নারীর রূপচর্চার উপকরণের মধ্যে সবচেয়ে মূল্যবান প্রসাধনী হলো লিপস্টিক। কেবল সৌন্দর্যচর্চা বা ফ্যাশনই নয়, লিপস্টিকের সাথে ব্যক্তিত্ব ও আত্মবিশ্বাসেরও গভীর সংযোগ রয়েছে বলে মনে করা হয়। সাজসজ্জার ক্ষেত্রে লিপস্টিকের জনপ্রিয়তা সবসময়ই আকাশচুম্বী।
ঠোঁট রাঙাতে সাধারণত নারীরাই লিপস্টিক ব্যবহার করে থাকেন। তবে সময়ের বিবর্তনে এবং কিছু কিছু সমাজে পুরুষদের মধ্যেও লিপস্টিক ব্যবহারের প্রচলন আছে।
দীর্ঘকাল থেকেই লিপস্টিকের ব্যবহার করে আসছেন নারীরা। তবে তখনকার দিনে ফল ও গাছের রস থেকে তৈরি রঙ ব্যবহার করা হতো সাজসজ্জায়।
সুমেরীয় সভ্যতা থেকে মিশরীয় সভ্যতা, এরপর রোমান সভ্যতা- নারী ও পুরুষ উভয়ই ঠোঁট রাঙাতে ব্যবহার করেছে বেরি বা জাম জাতীয় ফল, পান পাতা, লাল সীসা, মাটি, মেহেদি, গাছ-গাছড়া কিংবা বিভিন্ন খনিজ। তবে সেসব উপাদান ব্যবহার করা হতো আঠার সাহায্যে। যেন তা ঠোঁটে লেগে থাকে।
এরপর উচ্চবিত্ত মেসোপটেমিয়ানরা ঠোঁট রাঙাতে রত্নচূর্ণ ব্যবহার করত। মিশরীয়রা রঞ্জক পদার্থ যেমন অ্যালজিন, আয়োডিন ও ব্রোমিনের মিশ্রণে লাল রঙ তৈরি করে লিপস্টিক ব্যবহার করত। ফারাও রাণী ক্লিওপেট্রা গাঢ় লাল রঙ ব্যবহার করতেন ঠোঁটে।
লিপস্টিক নামের প্রচলন হয়েছে ১৮৮০ সালে। সর্বপ্রথম বাণিজ্যিক লিপস্টিক উৎপাদনে ফ্রান্সের নাম উঠে আসে। ১৮৮০ সালে প্যারিসে সুগন্ধি শিল্পেই তৈরি হয় বাণিজ্যিক লিপস্টিক। ১৮৯০ সালের শেষদিকে ইউরোপ ও আমেরিকাজুড়ে লিপস্টিক বিক্রি করা শুরু হয় এবং এর প্রসারে বিজ্ঞাপন প্রচারও শুরু হয়। সেসময় লিপস্টিক কাগজের কৌটায় বা টিউবে বিক্রি করা হতো।
১৯১৫ সালে মরিস লেভি সর্বপ্রথম ধাতব কৌটার লিপস্টিক তৈরি করলেন যা ঠেলে উপরে তোলা যায়। তারই হাত ধরে আধুনিক লিপস্টিকের প্রথম ধাপ সম্পন্ন হয়। লিপস্টিকটি ছিল সহজে বহনযোগ্য এবং সাধারণ নারীদের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে।
আমরা আজ যেটা ‘আধুনিক লিপস্টিক’ বলে জানি, তার নাম ‘সুইভেল-আপ’ লিপস্টিক। এটি সর্বপ্রথম উদ্ভাবন হয় ১৯২৩ সালে। এর উদ্ভাবক জেমস ব্রুস জুনিয়র এটিকে বলেছিলেন ‘টয়লেট আর্টিকেল’।
যুগে যুগে লিপস্টিকের সাথে সমাজ বাস্তবতা, অর্থনীতি, রাজনীতি ও ধর্ম জড়িয়ে গেলেও লিপস্টিকের জনপ্রিয়তা কমেনি একটুও। তারই ধারাবাহিকতায় লিপস্টিকের রঙেও লেগেছে আধুনিকতার ছোঁয়া। লিপস্টিক সাধারণত দুই ধরনের হয়, গ্লসি ও ম্যাট।
১.গ্লসি লিপস্টিক :
১৯৩০ সালে ম্যাক্স ফ্যাক্টর সর্বপ্রথম বাণিজ্যিক লিপগ্লস তৈরি করে যা তৎকালীন সময়ের চলচ্চিত্র তারকারা ব্যবহার করতেন। প্রকৃতপক্ষে এটি তখন হয়ে যায় হলিউডের গ্ল্যামার আর সিনেমার স্বর্ণযুগের প্রতীক। ত্রিশের দশকে হলিউড ইন্ডাস্ট্রিতে তুঙ্গে থাকা লিপগ্লস চলে আসলো সাধারণ মানুষের হাতের নাগালে। সেই থেকে এটি হয়ে গেল তারুণ্যদীপ্ত আনন্দের প্রতীক। যেসব নারীরা চিরযৌবনা ও সতেজ থাকতে ভালবাসে তারাই গ্লসি লিপস্টিক ব্যবহার করে থাকেন।
২.ম্যাট লিপস্টিক :
সাধারণত ঠোঁটের সাথে মিশে থাকা লিপস্টিকগুলোই ম্যাট লিপস্টিক। এগুলো ঠোঁটে চকচকে ভাব আনে না। তবে সৌন্দর্য বর্ধন করে ঠিকই। বর্তমানে ম্যাট লিপস্টিকের জনপ্রিয়তাই সবচেয়ে বেশি। ধারণা করা হয়, যেসব নারীরা ম্যাট পছন্দ করেন, তারা বাস্তববাদী হয়ে থাকে। তাদের আত্মসম্মানবোধও বেশি।