করোনা বিশ্ব স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা পরিবর্তনের অনুঘটক

ড. তারেক মাহমুদ হুসেন

অক্টোবর ১৬, ২০২১, ০৬:০২ এএম

করোনা বিশ্ব স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা পরিবর্তনের অনুঘটক

মহামারী করোনাভাইরাস বিশ্বের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ওপর একটি স্পষ্ট প্রভাব ফেলেছে। মহামারী আমাদের রোগীর যত্ন, প্রক্রিয়া, প্রস্তুতি এবং আমাদের স্বাস্থ্য সেবা কর্মীদের নিরাপদ রাখার পদ্ধতি সম্পর্কে সনাতন চিন্তাভাবনাকে বদলে দিয়েছে।

সামগ্রিকভাবে  বিশ্বজুড়ে স্বাস্থ্য সেবা খাতকতটা ভঙ্গুর তা করোনা মহামারি আমাদের দেখিয়ে দিয়েছে। স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য ব্যক্তিগত সুরক্ষামূলক সরঞ্জাম (পিপিই), হাসপাতালের সরঞ্জাম, স্যানিটাইজিং সরবরাহ, টয়লেট পেপার এমনকি পানির স্বল্পতায় পড়তে হয়েছে কোনও কোনও জায়গায়। করোনা মহামারি আসায়  এই ঘাটতিগুলি উন্মোচিত হয়েছিল এবং বিশ্বজুড়ে স্বাস্থ্যসেবা সংস্থাগুলিকে মহামারী প্রস্তুতির জন্য নতুন পরিকল্পনা প্রণয়নে বাধ্য করেছে।

শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের শীর্ষস্থানীয় স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ এবং হ্যারিস স্কুল অফ পাবলিক পলিসির ডিন প্রফেসর ক্যাথরিন বাইকার বলেন, এর ফলে বেশ কয়েকটি পরিবর্তন হতে পারে, যার মধ্যে একটি হলো টেলিমেডিসিন সেবার একটি বিশাল সম্প্রসারণ।

মধ্য ও নিম্ন আয়ের দেশগুলিতে মহামারীর কারণে যে চ্যালেঞ্জগুলি দেখা দিয়েছে তা সম্ভবত সবচেয়ে কঠিন। স্বাস্থ্যসেবাযর সীমিত সুযোগ, ব্যাপক দারিদ্র্য, সংক্রামক রোগের উচ্চ প্রাদুর্ভাব, বিশুদ্ধ পানির স্বল্পতা এবং ঘন বসতির মতোসমস্যাগুলো করোনা মহামারির কারণে আরও বৃদ্ধি পায়।

এই বাস্তবতাগুলি সামাজিক দূরত্ব, ঘন ঘন হাত ধোয়া এবং ব্যাপক পরীক্ষার মতো আবশ্যক কাজগুলোর বাস্তবায়নকে কার্যত অসম্ভব করে তুলেছিল।

এছাড়া নিম্ন আয়ের দেশগুলোর অধিকাংশ বাসিন্দা জীবিকার প্রয়োজনে দীর্ঘদিন তাদের কাজ বন্ধ রাখতে পারেনা। ফলে এই দেশগুলোতে লকডাউন কার্যকর করা কষ্টসাধ্য ছিলো।

বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিয়েছেন এই মহামারির শিক্ষা মনে রেখে ভবিষ্যতে নতুন প্রাদুর্ভাবের বিরুদ্ধে জনসংখ্যাকে রক্ষার জন্য জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন করা। নতুন ও কার্যকর নীতিমালা প্রণয়ন করা, যাতে বৃহত্তর জনগোষ্ঠীকে রক্ষা করা যায়।

করোনা মহামারীর ফলে স্বাস্থ্যসেবা সরবরাহের একটি নতুন মডেল উদ্ভাবিত হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা, টেলিমেডিসিন সেবা উন্নতকরণ, এবং প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি ও সহজ করা।

বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন আমরা বিভিন্ন মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে রোগীদের মেডিকেল ইন্টেলিজেন্স এবং তথ্য সরবরাহ করতে পারি।

ডিজিটাল স্বাস্থ্যসেবা সম্পর্কে গত কয়েক বছর আগেও মানুষ তেমন কিছু জানতো না। কিন্তু বর্তমানে আমরা সবাই একমত যে চিকিৎসা সেবার জন্য আরও ডিজিটালাইজেশন অপরিহার্য। মহামারী দেখিয়েছে যে ডিজিটাল সরঞ্জাম, যেমন টেলিমেডিসিন কতটা অপরিহার্য ছিল।

আরেকটি পরিবর্তন যা মহামারীকে দূর করতে খুবই সহায়ক- তা হলো সচেতনতা। মহামারী পরবর্তী সময়ে  ক্লিনিকাল কেয়ারের সাথে প্রতিরোধমূলক যত্নের প্রতি জনসচেতনতা তৈরি ও সেগুলোর যথাযথ অনুশীলন করা।

আমাদের আগে যে সিস্টেম ছিল সেখানে ফিরে যাওয়ার কোনও সুযোগ নেই এবং এটি আরও ভাল কিছু তৈরি করার জন্য একটি আদর্শ সময়।

নীতিনির্ধারকদের উচিত স্বাস্থ্য ব্যবস্থা উন্নতকরণের জন্য উদ্ভাবিত পদ্ধতিগুলো যথাযথভাবে ব্যবহার করা। জনসাধারণের জন্য চিকিৎসা ব্যয় হ্রাস করা। ডিজিটাল স্বাস্থ্য সেবা (টেলিহেলথ) এবং বিভিন্ন স্বাস্থ্য সেবা পেশাদার/বিশেষজ্ঞদের দক্ষ করে তোলা।

লেখক: ড. তারেক মাহমুদ হুসেন, জাতিসংঘের সাবেক আন্তর্জাতিক জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ, প্রাক্তন ভিপি, ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ ছাত্র সংসদ।

Link copied!