ভারতকে ‘দুর্বল খেলোয়াড়’ হিসেবে দেখছে যুক্তরাষ্ট্র

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

জুন ১১, ২০২৩, ০৬:৩২ এএম

ভারতকে ‘দুর্বল খেলোয়াড়’ হিসেবে দেখছে যুক্তরাষ্ট্র

জাতীয় নির্বাচনের আগে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসা নীতি গ্রহণ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি জে ব্লিংকেন এই ভিসা নীতি ঘোষণা করেছে। নতুন নীতির অধীনে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের যুক্তরাষ্ট্রে ঢোকা বন্ধ হয়ে যাবে।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন ২৪ মে বাংলাদেশে নির্বাচনব্যবস্থায় অনিয়মের সঙ্গে জড়িতদের ভিসা দেওয়ার ওপর কড়াকড়ি আরোপের ঘোষণা দেন। যুক্তরাষ্ট্র বলছে, তাদের কাছে যদি মনে হয়, সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনে কেউ বাধা সৃষ্টি করেছেন, তাহলে তাঁর ভিসা দেওয়া হবে না। নতুন ভিসা নীতি ঘোষণার বিষয়টি ৩ মে বাংলাদেশ সরকারকে অবহিত করা হয়েছে বলেও জানায় মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর।

২০০৯ সাল থেকে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ বলেছে যে নতুন ভিসা নীতি বিএনপিকে লক্ষ্য করে। তবে সাম্প্রতিক একটি ঘোষণায় দলটি ইঙ্গিত করে আওয়ামী লীগ জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় বসতে ইচ্ছুক। অনেক বিশ্লেষকের মতে, ভিসা নীতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্য একটি ব্যক্তিগত ধাক্কা ছিল, যিনি মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য অভিযুক্ত র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) বিরুদ্ধে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন।

মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র্যাবের সাবেক ও সেই সময় কর্মরত সাত কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র। অন্যদিকে, চলতি বছরে যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিতীয় দফার গণতন্ত্র সম্মেলনেও বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি।

নতুন নীতিতে নির্বাচনপ্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িতদের বিরুদ্ধে বিধিনিষেধের কথা বলা হয়েছে। গত ২৫ মে ছয়জন কংগ্রেসম্যান মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে একটি চিঠিও লিখেছেন। সেই চিঠিতে তাঁরা বাংলাদেশের সামরিক ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা যাতে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে অংশগ্রহণ করতে না পারেন, সে জন্য নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে মার্কিন প্রেসিডেন্টকে অনুরোধ জানিয়েছেন।

এই সবের মধ্যে উল্লেখযোগ্য বিষয় হল ভারত সরকারের নীরবতা। তার ওপর এমন একটা সময়ে এই নীতি ঘোষিত হলো, যখন যুক্তরাষ্ট্র সফরের জন্য ভারতের প্রধানমন্ত্রী জোর কদমে তোড়জোড় শুরু করে দিয়েছেন। এ সময় কোনোরকম প্রতিক্রিয়ারও তাই প্রশ্ন উঠছে না। 

তবে যেহেতু বাংলাদেশ প্রতিবেশী ভারতের ঘনিষ্ঠতম নির্ভরযোগ্য বন্ধু, তাই এই ভিসা নীতির ভালো–মন্দ ও প্রতিক্রিয়া ভারতকে ভাবাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের সিদ্ধান্ত ঘিরে গড়ে ওঠা বিতর্ক ও সেই নিরিখে প্রতিবেশী বন্ধুদেশের সম্ভাব্য রাজনৈতিক গতিপ্রকৃতির ওপর ভারত তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রেখেছে।

আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ বেশ চাপে পড়েছে। সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে নানা মহল থেকে দাবি জানানো হচ্ছে।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল ৫০টি নির্বাচনী এলাকার মধ্যে ৪৭টিতে সমস্যা উল্লেখ করা সত্ত্বেও ভারত (চীনের সাথে) গত নির্বাচনের ফলাফলে হাসিনাকে অভিনন্দন জানাতে ছুটে এসেছিল।

নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের আপত্তি ছিল, কিন্তু এবার মনে হচ্ছে তারা আরও সক্রিয়ভাবে এগিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

ভিসা নীতি নিয়ে ভারতকে কোনোভাবে জানানো বা পরামর্শ করা হয়েছে কিনা তা জানা নেই। যদি তা না হয়, তাহলে এর অর্থ হলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভারতকে দক্ষিণ এশিয়ায় একটি আনুষঙ্গিক শক্তি হিসাবে দেখে এবং অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনকে এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রেও বাধা হতে পারে। যদি ভারত সরকারকে অবহিত করা হয় এবং পরামর্শ দেওয়া হয় এবং র‌্যাবের উপর নিষেধাজ্ঞা এবং নতুন ভিসা নীতি উভয় বিষয়েই মুখ থুবড়ে থাকে, তবে এটি প্রস্তাব করে যে সরকার নিজেকে তার নিজের প্রতিবেশীতে একজন ‘অভিনেতা’ হিসাবে বিবেচনা করে।

সবশেষে এটাই বলা যায়, গত মাসের শেষে মার্কিন রাষ্ট্রপতি জো বাইডেন যখন নরেন্দ্র মোদিকে রাষ্ট্রীয় সফরের জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছেন তখন "বিশ্বের প্রাচীনতম গণতন্ত্র" এবং "বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্র"র  মধ্যে সমান অংশীদারিত্ব নেই।

লেখক: ওমর আহমেদ, ব্যবস্থাপনা সম্পাদক (দক্ষিণ এশিয়া), দ্য থার্ড পোল।
(লেখাটি দ্য ওয়্যারে প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল)

Link copied!