গত ২০ ডিসেম্বর সরকারের বিরুদ্ধে অসহযোগ আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করে নেতাকর্মীদের আদালতে হাজিরা না-দেয়া কিংবা সরকারকে সকল প্রকার ট্যাক্স, খাজনা, ইউটিলিটি বিল এবং অন্যান্য প্রদেয় স্থগিত করার নির্দেশনা দেয় বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান বিরোধী দল বিএনপি।
বিএনপির অঙ্গসংগঠন মহিলা দলের একজন কর্মী আম্বিয়া খাতুন (ছদ্মনাম)। দলটির চলমান অসহযোগ আন্দোলনের লিফলেট, পোস্টার বিতরণ করলেও নিজে ঠিকই পরিশোধ করেছেন বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানির বিল। বিলগুলো স্মার্টকার্ডে পরিশোধ করতে হয় বলে তাঁর হাতে আর কোনো বিকল্প নেই বলে জানান রাজধানীর নাখালপাড়ার এই বাসিন্দা।
শুধু বিএনপির এই নেত্রী নয় বরং অন্যান্য সংগঠনের সকলেই নিয়মিত বিল পরিশোধ করে আসছেন। ফলে টানা ৫ দিন ধরে চলমান বিএনপির অসহযোগ আন্দোলনের গ্রহণযোগ্যতা খোদ দলটির নেতাকর্মীদের মাঝেই নেই।
বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ে একাধিক নেতা জানিয়েছেন, সাধারণত যাদের সাথে আলোচনা করে সরকার বিরোধী আন্দোলনের কর্মসূচি চূড়ান্ত করা হয়, অসহযোগ কর্মসূচির ক্ষেত্রে তাদের সাথে আলোচনা করা হয়নি। বরং একক সিদ্ধান্তেই লন্ডন থেকে এই আন্দোলনের ঘোষণা করেছেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। যার ফলে বিএনপির সাথে জোটে নেই কিন্তু সমমনা দলগুলো এই কর্মসূচির সাথে সামঞ্জস্য রেখে জনসংযোগ করতে পারেনি।
আর বর্তমান সময়ে বিল পরিশোধ না করার মতো পরিস্থিতিও নেই। ফলে না চাইলেও বাধ্য হয়ে সবাইকে গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির বিল পরিশোধ করতে হচ্ছে। তাই সরাসরি অসহযোগ আন্দোলনের মত কর্মসূচি ঘোষণাটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় হয়নি বলে জানায় দলটির নেতাকর্মীরা।
চলমান আন্দোলনকে শান্তিপূর্ণ পথে রেখেই সরকারকে ধাক্কা দিতে এই কর্মসূচির পরিকল্পনা করেছিল বিএনপি। এজন্য কূটনৈতিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক-এ তিন দিক থেকে নীরবে সরকারকে কাবু করার কৌশল নিয়েছে দলটি। এর অংশ হিসেবে অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেওয়া হয়েছে। যেখানে ভোট বর্জনসহ পাঁচটি দফা দিয়ে তা পালনের আহ্বান জানানো হয়।
সরকারকে আর কোনো ধরনের সহযোগিতা না করার জন্য প্রশাসনের সর্বস্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং গণতন্ত্রকামী দেশপ্রেমিক জনগণের প্রতি আহ্বান জানান রুহুল কবির রিজভী।
এই আন্দোলন প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক কায়সার কামাল বলছেন, অসহযোগ আন্দোলনের কর্মসূচি যথাসময়েই এসেছে। জনগণ সময় নিয়ে এই ধরনের আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে থাকে। তাই কর্মসূচি সঠিক পদ্ধতিতেই হচ্ছে বলে মনে করেন তারা।
বিল সংগ্রহে নেই আন্দোলনের প্রভাব
বিএনপির অসহযোগ আন্দোলনের অংশ হিসেবে সর্বস্তরের মানুষের কাছে বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানির বিল না দেওয়ার যে আহ্বান জানিয়েছিল তার প্রভাব নেই সংস্থাগুলোতে।
তিতাস গ্যাসের মেট্রো ঢাকা রাজস্ব বিভাগ-৩ এর উপ-মহাব্যবস্থাপক এ কে এম মাহবুব আলী বলেন, বিএনপির আহ্বানে কেউ সাড়া দেয়নি। তিতাস গ্যাসের মেট্রো ঢাকা রাজস্ব বিভাগ-৩ এর অধীনে প্রতিমাসে ২৪ কোটি টাকা আসে। আবারও একই পরিমাণ টাকা এসেছে,তবে মাঝে মাঝে কম বেশি টাকা আসে। তাতে বিএনপির কোনো প্রভাব পড়েনি।
ঢাকা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন তালুকদার এজিএম (এমএস) বলেন, আমরা বিদ্যুৎ বিল পাচ্ছি, আমাদের বিদ্যুৎ বিল দেওয়া হয় বকেয়ার মাধ্যমে, আমাদের বকেয়া রয়েছে যেমন ১.০৪ % তার মানে আমরা ঠিক মতো পাচ্ছি, এই মাসে ১১৮ কোটি টাকা আমরা পেয়েছি।
ওয়াসা রাজস্ব বিভাগ-৪ এর মিজানুর রহমান বলেন, পানির বিল আমাদের বাকি নেই, সবাই ঠিক মতোই দিচ্ছে, আমরা বিল দিয়ে আসি, তারা পানির বিল ব্যাংকে জমা দিয়ে আসে। বিএনপির অসহযোগ আন্দোলনের কারণে আমাদের ব্যাংকে টাকা জমার বিষয়ে কোনো সমস্যা হয়নি।
এই বিষয়ে বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য সাইরুল কবির খান বলেন , ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সিদ্ধান্ত অনুসারে সবাইকে আহ্বান জানানো হয়েছে, আমরা তো কোনো বিল দিচ্ছি না, যে মানবে কে মানবে না তা সবার নিজের সিদ্ধান্ত। এটায় দলের কিছু যায় আসে না।
মহিলা দলের নেত্রী আম্বিয়া খাতুন (ছদ্মনাম) বলেন, বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানির বিল না দিলে আমরা এই সুবিধা পাব না , বিল তো দিতেই হলে, ১ মাস ব্যাংকে টাকা না হয় রাখলাম না, ট্যাক্স দিলাম না, তবে বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানির সুবিধা না পেলে তো বসবাস করা সম্ভব না, তাই এমন কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত না যেটা করা সম্ভব না।
আমিন বাজার বাসিন্দা কামরুন নাহার বলেন, বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানির বিল এমনিতেই আমরা তিন মাস পরে একসাথে দেই, বিএনপি বলেছে তাই দিব না এমনটা না। আর বিরোধীদলের এই দাবিটা গ্রহণযোগ্য না, টাকা পরিশোধ না করলে সব লাইন কেটে দিবে সরকার, তাতে দিন শেষে আমাদেরই ক্ষতি।
জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের মহাসচিব ও বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, ‘জনগণের কাছে সহায়তা চাওয়া হয়েছে, এখন তারা সাহায্য করবে নাকি করবে না সম্পূর্ণ তাদের ব্যাপার, আমি জানি চাইলেও অনেক সময় সব কিন্তু করা সম্ভব না, তবে যতটুকু সম্ভব সরকারকে অসহযোগিতা করা প্রয়োজন। আওয়ামী লীগ নিজের ইচ্ছে মতো সবকিছু করছে, জনগণ তাদের সবকিছু মেনে নিলে দিন শেষে তাদেরই ক্ষতি হবে।’