ফেব্রুয়ারি ৩, ২০২৫, ১২:৪৪ পিএম
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির উদ্যোগে চলতি ফেব্রুয়ারি মাসের দ্বিতীয়ার্ধে নতুন রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশ ঘটতে যাচ্ছে। অন্তর্বর্তী সরকারের একজন তরুণ উপদেষ্টা পদত্যাগ করে নতুন এই দলের দায়িত্ব নিতে পারেন। খবর প্রথম আলো।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা বলছেন, নতুন দলটি আদর্শগতভাবে মধ্যপন্থী ধারার হবে। দলের নাম কী হবে, সে বিষয়ে বেশ কিছু প্রস্তাব তারা পেয়েছেন। তবে এখনো কোনো নাম চূড়ান্ত হয়নি। দলের প্রতীক কী হবে, সেটি নিয়েও আলোচনা হচ্ছে।
জাতীয় নাগরিক কমিটির একাধিক সূত্র বলছে, প্রাথমিক আলোচনা অনুযায়ী অন্তর্বর্তী সরকারে শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি হিসেবে যে তিনজন উপদেষ্টা (মাহফুজ আলম, নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদ) আছেন, তাদের মধ্যে একজন পদত্যাগ করে দলের নেতৃত্ব নেবেন। অন্য দুজন আরও পরে সুবিধাজনক সময়ে পদত্যাগ করে দলে যোগ দিতে পারেন। ওই দুজনের একজন আগামী জুন মাসে উপদেষ্টার পদ ছেড়ে দলে যোগ দিতে পারেন।
জানতে চাইলে জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্যসচিব আখতার হোসেন গতকাল রোববার সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, ফেব্রুয়ারির শেষাংশে তাদের রাজনৈতিক দলের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসবে। দলটি ডান ও বাম ধারার বাইরে জাতীয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দিয়ে মধ্যপন্থী দল হিসেবে রাজনীতি করবে। গণ–অভ্যুত্থানের পক্ষে ছিলেন; কিন্তু কোনো দলের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত নন—এমন ব্যক্তিদের তারা নতুন দলে নিয়ে আসতে চান।
দলের নাম, নেতৃত্ব, আত্মপ্রকাশের নির্দিষ্ট তারিখ বা কোথায় ও কীভাবে আত্মপ্রকাশের ঘোষণা দেওয়া হবে, সেগুলো নিয়ে এখনো আলোচনা চলছে বলে জানান আখতার হোসেন। তিনি বলেন, ‘শীর্ষ নেতৃত্ব নিয়ে আমরা জনমত যাচাই করার চেষ্টা করছি। অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে থাকা ছাত্র উপদেষ্টাদের নাম এ ক্ষেত্রে আলোচনায় রয়েছে। তবে এখনো চূড়ান্ত হয়নি। আবার তারা পদত্যাগ করলে সরকারে শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিত্বটা কীভাবে থাকবে, সেই আলোচনাও হচ্ছে।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একটি সূত্র বলছে, নতুন রাজনৈতিক দলের গুরুত্বপূর্ণ একটি পদে আসতে পারেন একজন উপদেষ্টার ভাই। তিনি এখন নাগরিক কমিটির সদস্য।
গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। অভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দেয় শিক্ষার্থীদের প্ল্যাটফর্ম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। অন্যদিকে অভ্যুত্থানের শক্তিকে সংহত করে দেশ পুনর্গঠনের লক্ষ্যে গত সেপ্টেম্বরে যাত্রা শুরু করে জাতীয় নাগরিক কমিটি। তারা প্রথম কমিটি করে গত বছরের ৮ নভেম্বর। এর পর থেকে ১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ২৫৭টি থানা ও উপজেলায় প্রতিনিধি কমিটি করেছে জাতীয় নাগরিক কমিটি। সব মিলিয়ে সারা দেশে তাদের প্রতিনিধির সংখ্যা ৩৪ হাজার ছাড়িয়ে গেছে।
অন্যদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন প্রথম কমিটি করে গত ২ নভেম্বর। এর পর থেকে ১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দেশের ৩০টি জেলা, ৫টি মহানগর, ৮টি থানা, ২টি বিশ্ববিদ্যালয়, ৩টি কলেজ ও একটি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে আহ্বায়ক কমিটি গঠন করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এখন পর্যন্ত বিভিন্ন কমিটিতে তাদের সদস্য রয়েছে প্রায় সাড়ে আট হাজার।
তবে শিক্ষার্থীদের নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের পরও জাতীয় নাগরিক কমিটি একটি ‘সিভিল পলিটিক্যাল প্ল্যাটফর্ম’ হিসেবে বহাল থাকবে। একইভাবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনেরও কার্যক্রম চলবে।