অপারেশন সার্চলাইট কার চক্রান্তে?

হাসনাত আসিফ কুশল

মার্চ ২৬, ২০২৪, ১২:৩২ এএম

অপারেশন সার্চলাইট কার চক্রান্তে?

ইয়াহিয়া-মুজিব বৈঠক ফলপ্রসূ হয়নি। বৈঠকের ভান ধরে কালক্ষেপণ করেছিলেন পাকিস্তানের তদানীন্তন প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান।

২৫ মার্চ দিনভর সেনাবাহিনীর অস্বাভাবিক গতিবিধি ঢাকাবাসীকে আতঙ্কিত করে তুলছিল। একদিকে বঙ্গবন্ধু ও আওয়ামী লীগ নেতাদের বৈঠকে ব্যস্ত রেখে কালক্ষেপণ, অন্যদিকে গণহত্যার প্রস্তুতি- ইয়াহিয়া খানের ভণ্ডামিরই পরিচায়ক।

২৫ মার্চ রাত ১১টার দিকে ভারী অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে রাস্তায় বেরিয়ে পড়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনী। শুরু হয় অপারেশন সার্চলাইট।

১৯৭১ সালে ২৫ মার্চ রাতে নিরস্ত্র, ঘুমন্ত বাঙালির ওপর যে গণহত্যা হয়েছিল, ইতিহাসে তা অপারেশন সার্চলাইট হিসেবে সমধিক পরিচিত। এই অপারেশনে প্রথম হামলার শিকার হয় ফার্মগেটে মিছিলরত ছাত্ররা। একই সময় রাজারবাগ পুলিশ লাইনস, পিলখানা ও তোপখানা রোডেও হামলা করে পাকিস্তানিরা। লক্ষ্য ছিল বাঙালি নিধন। বুদ্ধিজীবী ও সাংবাদিকরাও পাকিস্তানিদের হাত থেকে বাদ পড়েননি। ২৫ মার্চ রাতে দৈনিক সংবাদের সহ-সম্পাদক শহীদ সাবের অফিসেই অবস্থান করছিলেন। পাকিস্তানিরা সংবাদ অফিসে আগুন ধরিয়ে দেয়। এতে তিনি সেখানেই অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা যান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার শিক্ষকদেরকেও বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যায় পাকিস্তানিরা। ছাত্রাবাসগুলোতে ছাত্রদের ওপর চলে নির্মম নির্যাতন, নির্বিচার হত্যাযজ্ঞ। বিশেষ করে জগন্নাথ হল ও ইকবাল হল তথা সার্জেন্ট জহুরুল হক হলে নৃশংসতার সীমালঙ্ঘন করে পাকিস্তানি বাহিনী। গণহত্যা চলে ঢাকার তাঁতিবাজার, শাঁখারিপট্টি, কচুক্ষেত, রাজশাহী, মিরপুর, রায়েরবাজার, গণকটুলি, ধানমন্ডিসহ একাধিক এলাকায়। ঢাকার বাইরে কুমিল্লা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, বগুড়া, সৈয়দপুর, সিলেটসহ পূর্ব পাকিস্তানের অন্যান্য শহরে গণহত্যা চালানো হয়।

অপারেশন সার্চলাইটের সার্বিক দায়িত্ব পালন করেন পূর্ব পাকিস্তানের প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক জেনারেল টিক্কা খান। ঢাকা ও আশেপাশের এলাকায় দায়িত্ব পালন করেন পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নরের অধীনস্থ অসামরিক কর্মকর্তা রাও ফরমান আলী। ঢাকার বাইরে দায়িত্ব পালন করেন লেফটেন্যান্ট জেনারেল খাদিম হোসেন ও জেনারেল আবরার।

নিরস্ত্র, ঘুমন্ত বাঙালিদের ওপর যখন পাকিস্তানিরা গণহত্যা চালাচ্ছে, তখন ধানমন্ডি-৩২ নম্বরে বিনিদ্র রজনী পার করছিলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্রে টেলিগ্রাম সহযোগে স্বাধীনতা ঘোষণাপত্র পাঠিয়ে দেন তিনি। তাতে লেখা ছিল- আজ থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন।

এর অব্যবহিত পরে শেখ মুজিবকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায় পাকিস্তানিরা। ২৭ মার্চ আওয়ামী লীগ নেতা এম এ হান্নান ও মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করেন।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতা ঘোষণার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে শুরু হয়ে যায় মুক্তিযুদ্ধ। এদেশের সর্বস্তরের মানুষ মুক্তি সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ে। দীর্ঘ ৯ মাস যুদ্ধের পর ১৬ ডিসেম্বর জাতি বিজয়ের গৌরব অর্জন করে।

Link copied!