬ সপ্তাহের আগাম জামিন পেয়েছেন। অন্যদিকে, আইডিয়ালের সেই ভুক্তভোগী ছাত্রীকে সেফহোমে (নিরাপদ হেফাজত) পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
বৃহস্পতিবার বিচারপতি শেখ জাকির হোসেন ও বিচারপতি একেএম জহিরুল হকের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
শুনানিতে আদালত বলেছেন, আইডিয়ালের ছাত্রীর বয়স নিয়ে আসামিপক্ষ ও রাষ্ট্রপক্ষ পরস্পরবিরোধী বক্তব্য দিয়েছেন। তাই ভিকটিমের বয়স নির্ধারণ করা জরুরি। বয়স নির্ধারণ না হওয়া পর্যন্ত ভিকটিম ছাত্রী নারী ও সমাজ সেবা অধিদপ্তরের অধীনে সেইফ হোমে থাকবে।
এর আগে ধর্ষণ মামলার আসামি খন্দকার মুশতাক আহমেদ, আইডিয়ালের ছাত্রী ও তার বাবার (মামলার বাদী) বক্তব্য শোনেন হাইকোর্ট।
আদালতে আসামি মুশতাকের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন সিনিয়র আইনজীবী সাঈদ আহমেদ রাজা। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে জামিনের বিরোধিতা করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আবুল হাশেম ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মাহফুজুর রহমান লিখন।
প্রসঙ্গত, প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণের মামলায় মুশতাকের আগাম জামিন আবেদন গতকাল বুধবার ফিরিয়ে দিয়েছিলেন হািইকোর্ট। বিচারপতি আবু তাহের মো. সাইফুর রহমান ও বিচারপতি খোন্দকার দিলীরুজ্জামানের হাইকোর্ট বেঞ্চ ওই আবেদন ফিরিয়ে দিয়ে শুনানির সময় পরিচালনা পর্ষদের (গভর্নিং বডি) সদস্য খন্দকার মুশতাক আহমেদের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনি কাজটি নৈতিকভাবে ঠিক করেননি।’
মুশতাকের আইনজীবী বলেন, ওই মামলার অপর আসামিকে হাইকোর্টের অপর একটি দ্বৈত বেঞ্চ জামিন দিয়েছেন। এ সময় রাষ্ট্রপক্ষ জামিনের বিরোধিতা করলে শুনানির একপর্যায়ে আদালত বলেন, ‘আমরা এই আবেদন শুনতে আগ্রহী নই।’ পরে মুশতাকের আইনজীবী আবেদন ফেরতের আরজি জানালে আদালত তা ফেরত দেন।
এর আগে, ভুক্তভোগী কলেজছাত্রীর বাবা মো. সাইফুল ইসলাম বাদী হয়ে গত ১ আগস্ট ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৮ এর বিচারক বেগম মাফরোজা পারভীনের আদালতে ধর্ষণের অভিযোগে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির দাতা সদস্য খন্দকার মুশতাক আহমেদের বিরুদ্ধে নালিশি মামলা করেন। ওই মামলায় ধর্ষণে সহায়তার অভিযোগে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ ফাওজিয়া রাশেদীকে দ্বিতীয় আসামি করা হয়। আদালত বাদীর (ছাত্রীর বাবা) জবানবন্দি গ্রহণ করে মামলাটি গুলশান থানাকে এজাহার হিসেবে রেকর্ডভুক্ত করার আদেশ দেন। সে অনুযায়ী মামলাটি থানা-পুলিশ নথিভুক্ত করে।
মামলার আর্জিতে যা বলা হয়েছে: মামলার আরজিতে বাদী ও ভুক্তভোগী কলেজছাত্রীর বাবা উল্লেখ করেন, ‘তার মেয়ে (ভুক্তভোগী) মতিঝিল আইডিয়ালের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী। অভিযুক্ত মুশতাক বিভিন্ন অজুহাতে কলেজে আসতো এবং ছাত্রীকে ক্লাস থেকে অধ্যক্ষের কক্ষে ডেকে আনতো। খোঁজখবর নেওয়ার নামে ছাত্রীকে বিভিন্নভাবে প্রলোভন দেখিয়ে প্রলুব্ধ করতো। কিছুদিন পর মুশতাক ছাত্রীকে কুপ্রস্তাব দেয়। এতে রাজি না হওয়ায় ছাত্রীকে তুলে নিয়ে জোরপূর্বক বিয়ে করে এবং তাকে ও তার পরিবারকে ঢাকাছাড়া করার হুমকি দেয়।
এ রকম আচরণের বিষয়ে বাদী কলেজের অধ্যক্ষকে (২ নম্বর আসামি) ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করেন। তিনি ‘ব্যবস্থা করতেছি’ বলে অভিযুক্ত মুশতাককে তার অফিস কক্ষে নিয়ে আসেন এবং ছাত্রীকে ক্লাস থেকে ডেকে এনে অফিস কক্ষের দরজা বন্ধ করে দিয়ে আসামিকে সময় ও সঙ্গ দিতে বলেন।
অধ্যক্ষর কাছে বারবার প্রতিকার চাইলেও কোনও সহযোগিতা না করে বরং অভিযুক্ত মুশতাককে অনৈতিক সাহায্য করে আসতে থাকেন।
পরে বাদী উপায় না পেয়ে গত ১২ জুন মেয়েকে ঠাকুরগাঁওয়ের নিজ বাড়িতে নিয়ে গেলে মুশতাক তার লোকজন দিয়ে সেখান থেকে তার মেয়েকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। এরপর বাদী জানতে পারেন আসামি তার মেয়েকে একেক দিন একেক স্থানে রেখে অনৈতিক কাজে বাধ্য করছে এবং যৌন নিপীড়ন করছে।’
এই মামলায় হাইকোর্টে আইনজীবীর মাধ্যমে আগাম জামিনের আবেদন জানান খন্দকার মুশতাক আহমেদ। জামিন আবেদনের শুনানি থাকায় আদালতে হাজির হন তিনি।