নদীমাতৃক বাংলাদেশের কৃষিভিত্তিক অর্থনীতির জন্য বর্ষাকাল যেন এক আশীর্বাদ। বর্ষার বারিধারায় বহমান পলিতে উর্বর হয়ে ওঠা জমিনেই ফলে সারা বছরের ফসল। অর্ধশতাব্দী আগের কথা বলছি। গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারে সময়টা ১৯৭১, বাঙালির ইতিহাসে শ্রেষ্ঠ সময়।
পাকিস্তানি জান্তাদের গুলির শব্দে ঢাকা পড়েছিল কোকিলের কুহুতান, রাজপথে বাঙালির বুকের তাজা রক্তের রঙে যেন ম্লান হয়ে গিয়েছিল কৃষ্ণচূড়ার লাল। কিন্তু 'জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু' স্লোগানের বীজমন্ত্র জপে তাপদহে গ্রীষ্মের উত্তপ্ত আবেগ নিয়ে ঘাতক জান্তাদের সপাটে জবাব দিতে শুরু করে বাংলার দামাল সন্তানরা। এতে নতুন মাত্রা এনে দেয় বর্ষা।
আষাঢ়-শ্রাবণের অবিরত বৃষ্টিধারায় হতচকিত ও দিশেহারা হয়ে পড়ে আক্রমণকারী পাকিস্তানি ঘাতকরা। সেই সুযোগে গাছে গাছে আসা নতুন কিশলয়ের মতোই নবোদ্যমে মাঠ-ঘাট-প্রান্তরে ছড়িয়ে পড়েন বীর মুক্তিযোদ্ধারা। বিশ্বের বুকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশের জন্য বাংলাদেশ তখন প্রস্তুত। ঠিক এরকম একটি সময়ে মাতৃত্বের স্বাদ পেলেন বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠকন্যা শেখ হাসিনা।
১৯৭১ সালের ২৭ জুলাই। বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের কারাগারে। শেখ কামাল বাড়ি ছেড়েছেন যুদ্ধ করবেন বলে। বাঙালির মুক্তির সংগ্রামে নেতৃত্ব দেওয়া শেখ পরিবারের বাকিরা সদস্যরা পাকিস্তানি বাহিনীর নজরবন্দি, গৃহবন্দি। ঠিক এই সময়ে জন্ম নেন সজীব ওয়াজেদ জয়। যেন তিনি স্রষ্টার পক্ষ থেকে উপহার পাওয়া এক অনন্য জয়বার্তার প্রতীক ও আগমনী সংবাদ হিসেবে আসেন শেখ পরিবারে।
একাত্তরের ২৩ মার্চে যখন প্রথম ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরের বাড়িটিসহ দেশের সবখানে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা ওড়ানো হয়, তখনই বঙ্গবন্ধু তার প্রিয় কন্যা শেখ হাসিনা বলেছিলেন- নাতি হলে নাম ‘জয়’ রাখতে। কেননা, সে জন্ম নেবে এক স্বাধীন বাংলাদেশে। জাতির পিতার কথা অক্ষরে অক্ষরে মনে রেখেছিলেন শেখ হাসিনা। সন্তানের নাম রাখার সময় মা ফজিলাতুন নেছা মুজিবের দেওয়া ‘সজীব’ এবং বাবার দেওয়া ‘জয়’ নামটি মিলিয়ে নাম রেখেছিলেন তিনি।
বিশিষ্ট পরমাণু বিজ্ঞানী ও সাবেক ডাকসু নেতা ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়ার এই সন্তান উজ্জ্বল করেছেন বিজ্ঞানী বাবার নামও। তারই নেতৃত্বে ডিজিটাল রাষ্ট্রে রূপান্তরিত হয়েছে আমাদের প্রাণের বাংলাদেশ। তার নানা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাত ধরে যেমন হাজার বছরের পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্ত হয়েছে বাঙালি জাতি, তেমনি তার মা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুশাসনের কারণে গড়ে উঠেছে ক্ষুধামুক্ত সোনার বাংলাদেশ। সেই ধারাবাহিকতায় আধুনিক বাংলাদেশ গড়ে তুলতে অব্যাহত প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন জয়।
আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের স্লোগানের অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিল যে শব্দটি, তা হলো 'জয়'। তেমনি স্বাধীনতার অর্ধশতাব্দী অতিক্রম করে এসে আমরা দেখতে পাচ্ছি যে- আধুনিক বাংলাদেশ গঠনের পরিকল্পনার সঙ্গে যে নামটি অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িয়ে গেছে, সেই নামটিও 'জয়'। কারণ, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রাষ্ট্রদর্শন বাস্তবায়নের মাধ্যমে যেভাবে দেশের উন্নয়ন ও গণমানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করতে সক্ষম হয়েছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা, সেইসব দূরদর্শী ও সাহসী সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে সজীব ওয়াজেদ জয় রয়েছেন সামনের সারির সহযোগী ও যোদ্ধার ভূমিকায়।
বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র ও বঙ্গবন্ধুকন্যার পুত্র হিসেবে দেশ ও মানুষের প্রতি ভালোবাসা থেকেই এই দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। তার দিকনির্দেশনায় যে ডিজিটাইলেশনের শুরু তাতে কেবল কৃষিভিত্তিক অর্থনীতির নির্ভরতা কাটিয়ে তথ্যপ্রযুক্তির সাথে যুক্ত নতুন নতুন খাতেও বাংলাদেশ এগিয়ে চলেছে সদর্পে। চ্যালেঞ্জ ছোঁড়ার জন্য প্রস্তুত হচ্ছে– যেকোনও উন্নত দেশকেও। মানুষের অর্থনীতির অন্যতম প্রধান খাত হতে যাচ্ছে সজীব ওয়াজেদ জয়ের কারণে সৃষ্ট এই নতুন খাতটি।
যোগাযোগের ক্ষেত্রেও তথ্যপ্রযুক্তি যে বিপ্লব এনেছে তা আর ব্যাখ্যা করার অবকাশ রাখে না। কোভিড-১৯ সংক্রমণে সারা দুনিয়া থমকে গিয়েছিল। অথচ বাংলাদেশের মানুষ যে বিপুল গতিতে তাদের কাজ চালিয়ে যেতে পেরেছেন, তার অন্যতম কারণ শেখ হাসিনার দূরদর্শী সিদ্ধান্তের পাশাপাশি এদেশের মানুষের তথ্য-প্রযুক্তিতে ‘এক্সেস’ বা সক্ষমতা তৈরি হওয়াটাও।
মহামারীর সময়েও ইন্টারনেটের সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে দেশব্যাপী সচেতনতা কর্মসূচি চালিয়েছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে সরকারের প্রতিটি দায়িত্বশীল ব্যক্তি। এই ইন্টারনেটকে কেন্দ্র করেই দেশে তৈরি হয়েছে লাখ লাখ মানুষের নতুন কর্মসংস্থান। মানুষকে স্বাবলম্বী করতে নতুন নতুন সুযোগ সৃষ্টির জন্য সুপরিকল্পিতভাবে পর্দার অন্তরালে কাজ করেছেন প্রধানমন্ত্রীর অবৈতনিক উপদেষ্টা হিসেবে কর্মরত সজীব ওয়াজেদ জয়।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি শিক্ষিত, মার্জিত, স্বাবলম্বী বাঙালি জাতি গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখেছিলেন। স্বাধীনতার পর এজন্য দ্রুততম সময়ের মধ্যে তিনি দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নেন। কিন্তু ১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট, একদল ঘাতকের হাতে নির্মমভাবে বঙ্গবন্ধু সপরিবারের নিহত হওয়ায় সোনার বাংলা গঠনের স্বপ্ন ভেঙে যায়। এরপর দীর্ঘ দুই দশক অপশাসনের কালো অন্ধকারে ঢেকে থাকে বাংলাদেশ। দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতিগ্রস্ত হয় বাঙালি জাতি। এমনকি বেঁচে থাকা কঠিন হয়ে ওঠে বঙ্গবন্ধুর জীবিত দুই কন্যা ও তাদের পরিবারের সদস্যদের। হন্তারকদের হুংকারের মুখে ইউরোপ-ভারত-যুক্তরাষ্ট্র ঘুরে ঘুরে বেড়ে ওঠেন বঙ্গবন্ধুর বড় নাতি সজীব ওয়াজেদ জয়।
জীবনের এতো প্রতিকূলতার মধ্যেও নিজেকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলেছেন তিনি। বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গবন্ধুকন্যার আদর্শে জনগণের সেবক হিসেবে বেড়ে উঠেছেন তিনি। প্রায় একক প্রচেষ্টা ও শিক্ষাগত যোগ্যতায় যুক্তরাষ্ট্রের বুকে একজন উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। সেই অভিজ্ঞতা থেকেই দেশকে ডিজিটাল রাষ্ট্রে রূপান্তরিত করার সুপরামর্শ দিয়েছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে।
সবার জানা উচিত যে, আওয়ামী লীগ সরকারবিরোধী দলে থাকা অবস্থাতেই ২০০৭ সালে একেবারে নিজের চিন্তার স্বকীয়তা ও দূরর্শিতার জন্য ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামে ‘গ্লোবাল লিডার অব দ্য ওয়ার্ল্ড’ হিসেবে নির্বাচিত হন সজীব ওয়াজেদ জয়।
১৯৭৫-পরবর্তী নির্বাসিত জীবনে ভারত থেকে লেখাপড়া করে স্নাতক অর্জন করেন তিনি। এরপর উচ্চশিক্ষার প্রতি আগ্রহ থেকে, যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাস অ্যাট আর্লিংটন থেকে কম্পিউটার সায়েন্সে আবারও স্নাতক ডিগ্রি নেন। এখানেই না থেমে হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি থেকে জনপ্রশাসনে স্নাতকোত্তর ডিগ্রিও সম্পন্ন করেন। ফলে তথ্য-প্রযুক্তি জ্ঞানের পাশাপাশি রাজনীতিতেও তার রয়েছে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা। ২০১০ সালে দাদার বাড়ির এলাকা রংপুরের পীরগঞ্জ আওয়ামী লীগের সদস্য হিসেবে সরাসরি রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হন। সেই থেকেই তথ্যপ্রযুক্তি ও রাজনীতি- দুটোকেই গণমুখী ও কল্যাণকামী করে তোলার আপ্রাণ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। আধুনিক বাংলাদেশের তারুণ্যের জন্য উন্নয়নমুখী রাজনীতির নতুন ধারা চালু হয়েছে তার হাত ধরেই।
জঙ্গিবাদ, উগ্রবাদ, প্রতিহিংসার পথ পরিহার করে ভবিষ্যতের বাংলাদেশ শান্তি-সমৃদ্ধি ও সম্ভাবনা অর্জনের পথে হেঁটে চলবে- এই স্বপ্ন বুকে নিয়ে নিঃস্বার্থভাবে দেশের মানুষের জন্য কাজ করে চলেছেন যিনি, সেই
স্বপ্নপথিকের নাম সজীব ওয়াজেদ জয়।
মুক্তিযুদ্ধের বারুদমাখা বাতাসে যার জন্ম ও বেড়ে ওঠা, ঠিক অর্ধশতাব্দী পর বাংলাদেশের উন্নয়নের পালে তিনিই দিচ্ছেন নতুন হাওয়া। তাকে আইকন মেনেই নতুন প্রজন্মের প্রতিটি সন্তান গড়ে উঠুক সক্ষম ব্যক্তি হিসেবে। এতে নিজ পরিবার ও সর্বোপরি বাংলাদেশ উপকৃত হবে।
লেখক: সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ও সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন (সিআরআই)-এর সমন্বয়ক
(লেখাটি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমে প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল)