রমজানের আগে নাহলে এপ্রিলের মধ্যে নির্বাচন হওয়া উচিত: জামায়াতের আমির

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

জুন ৩, ২০২৫, ০৩:৪২ পিএম

রমজানের আগে নাহলে এপ্রিলের মধ্যে নির্বাচন হওয়া উচিত: জামায়াতের আমির

ছবি: সংগৃহীত

বিচার, সুষ্ঠু ভোটার তালিকা, জুলাই সনদ ও ঘোষণাসহ পাঁচটি ন্যূনতম সংস্কার করে নির্বাচন চান জানিয়ে জামায়তে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, “প্রধান উপদেষ্টা একটি সময়সীমা দিয়েছেন, জামায়াতও মতামত দিয়েছে। আগামী রমজানের আগে নির্বাচন হতে পারে। কোনো কারণে যদি নির্বাচন না হয়, তাহলে এপ্রিলের মধ্যে নির্বাচন হওয়া উচিত। সময় বেঁধে দিতে চাই না।”

মঙ্গলবার, ০৩ জুন সকালে রাজধানীর বনানীতে হোটেল শেরাটনে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন। এ সময় নির্বাচন কমিশনকে চেয়ারের মর্যাদা রক্ষার আহবানও জানান জামায়াতের আমির।

সংবাদ সম্মেলনে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, সংসদের আগে স্থানীয় নির্বাচন হতে হবে। নির্বাচন কমিশনকে সক্ষমতার প্রমাণ করতে হবে। ফ্যাসিস্টের পতন হলেও ফ্যাসিবাদের কালো ছায়া এখনও রয়ে গেছে। ফ্যাসিজমের বিলোপে প্রয়োজন অবাধ সুষ্ঠু গ্রহণযোগ্য নির্বাচন। যার মাধ্যমে একটি ন্যায্য সরকার গঠিত হবে।

ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন হলে সব আসনে লড়াইয়ের মত সক্ষমতা জামায়াতের আছে কিনা প্রশ্নে শফিকুর রহমান বলেন, আজকেও যদি সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ থাকে, জামায়াত ভোটে অংশ নিতে প্রস্তুত।

নির্বাচন কীভাবে হবে- প্রশ্ন রেখে শফিকুর রহমান বলেন, জামায়াতের আমির গোলাম আযম কেয়ারটেকার সরকারের রূপরেখা দিয়েছিলেন। এর ভিত্তিতে একানব্বইয়ের নির্বাচন হয়। যা বাংলাদেশের সবচেয়ে সুষ্ঠু নির্বাচন। আওয়ামী লীগকে আজীবন ক্ষমতায় রাখতে আদালতের মাধ্যমে কেয়ারটেকার সরকার ব্যবস্থা খতম করা হয়েছিল। নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড ধ্বংস করতে কেয়ারটেকার ব্যবস্থা খতম করা হয়েছিল। এর পরিণতি বাংলাদেশ ১৫ বছর ভোগ করেছে।

জামায়াত আমির বলেন, আওয়ামী লীগ ২০১৮ সালে সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। অনেক কূটনৈতিক বন্ধু বলেছিলেন, তাদের পরীক্ষা করো- সুষ্ঠু নির্বাচন দেয় কিনা। জামায়াতের ২৩ প্রার্থীর ১২ জন কারাগারে ছিলেন। তারপরও আগের রাতে ভোট দিয়ে ফেলেছিল আওয়ামী লীগ। ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ ঘোষণা দিয়েছিল ২০৪১ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকবে। রাজনৈতিক বন্ধুদের অনেকে আশা হারিয়ে ফেলেছিলেন। 

শফিকুর রহমান বলেন, অতীতে অনেক সরকার আন্দোলনে বিদায় নিয়েছে, কিন্তু আওয়ামী লীগের মত কেউ পালায়নি। কী পরিমাণ অপরাধ তারা করেছে এ থেকে আন্দাজ করা যায়। কিন্তু ল্যাংড়া ভূতের মতো ওপাড় থেকে উসকানি দেয়।

দেশে যেমন শিক্ষা দরকার ছিল, তা না থাকায় বেকারত্ব বেড়েছে বলে মন্তব্য করেন জামায়াত আমির। তিনি বলেন, এটা আর শুনতেই চাই না- রাজনৈতিক দৃশ্যপট বদলের পর ধর্মীয় পরিচয়ের কারণে কারো ওপর হামলা হবে। 

বাংলাদেশে সমস্যা হলো, জিতলে বলে নির্বাচন সুষ্ঠু, হারলে বলি দুষ্ট। ন্যায়বিচারের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার সম্পন্ন করে প্রধান উপদেষ্টার ঘোষিত সময়ের মধ্যে সুষ্ঠু নির্বাচন করতে হবে। যেখানের জনগণ ভোট দিতে পারবে। কেউ ভোট নিয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং করার দুঃসাহস দেখাবে না।

প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিতের দাবি জানিয়ে জামায়াত আমির বলেছেন, তাদের অবশ্যই তালিকাভুক্ত করতে হবে। এটা খুব কঠিন কাজ নয়। শুধু সদিচ্ছা প্রয়োজন। নির্বাচন কমিশন বলেছে এটা করবে, কিন্তু সদিচ্ছা দেখতে পাচ্ছি না। এক কোটি ১০ লাখ প্রবাসী বাদ দিয়ে বাংলাদেশকে এগিয়ে নেওয়া যাবে না। শুধু ভোটাধিকার নয়, রেমিট্যান্সযোদ্ধা হিসেবে প্রবাসীদের আরও যা পাওনা, তা দিতে হবে। এখানে আপসের জায়গা নেই। 

বাংলাদেশের ওপর কারো আধিপত্য মেনে নেওয়া হবে না- জামায়াতের এ অবস্থান জানিয়ে শফিকুর রহমান বলেছেন, প্রতিবেশীদের সঙ্গে সহজ সম্পর্ক রক্ষার পক্ষে জামায়াত। বাংলাদেশকে ন্যায্য সম্মান দিতে হবে।

জামায়াত আমির বলেন, আশা করছি দ্রুতই নিবন্ধন এবং প্রতীক ফিরে পাবো। ভোজসভায় জামায়াতের প্রতীক খেয়ে ফেলা হয়েছিল। এখনকার নির্বাচন কমিশন যেন চেয়ারের সম্মান করে জামায়াতকে প্রতীক ফিরিয়ে দেয়। ব্যতিক্রম হলে জামায়াত চুপ থাকবে না।

নির্বাচন কমিশন নিয়ে ইতোমধ্যে প্রশ্ন তুলেছে এনসিপি। বিদ্যমান কমিশনের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব কিনা- প্রশ্নে শফিকুর রহমান বলেন, জামায়াত আরও দেখতে চায়। কমিশনের কাজেই প্রমাণ হবে তাদের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে কিনা। এক্ষেত্রে সুপারিশ হলো, জাতীয় নির্বাচন ভাগ্য নির্ধারণী। ইউনিয়ন পরিষদ ছাড়া স্থানীয় সরকারে আর কোথাও জনপ্রতিনিধি নেই। খুবই জনভোগান্তি হচ্ছে। তাই আগে স্থানীয় নির্বাচনের দাবি জামায়াতের। স্থানীয় নির্বাচনের মাধ্যমে কমিশনের সক্ষমতা এবং সদিচ্ছার প্রমাণ পাওয়া যাবে।

শফিকুর রহমান বলেন, জামায়াত নেতারা ট্রাইব্যুনালে হত্যার শিকার হলেও, আওয়ামী লীগ ন্যায়বিচার পাক। ন্যায়বিচার হলে তাদের সাজা হবে। 

গুমের শিকার এবং আওয়ামী লীগ আমলে বরখাস্ত সাবেক সেনা অফিসাররা সংবাদ সম্মেলনে এসেছিলেন। বরখাস্ত কর্নেল হাসিন প্রশ্ন করেন, সশস্ত্র বাহিনীর সংস্কার, জাতীয় নিরাপত্তা নীতিমালা প্রণয়নে জামায়াতের অবস্থান কী? জবাবে শফিকুর রহমান বলেন, শুধু সেনাবাহিনী কেন আরও জায়গায় বহু সংস্কার দরকার। সবচেয়ে জরুরি রাজনৈতিক দলের সংস্কার। জামায়াত ন্যায্য সংস্কারের পক্ষে রয়েছে।

এক ব্যবসায়ী নেতা প্রশ্ন করেন- জামায়াতের অর্থনৈতিক রোডম্যাপ আছে কিনা। উত্তরে শফিকুর রহমান বলেন, এখন সুষ্ঠু অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা নেই। ব্যাংক লুট করে বিদেশে টাকা পাচারের কারণে দেশের আজ এই অবস্থা। জামায়াত এই জায়গায় হাত দেবে।

সংবাদ সম্মেলনে জামায়াতের নায়েবে আমির মজিবুর রহমান, ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম মাছুমসহ জ্যেষ্ঠ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

Link copied!