অক্টোবর ৩১, ২০২৪, ০৯:২৬ এএম
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র জনতার আন্দোলন নির্মূলে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেফতার ঢাকা জেলা পুলিশের সাবেক কর্মকর্তা শহীদুল ইসলামকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর) ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেলে এ আদেশ দেয়।
প্রসিকিউশনের পক্ষে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম ট্রাইব্যুনালে এ আসামি গ্রেফতারের বিষয় উল্লেখ করে তাকে কারাগারে আটক রাখার আরজি পেশ করেন।
তাকে গ্রেফতার করে আজ সকাল ১০টায় কড়া নিরাপত্তায় শহীদুল ইসলামকে ট্রাইব্যুনালে আনা হয়।
প্রসিকিউটর আবদুল্লাহ আল নোমান জানান, ‘জুলাই-আগস্ট গণহত্যার আসামী সাবেক এডিশনাল এসপি (সাভার সার্কেল) শহীদুল ইসলামকে গ্রেফতার করা হয়েছে।’
এর আগে ২৭ অক্টোবর জুলাই-আগস্ট গণহত্যার অভিযোগে ট্রাইব্যুনালে দায়ের করা মামলায় সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান হাবিবসহ ১৭ সাবেক পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে ট্রাইব্যুনাল। আসামিদের মধ্যে ডিএমপি মিরপুর জোনের সাবেক ডিসি জসিম উদ্দিন মোল্লাকে গতকাল রংপুর থেকে গ্রেফতার করে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেয় ট্রাইব্যুনাল। আজ আরেক আসামি শহীদুলকে গ্রেফতার করা হলো।
চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, ১৭ পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতার আন্দোলন নির্মূলে গণহত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধে সম্পৃক্ততার সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে। গত ২৭ অক্টোবর ১৭ পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে ট্রাইব্যুনাল। তাদের গ্রেফতার করে আগামী ২০ নভেম্বর ট্রাইব্যুনালে হাজির করার জন্য আদেশ দেয়া হয়।
চিফ প্রসিকিউটর বলেন, জুলাই-আগস্টে নির্মমতার ঘটনায় জড়িত যতই ক্ষমতাধর হোক, তাকে আইনের আওতায় এনে বিচারের সম্মুখীন করা হবে। তবে এই সময়ে অপরাধে সম্পৃক্ত ছিল না, এমন কেউ হয়রানি হবেন না। তাদের কোন ভয় নেই। আমরা ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় বদ্ধপরিকর। জুলাই-আগস্টে নির্মমতার শিকার এবং যারা শহিদ হয়েছেন তাদের প্রতি রাষ্ট্রের দায়বদ্ধতা রয়েছে।
গত ৫ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত সারা দেশে সংঘটিত গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা ও প্রসিকিউশন অফিসে অভিযোগ জমা পড়ছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন বরাবর এখন পর্যন্ত ৭৫টির মতো অভিযোগ জমা পড়েছে বলে প্রসিকিউশন সূত্র জানায়।
গত ১৭ অক্টোবর শেখ হাসিনাসহ ৪৬ জনের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারিক কার্যক্রম শুরু হয়।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে পদত্যাগ করে ৫ আগস্ট দেশ থেকে পালিয়ে যান সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। এর মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে টানা প্রায় ১৬ বছরের শাসনের পতন হয়।
গত জুলাই-আগস্টে গড়ে ওঠা ছাত্র-জনতার আন্দোলন নির্মূলে আওয়ামীলীগ সরকার ও তার অনুগত প্রশাসন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গনহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংগঠিত করে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে জাজ্বল্যমান এ অপরাধের বিচার অনুষ্ঠিত হবে।
আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক ১০ মন্ত্রী, দুই উপদেষ্টা, অবসরপ্রাপ্ত এক বিচারপতি ও সাবেক এক সচিব এই মোট ১৪ জনকে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে আগামী ১৮ নভেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হাজিরের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। প্রসিকিউশনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২৭ অক্টোবর এ আদেশ দেয় ট্রাইব্যুনাল।
সুত্রঃ বাসস