বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ শব্দ তিনটি একইসূত্রে গাঁথা। বঙ্গবন্ধু ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর থেকেই স্বাধীনতার লক্ষ্যে বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামে ধাপে ধাপে জাতিকে উদ্বুদ্ধ করেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে পাকিস্তানী শাসন ও শোষণ থেকে মুক্ত করে বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করে। এ স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্যে প্রতিটি পদক্ষেপ ও কার্যক্রম বাস্তবায়নের সাথে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেপথ্য শক্তি, সাহস ও বিচক্ষণ পরামর্শক হয়ে জড়িয়ে আছেন বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব।
মহীয়সী নারী বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছার জন্ম ১৯৩০ সালের ৮ আগস্ট। ফুলের আবীরে মাখা গায়ের রঙয়ের জন্য ছোট বেলায় পরিবারের সবাই তাকে ‘রেণু’বলে ডাকত। তিনি মাত্র তিন বছর বয়সে বাবা ও পাঁচ বছর বয়সে স্নেহময়ী মাকে হারান। পিতৃ-মাতৃ হারা রেণুকে লালন পালনের দায়িত্ব গ্রহণ করেন বঙ্গবন্ধুর বাবা শেখ লুৎফর রহমান ও মা সায়েরা খাতুন। ছোটবেলা থেকেই রেণু ছিলেন অত্যন্ত নম্র, শান্ত ও অসীম ধৈর্য্যর অধিকারী। সকল কাজেই বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিতেন। পারিবারিক নিয়মনীতি, শিক্ষা ও ঘরের সকল কাজ রপ্ত করেছিলেন অত্যন্ত নিপুণতার সাথে। কিশোরী রেণুকে বঙ্গবন্ধুর পিতামাতা অত্যন্ত আদর-স্নেহ করতেন। বঙ্গবন্ধুর সাথে তের বছর বয়সে রেণুর বিয়ে হয়। একই পরিবারে ও আবহে বেড়ে উঠা দু’জনের একসাথে পথচলা সেই থেকে শুরু।
বঙ্গবন্ধু কোলকাতার ইসলামিয়া কলেজে অধ্যয়নকালে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন। তখন থেকেই বঙ্গমাতা তাঁর রাজনীতির চলনবলন ও ভবিষ্যৎ কর্মপন্থার সাথে জড়িত হয়ে পড়েন।
প্রথম থেকেই বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক জীবনের কঠিন সংকট ও জটিল পরিস্থিতি এবং বিভিন্ন সমস্যায় বঙ্গমাতা সময়পোযোগী পরামর্শ দিয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়তা করেছেন। দেশ বিভাগের পূর্বে ১৯৪৬ সালে দাঙ্গার সময় বঙ্গমাতা নিজে অসুস্থ থাকা অবস্থায়ও স্বামীকে দাঙ্গা উপদ্রæত এলাকায় কাজ করতে উৎসাহ দিয়েছেন। চিঠি লিখে দেশের কাজে এগিয়ে যেতে উৎসাহ দিয়েছেন এইভাবে, ‘আপনি শুধু আমার স্বামী হবার জন্য জন্ম নেননি, দেশের কাজ করার জন্য জন্ম নিয়েছেন। দেশের কাজই আপনার সবচাইতে বড় কাজ। আপনি নিশ্চিন্ত মনে সেই কাজে যান। আমার জন্য চিন্তা করবেন না। আল্লাহর উপর আমার ভার ছেড়ে দিন।’বয়সের হিসেবে বঙ্গমাতা তখনও কিশোরী। গ্রামের ১৬ বছর বয়সী একজন কিশোরীর কত আধুনিক চিন্তাচেতনা! দেশ প্রেমকে সবার উপরে স্থান দিয়ে তিনি নিজের ও পরিবারের সুখ ও শান্তিকে ত্যাগ করেছেন। প্রত্যেক দম্পতির প্রথম সন্তান কাক্সিক্ষত সন্তান। প্রত্যেক স্ত্রীই চায় কাক্সিক্ষত প্রথম সন্তান জন্মের সময় তাঁর স্বামী পাশে থাকুক। কিন্তু এসময় বঙ্গবন্ধু কোলকাতায় দাঙ্গাবিরোধী কাজে ব্যস্ত থাকায় তাঁর পাশে থাকতে পারেননি। বঙ্গমাতার প্রথম সন্তান জন্মের সাথে সাথেই মারা যায়। কন্যা শোকে তিনি কাতর হয়ে পড়েন কিন্তু ভেঙ্গে পড়েননি। কারণ তাঁর চিন্তায়-চেতনায় লালিত ছিল বঙ্গবন্ধুর চিন্তা ও আদর্শ। স্বভাবতই নিজের স্বার্থের চেয়ে দেশের স্বার্থ তাঁর কাছে অধিক গুরুত্ব পায়।
ভাষা আন্দোলনসহ বিভিন্ন অধিকার আদায়ের সংগ্রামে নেতৃত্ব দেওয়ার কারণে বঙ্গবন্ধুকে জীবনের উল্লেখযোগ্য অংশ কারাগারের যাতনা সহ্য করতে হয়েছে। কারাবন্দী অবস্থায় অনশন ধর্মঘট করার কারণে মাঝে মাঝে বঙ্গবন্ধু অসুস্থ হয়ে পরতেন। বঙ্গবন্ধুকে সকল দুঃখ ও নির্যাতন বরণের শক্তি, সাহস, ধৈর্য্য, সহ্য ও প্রেরণা দিয়েছেন এই সংগ্রামী নারী।
“কোন কালে একা হয়নি ক’ জয়ী পুরুষের তরবারী,
প্রেরণা দিয়েছে, শক্তি দিয়েছে বিজয় লক্ষী নারী।”
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের কবিতার এই দু’টি লাইন বঙ্গমাতার জন্য শতভাগ প্রযোজ্য। তিনি রাজনীতির সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত না থেকেও বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ও লক্ষ্য পূরণে তাঁর চিন্তা-ভাবনার সাথী হয়ে রাজনীতির মহানায়কের পাশে থেকেছেন অবিচল। বঙ্গবন্ধু কারাগারে থাকাকালীন সময়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও ছাত্র নেতাদের পরম নির্ভরতা ও আস্থার শেষ আশ্রয়স্থল ছিলেন বঙ্গমাতা। দলকে সংগঠিত করা, কর্মীদের আর্থিক সহায়তা, সঠিক সময়ে সঠিক ও কঠিন সিদ্ধান্ত গ্রহণসহ প্রতিটি পদক্ষেপে দক্ষতা, দূরদর্শিতা ও সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন। নিজ হাতে চা-নাশতা পরিবেশন এবং খাবারের ব্যবস্থা করতেন। সভায় আলোচিত প্রতিটি বিষয়ের উপর গুরুত্ব দিতেন। সেজন্য গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন প্রায়ই বাড়িতে হানা দিত ও জিজ্ঞাসাবাদ করত এবং গ্রেফতারের ভয় দেখাত। এহেন কঠিন সময়ের মধ্যেও সংসার পরিচালনা করা, সন্তানদের লেখাপড়া ঠিক রাখা ও দলীয় নেতাকর্মীদের সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখাসহ সকল ধরনের দায়িত্ব পালন করতেন। দলের নেতাকর্মীদের আর্থিক সাহায্যের পাশাপাশি কারাবন্দি নেতাদের পরিবারের জন্য মাসের বাজার ও হাত খরচ পাঠাতেন। বঙ্গবন্ধু ও নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা পরিচালনার জন্য আইনজীবীদের সাথে পরামর্শ করতেন। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘জীবনে এ পর্যন্ত চব্বিশটি মামলার মোকাবেলা করেছি, আসলে মোকাবেলা করেছে আমার স্ত্রী রেণু। সে-ই কাগজপত্র দলিল-দস্তাবেজ নিয়ে ছুটেছে এক উকিল থেকে আরেক উকিলে। ফলে আমার নামে মামলা মানে রেণুর নামে মামলা! রেণু ছাড়া আর কে ছিল তখন আমাকে নিয়ে দৌড়াদৌড়ি করার?’ (আমার রেণু, পৃষ্ঠা-১৮)। বঙ্গবন্ধুর সাথে কারাগারে সাক্ষাৎ করে দেশের পরিস্থিতি ও রাজনীতির সব খবরাখবর তাঁকে জানাতেন। বঙ্গবন্ধুর দিক নির্দেশনাও নেতাকর্মীদের কাছে পৌঁছে দিতেন। যার ফলে আন্দোলন ও সংগ্রামে নেতাকর্মীদের মনোবল চাঙ্গা রাখতেন। আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী পরিষদ থেকে ছাত্রলীগের যেকোন বিষয় ছিল তাঁর নখদর্পনে।
বঙ্গবন্ধু-বঙ্গমাতার পূর্বপুরুষরা ছিলেন জমিদার। বঙ্গমাতা ছিলেন তাঁর দাদা ও পিতার রেখে যাওয়া সম্পত্তির মালিক। ছোটবেলা থেকেই তিনি সঞ্চয়ী ছিলেন। নিজে অহেতুক টাকা খরচ না করে জমিয়ে রাখতেন। সংগঠন পরিচালনা করতে অনেক টাকা-পয়সার প্রয়োজন হতো। সংগঠন পরিচালনার কাজে বঙ্গমাতা তাঁর জমানো টাকা বঙ্গবন্ধুর হাতে তুলে দিতেন। এ প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধু নিজেও বলেছেন, ‘সত্যি বলতে রেণুই ছিল আমার ব্যাংক। সে তাঁর বাবার রেখে যাওয়া সম্পত্তি থেকে যতটুকু টাকা-পয়সা পেত, সেসব আমার খরচের জন্য জমিয়ে রাখত’ (আমার রেণু, পৃষ্ঠা-৮৩)।
বঙ্গবন্ধু ১৯৬৬ সালে জনগণকে ছয় দফা আন্দোলনের পক্ষে উদ্বুদ্ধ করার জন্য বিভিন্ন জেলায় জনসভায় ভাষণ দেন এবং বার বার গ্রেফতার ও কারাবন্দী হন। বঙ্গমাতা দৃঢ়চিত্তে ছয় দফার পক্ষে অবস্থান নেন এবং আন্দোলন দেশব্যাপী ছড়িয়ে দিতে দুঃসাহসী ভ‚মিকা পালন করেন। ১৯৬৮ সালে পাকিস্তান সরকার বঙ্গবন্ধুকে প্রধান আসামি করে ৩৫ জনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা দায়ের করে। বঙ্গবন্ধুসহ সকল রাজবন্দির মুক্তির দাবিতে আন্দোলনের তীব্রতায় তৎকালীন সরকার নমনীয় হয়ে লাহোরে গোলটেবিল বৈঠকে যোগদানের লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধুকে প্যারোলে মুক্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। বঙ্গমাতার পরামর্শে বঙ্গবন্ধু প্যারোলে মুক্তির প্রস্তাব প্রত্যাখান করেন। প্যারোলের প্রস্তাবে রাজী না হওয়ার বার্তাটি বঙ্গমাতা তাঁর কন্যা হাসুকে দিয়ে কারাগারে বঙ্গবন্ধুর কাছে পাঠিয়েছিলেন। গণঅভ্যুত্থানের মুখে সরকার ১৯৬৯ সালের ২২ ফেব্রæয়ারি বঙ্গবন্ধুকে নিঃশর্ত মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। এ প্রসঙ্গে আমার একটি স্মৃতি মনে পড়ে। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় কারাবন্দী বঙ্গবন্ধুর মুক্তির দাবীতে ১৯৬৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি তারিখ সন্ধ্যায় নারায়ণগঞ্জ লঞ্চ টার্মিনাল থেকে নৌকা ও মাইক ভাড়া করে মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া যাই। যাত্রাপথে আমরা ‘জাগো জাগো বাঙালি জাগো’, ‘শেখ মুজিবের মুক্তি চাই’, ‘তোমার আমার ঠিকানা, পদ্মা, মেঘনা, যমুনা’— স্লোগান দিতে দিতে যাই। স্লোগান শুনে নদীর দু’পাড়ের জনগণ ভীড় করে এবং আমাদের স্বাগত জানায়। তখন আমি গজারিয়া থানা ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতা মহিলা সম্পাদক ছিলাম। তার পরের দিন ২১ ফেব্রুয়ারি সকাল ১১.০০ টায় ভবেরচর ঈদগাহ মাঠে আমরা সভা করি। সেখানে ব্যাপক জনসমাবেশ হয়। উক্ত সভায় গজারিয়া থানা ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হাফিজ আহমেদ, ছাত্রনেতা সালাউদ্দিন সেলিমসহ অনেকেই উপস্থিত ছিলেন। ১৯৬৯ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি বাঙালি জাতি তাদের অবিসংবাদিত নেতা শেখ মুজিবুর রহমানকে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধিতে ভূষিত করেন। বঙ্গবন্ধুর প্যারোলে মুক্তি না নেওয়ার বঙ্গমাতার সেই বিজ্ঞ সিদ্ধান্ত পরবর্তীতে স্বাধীনতার আন্দোলনকে আরো বেগবান করে তোলে।
বঙ্গবন্ধু নিজেও বলেছেন, ‘রেণু আমার পাশে না থাকলে এবং আমার সব দুঃখ-কষ্ট, অভাব-অনটন, বারবার কারাবরণ, ছেলে মেয়ে নিয়ে অনিশ্চিত জীবন যাপন হাসি মুখে মেনে নিতে না পারলে আমি আজ বঙ্গবন্ধু হতে পারতাম না’। বঙ্গবন্ধু আরো বলেছেন, ‘আমার সংগ্রামী রেণু সেই কোন ছোট বেলা থেকে আমার সঙ্গে সঙ্গে সংগ্রাম করে চলেছে। সে আজ মিশে গেছে জনতার সঙ্গে। এভাবে মিশে যাওয়ার জন্যই তো রেণু তার সারাটা জীবন উৎসর্গ করেছে। রেণু তো আজ মাত্র ৫টি সন্তানের জননী নয়, রেণু আজ বাংলাদেশের লাখ লাখ সন্তানের জননী’ (আমার রেণু, পৃষ্ঠা-১৬৮)।
বঙ্গমাতা দেশ ও জাতির প্রয়োজনে আন্দোলন ও সংগ্রামে গেরিলা হয়ে পাকিস্তানি গোয়েন্দাদের ফাঁকি দিয়ে আওয়ামী লীগের জন্য দিক-নির্দেশনাও পাঠাতেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এক ভাষণে বলেছেন, ‘বাংলাদেশ স্বাধীন হবে, বাঙালি জাতি স্বাধীন জাতি হবে, পৃথিবীতে আর কেউ না জানলেও আমার মা যে জানতেন, সেটা এখন যখন সমস্ত পেছনের জিনিসগুলো চিন্তা করি তখন মনে হয় আমার মা’তো সবই জানতেন। আমার মা ছিলেন আসল গেরিলা, তিনি এই যে নিজেকে অন্যভাবে ক্যামোফ্লেজ করে আন্দোলন গড়ে তুলেছেন। আন্দোলন যে কিভাবে করতে হয়, সেটা আমার মায়ের কাছ থেকেই শেখা, দেখা’।
১৯৭০ এর নির্বাচনে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ভোটের আগে ভাত চাই দাবী তুললে বঙ্গমাতা আওয়ামী লীগের নির্বাচনের পক্ষে অবস্থান নেন। নির্বাচন দিতে পাকিস্তান সরকারকে বাধ্য করা হয়। এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সংখ্যা গরিষ্ঠতা অর্জন করার ফলেই ১৯৭১ সালে ১০ এপ্রিল গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রথম সরকার গঠিত হয়। ১৭ এপ্রিল মুজিবনগরে শপথ গ্রহণ করে বিধায় মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে বহির্বিশ্বে এই সরকার দেশের স্বাধীনতার পক্ষে জনমত গড়ে তোলে এবং স্বাধীন বাংলাদেশের স্বীকৃতি আদায় করে।
বঙ্গবন্ধুর জীবনে তাঁর প্রভাব ছিল অপরিসীম। রাজনৈতিক সংকটে রেখেছেন অসাধারণ বিচক্ষণতার পরিচয়। ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণের বক্তব্য কি হবে, তা নিয়ে নানাজন তাঁকে লিখিত-অলিখিতভাবে নানা পরামর্শ দিতে থাকেন। এক্ষেত্রে বঙ্গমাতার পরামর্শই বঙ্গবন্ধু গ্রহণ করেছিলেন - ‘সমগ্র দেশের মানুষ তোমার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। সবার ভাগ্য আজ তোমার ওপর নির্ভর করছে। ...তোমার মনে যে কথা আসবে সে কথা বলবে। বাংলাদেশের মানুষকে নিয়ে তোমার যে স্বপ্ন সেই কথাগুলো তুমি স্পষ্ট করে বলে দিবে’। বঙ্গবন্ধু নিজের কথাটিই বললেন যা মুক্তির মঞ্চে উজ্জ্বীবিত সমগ্র বাঙালিরও মনের কথা... ‘ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোল, তোমাদের যা কিছু আছে, তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করতে হবে। এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। জয় বাংলা’। বঙ্গবন্ধুর এ ভাষণটি শ্রেষ্ঠ ভাষণ হিসাবে ২০১৭ সালের ৩০ অক্টোবর ইউনেস্কোর বিশ্ব প্রামাণ্য ঐতিহ্য দলিলে স্বীকৃতি পেয়েছে।
বিখ্যাত ‘নিউজউইক’ পত্রিকা ভাষণটিকে অনন্য কবিতা উল্লেখ করে বঙ্গবন্ধুকে বলেছেন ‘পোয়েট অব পলিটিক্স’ বা ‘রাজনীতির কবি’। রাজনীতির কবি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পাশে বঙ্গমাতা ছিলেন নির্ভীক সহযাত্রী। বঙ্গবন্ধু যথার্থই বলেছেন, ‘আমার জীবনে দু’টো বৃহৎ অবলম্বন আছে- একটি আমার আত্মবিশ্বাস আরেকটি আমার স্ত্রী’।
১৯৭১ সনে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় দুই পুত্র শেখ কামাল ও শেখ জামাল ছিলেন রণক্ষেত্রে। তিন সন্তানসহ বঙ্গমাতা পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর হাতে কারাবন্দি থেকেও পাকিস্তানে কারাবন্দি। স্বামীর জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে গভীর অনিশ্চয়তা ও শংকা সত্তে¡ও তিনি সীমাহীন ধৈর্য্য, সাহস ও বিচক্ষণতার সাথে পরিস্থিতি মোকাবেলা করেছেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তি সংগ্রামের ইতিহাসে তাঁর চিরস্মরণীয় অবদান, দেশ ও জাতির জন্য তাঁর অপরিসীম ত্যাগ, সাহসিকতা ও বিচক্ষণতার কারণে জাতি তাঁকে যথার্থই ‘বঙ্গমাতা’ উপাধিতে অভিষিক্ত করেছে। তিনি মানবসেবা ও কল্যাণে নিবেদিত ছিলেন।
জাতির পিতা, একজন রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর স্ত্রী হওয়া সত্তে¡ও তিনি অতি সাধারণ জীবনযাপন করতেন। এমনকি ফার্স্ট লেডির পদ তাঁকে আকৃষ্ট করতে পারেনি। ভোগ-বিলাসী জীবন কখনো তাঁকে ¯পর্শ করতে পারেনি। দলকে সুসংগঠিত ও শক্তিশালী করার জন্য বঙ্গবন্ধু ১৯৫৭ সালে মন্ত্রিপরিষদ থেকে পদত্যাগ করেন। বঙ্গবন্ধু ইচ্ছা করলেই পূর্ব পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হতে পারতেন। কিন্তু তা তিনি প্রত্যাখান করেন। অন্য কোন স্ত্রী হলে হয়ত স্বামীর সাথে দ্বিমত পোষণ করত। কিন্তু বঙ্গমাতা দ্বিমত পোষণ করেননি । কারণ লোভ-লালসা, বিলাসিতা, ভোগবাদিতা ও ক্ষমতা তাঁর বিবেকের কাছে ছিল অবনত। আমি ছাত্রলীগের সাংগঠনিক প্রয়োজনে প্রায়ই ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু ও কামাল ভাইয়ের (বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠ পুত্র) সাথে দেখা করতে যেতাম। রাষ্ট্রপতির স্ত্রী হওয়া সত্তে¡ও ব্যক্তি জীবনে তিনি যে কতটা সাধারণ জীবন যাপনে অভ্যস্ত ছিলেন তা আমি নিজ চোখে দেখেছি। তিনি তাঁর সন্তানদের একই আদর্শে গড়ে তোলেন। দুই ছেলের বিয়েতে দামি অলংকারের পরিবর্তে ফুলের মালা দিয়ে বরণ করে নেন। দল পরিচালনা, বঙ্গবন্ধুসহ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের নামে মামলা পরিচালনা এবং সংসার পরিচালনা করতে গিয়ে তিনি নিজের গহনা ও বাসার ফ্রিজ বিক্রি করে দিয়েছেন। স্বামীর আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে তিনি সন্তানদের আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে তোলেন এবং জাতিকে শেখ হাসিনার মতো বিশ্বমানের রাজনীতিবিদ উপহার দেন।
সামাজিক কর্মকান্ডে বেগম ফজিলাতুন নেছার ছিল অসাধারণ অবদান। বঙ্গবন্ধুর সাথে তিনি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গড়ার কাজে আত্মনিয়োগ করেন। বঙ্গবন্ধু ১৯৭২ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে নির্যাতিত ও আত্মত্যাগী নারীদের পুনর্বাসনের জন্য নারী পুনর্বাসন বোর্ড গঠন করেন। তাতে বঙ্গমাতার ছিল অসাধারণ ভ‚মিকা। ভারত, জাপান, ব্রিটেন, রাশিয়া, সুইডেন ও জার্মানসহ বিভিন্ন দেশ থেকে ডাক্তার এনে গোপনীয়তা রক্ষা করে তাদের চিকিৎসাসহ সামাজিকভাবে পুনর্বাসন করেন। এসব কাজে বঙ্গমাতার ভ‚মিকা ছিল অপরিসীম। তিনি অনেকের বিয়ের ব্যবস্থা করে তাদের সামাজিকভাবে মর্যাদাসম্পন্ন আলোকিত জীবন দান করেন। এসব বিয়েতে তিনি নিজের গহনাও খুলে দিয়েছেন।
শহীদ পরিবারের ভগ্নি এবং কন্যাদের লেখাপড়ার দায়িত্বও তিনি পালন করেন। তাদের অনেকেই ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার হয়েছেন। তিনি ছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশে নারী উন্নয়ন ও ক্ষমতায়নের প্রকৃত পথ প্রদর্শক। তিনি নারীদের অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নে দক্ষতা এবং সক্ষমতা বৃদ্ধি ও কুটির শিল্পসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। তাছাড়া মেধাবী গরীব পিতার সন্তানদের লেখাপড়া ও তাদের কন্যাদের বিয়েতে আর্থিক সহযোগিতা করেন। তিনি নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের অগ্রদূত। তিনি রাজনীতিতে নারীদের স¤পৃক্ত হতে উদ্বুদ্ধ করতেন। ১৯৬৯ সালে এ উপমহাদেশের একমাত্র রাজনৈতিক নারী সংগঠন তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান মহিলা আওয়ামী লীগ গঠনে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন করেন, যা বর্তমানে বাংলাদেশ মহিলা আওয়ামী লীগ, আওয়ামী লীগের সর্বজ্যেষ্ঠ সহযোগী সংগঠন।
আত্মীয়স্বজন ও সংগঠনের কর্মীদের প্রতি তাঁর খুব দরদ ছিল বিধায় গণভবনে না থেকে ধানমন্ডির বত্রিশ নম্বরের বাড়িতেই থাকতেন। বহু রাজনৈতিক কর্মী তাঁর স্নেহ ও মমতা লাভ করেছেন। আমিও তাঁর স্নেহ ও মমতা থেকে বঞ্চিত হইনি। এরকম বিষয়ে বঙ্গমাতার সাথে আমার চিরস্মরণীয় স্মৃতি রয়েছে। ১৯৭৪ সনে আমি ইডেন কলেজ ছাত্রী সংসদের জিএস, ছাত্রলীগের সভাপতি এবং ঢাকা মহানগর ছাত্রলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি ছিলাম। সে সময়ে ঢাকা মহানগর ছাত্রলীগের সম্মেলনে কমিটি ঘোষণায় ঐক্যমত হতে পারে নাই। ফলে মন খারাপ করে আমরা কয়েকজন টিএসসির মাঠে বসেছিলাম। বঙ্গমাতা হয়ত আমার মনের অবস্থা বুঝতে পেরেছিলেন। তিনি আমাকে ধানমন্ডির ৩২নং বাসায় যাওয়ার জন্য লোক পাঠিয়েছেন। তখন ঢাকা মহানগরীর ছাত্রলীগের মহিলা সংগঠনের দায়িত্ব ছিল আমার উপর। রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিণী আমার মতো একজন ক্ষুদ্র কর্মীকে যেতে বলেছেন! ভয়ে ভয়ে আমরা ৫/৬ জন কর্মী বাসায় গেলাম। দরজা খুলতেই দেখি বঙ্গমাতাকে। আমি পায়ে হাত দিয়ে সালাম করে ভয়ে ভয়ে বললাম আপনি আমাকে আসতে বলেছেন।
বঙ্গমাতা বললেন ‘হ্যাঁ, তোমরাতো এখনো খাওনি, মুখটাতো শুকিয়ে গেছে। আগে হাত মুখ ধুয়ে খেয়ে নাও, পরে কথা হবে’। আমাদেরকে খাবার টেবিলে বসালেন। তিনি নিজ হাতে খাবার পরিবেশন করলেন। আমি ভয়মুক্ত হলাম। আমরা অবাক হয়ে তাকিয়ে দেখলাম। একজন জাতির পিতা ও প্রধানমন্ত্রীর স্ত্রী অথচ কতটা নিরহংকার, আন্তরিক, অমায়িক, ভদ্র, নম্র, অতিথি পরায়ণ ও কর্মী বান্ধব যা শুধু মনের গভীরতা দিয়েই অনুভব করা যায়, কিন্তু ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। এ থেকে প্রতীয়মান হয় যে, তিনি ছিলেন কর্মীবান্ধব, নারীবান্ধব এবং একজন উদার মনের মমতাময়ী মা। সেদিনটি ছিল আমার জীবনে একটি অবিস্মরণীয় দিন।
আগস্ট মাস শোকের মাস। স্বজন হারানোর মাস। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টে মানব সভ্যতার ইতিহাসে ঘৃণ্য ও নৃশংসতম হত্যাকান্ডে নিহত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিবকে গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি। শহীদ ক্যাপ্টেন শেখ কামাল, লেফটেন্যান্ট শেখ জামাল ও শেখ রাসেলসহ সকল শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করছি ও তাঁদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করার সময় ছোট শিশু রাসেলসহ পরিবারের সদস্যদের সাথে বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিবকেও নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হয়। বঙ্গমাতাকে খুনিরা বলেছিল, ‘আপনি চলেন’। তিনি বললেন, ‘কোথাওতো যাবনা। ওনাকে খুন করেছ, আমাকেও শেষ করে দাও। আমি এখান থেকে এক পাও নড়বো না।’ তিনি খুনিদের কাছে জীবন ভিক্ষা চাননি। বীরের মত বুক পেতে দিয়েছিলেন বুলেটের সামনে। বঙ্গবন্ধুর আজীবন সুখে-দুঃখে, সংকটে, সংগ্রামের সহযাত্রী মৃত্যুকালেও তাঁর সহযাত্রী হয়ে রইলেন। এ বছরের প্রতিপাদ্য- “বঙ্গমাতা, সংকটে সংগ্রামে নির্ভীক সহযাত্রী”, যা যথার্থ।
বিজয়ের আনন্দ ক্ষণস্থায়ী কিন্তু পরাজয়ের গ্লানি চিরস্থায়ী। তাই পরাজয়ের গ্লানি মোচন করার উদ্দেশ্যেই স্বাধীনতা-বিরোধীদের ষড়যন্ত্রে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। বিশ্বে অনেক দেশে রাষ্ট্রপ্রধান, সরকার প্রধান ও রাজনৈতিক নেতাদের হত্যা করা হয়েছে কিন্তু কোথাও সপরিবারে হত্যা করা হয়নি। বঙ্গবন্ধু পরিবারের কোন সদস্যের নেতৃত্বে স্বাধীনতার মূল্যবোধ, অসাম্প্রদায়িক ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা যাতে ঘুরে দাঁড়াতে না পারে সেজন্যই সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়। রাখে আল্লাহ মারে কে? জাতির ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য বিদেশে থাকার কারণে সেদিন বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা প্রাণে বেঁচে যান। বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জাতি ফিরে পায় মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, স্বাধীনতার মূল্যবোধ ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ।
রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর স্ত্রী বঙ্গমাতা নির্লোভ ও সৎ ছিলেন বিধায় তাঁর কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও বিশ্বে সততার শীর্ষে এবং পৃথিবীর সেরা প্রধানমন্ত্রী। সমাসীন হয়েছেন বিশ্ব নেতৃত্বের আসনে। বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব যে সততা, মহানুভবতা, উদারতার আদর্শ ও দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন তা যুগে যুগে বাঙ্গালী নারীদের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে। তাঁর সংগ্রামী জীবন, বাঙ্গালীর স্বাধিকার আন্দোলন, মহান মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা সংগ্রামের অনেক অজানা অধ্যায় সম্পর্কে নতুন প্রজন্ম জানতে পারবে। এই মহীয়সী নারীর জীবনচর্চার মাধ্যমে নতুন প্রজন্ম দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হবে। বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছার জীবনাদর্শের অনুপ্রেরণায় তাঁর কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের নারীরা এগিয়ে যাচ্ছে। নারীর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ বিশ্বে রোল মডেল সৃষ্টি করেছে।
বঙ্গবন্ধুকে বাদ দিয়ে যেমন মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাস লেখা যায় না, তেমনই বঙ্গমাতাকে বাদ দিয়ে মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশের ইতিহাস অসম্পূর্ণ থেকে যায়। বঙ্গমাতার আত্মত্যাগ, সাহসিকতা, দেশপ্রেম ও মহান মুক্তিযুদ্ধে অবদান স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছরে মূল্যায়ন করা হয়নি। বাংলাদেশ মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং পরবর্তীতে আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক থাকাকালীন আমিই রাজনৈতিকভাবে ২০০৩ সাল থেকে প্রতিবছর বঙ্গমাতার জন্মবার্ষিকী আনুষ্ঠানিকভাবে পালন এবং জাতীয় দিবস ঘোষণা ও পদক প্রদানের প্রস্তাব করে আসছি । আমি মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে ২০২০ সালে জাতির পিতার জন্মশতবর্ষ ও বঙ্গমাতার ৯০তম জন্মবার্ষিকীতে ৮ই আগস্ট বঙ্গমাতার জন্মবার্ষিকীটি ‘জাতীয় দিবস’ ঘোষণার প্রস্তাব এবং ‘বঙ্গমাতা পদক’ প্রদানের প্রস্তাব করেছিলাম। ২০ সেপ্টেম্বর ২০২০ তারিখে বর্তমান সরকার ৮ আগস্ট বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব এঁর জন্মদিবসকে ‘ক’ শ্রেণির জাতীয় দিবস ঘোষণা করেছে। এছাড়া বঙ্গমাতার অবদান চিরস্মরণীয় করার লক্ষ্যে বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারীর অবদানের স্বীকৃতি প্রদানের জন্য বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব পদক নারীদের জন্য ‘ক’ শ্রেণিভুক্ত সর্বোচ্চ জাতীয় পদক প্রদানের ঘোষণা করেছে। এজন্য আমি মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের কাছে শোকরিয়া আদায় করছি। আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রিপরিষদের সদস্যবৃন্দসহ সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। বঙ্গমাতার গৌরবময় কর্মজীবন পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করা এবং গবেষণার মাধ্যমে তাঁর বর্ণাঢ্য জীবনের অজানা দিকগুলো নতুন প্রজন্মের সামনে তুলে ধরার প্রস্তাব করছি। আমি একই সাথে দাবি করছি অবিলম্বে দন্ডপ্রাপ্ত ১৫ আগস্টের পলাতক খুনীদের দেশে ফিরিয়ে এনে ফাঁসির রায় কার্যকর করা হোক।
মহান স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী ও মুজিববর্ষ উদ্যাপনের মাহেন্দ্রক্ষণে বহুমুখী প্রতিভায় অনন্য মহীয়সী নারী বঙ্গমাতার অবদান, জীবনাদর্শ ও কর্ম সম্পর্কে বর্তমান প্রজন্ম আরো বেশী জানতে পারবে এবং দেশপ্রেমে জাগ্রত হয়ে মানুষের কল্যাণে আত্মনিয়োগ করবে।
লেখক: প্রতিমন্ত্রী, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং গবেষক ও রাজনীতিবিদ।